প্রতীকী ছবি।
করোনা অতিমারির মধ্যেই চোখ রাঙাতে শুরু করেছিল ডেঙ্গি। মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগে স্বাস্থ্য দফতরও। বৃষ্টির মরসুম শুরু হতেই ক্রমশ থাবা চওড়া করতে শুরু করেছে সে। রবিবার রাত পর্যন্ত রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে মশাবাহিত ওই রোগে আক্রান্ত ভর্তির সংখ্যা ২৫১।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ডেঙ্গির প্রকোপের নিরিখে সবচেয়ে বেশির তালিকায় প্রথমেই রয়েছে কলকাতা। তার কাছাকাছি রয়েছে হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং জলপাইগুড়ি। পাশাপাশি, গোটা রাজ্য জুড়েই কম-বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি উদ্বেগের। এ দিন স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা ছিল ২৪৩। রবিবার কয়েক জনের ছুটি হলেও, নতুন করে আরও কয়েক জন ভর্তি হয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, রবিবার রাতের পরিসংখ্যানে মোট ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা শনিবারের থেকে ৮ জন বেড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, পরিস্থিতি ক্রমশ যে জটিল হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই রোগীদের মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে প্রথমে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। ওই জেলায় এই মুহূর্তে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬০ জন। প্রসঙ্গত, আগে বহু সময়ে এই জেলার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অতিমাির পরিস্থিতিতেও অনেক সময়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে কলকাতাকে ছাপিয়ে প্রথম স্থানে উঠে এসেছিল উত্তর ২৪ পরগনা।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা যাচ্ছে, উত্তর ২৪ পরগনার পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৪৪ জন, জলপাইগুড়িতে ৪২, হাওড়ায় ২৩ এবং মুর্শিদাবাদে ২০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার তালিকায় রয়েছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী এ দিন জানান, শনিবার ১১১ জন এবং রবিবার ৯১ জন নতুন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ দিন যত জন ভর্তি হয়েছেন, তাতে সংখ্যা বেশির তালিকার প্রথমে রয়েছে মুর্শিদাবাদ এবং জলপাইগুড়ি। দুই জেলাতেই ১৬ জন করে আক্রান্ত। এর পরে রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনায় ১৫ জন, হুগলিতে ১২ জন এবং হাওড়ায় ৯ জন।
আরও জানা যাচ্ছে, গত শনিবার রাজ্যে ২৭৫৯ জনের নমুনা অ্যালাইজ়া পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়েছিল। তার মধ্যে সরকারি পরীক্ষাগারে ২১৯২টি এবং বেসরকারি পরীক্ষাগারে ৫৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। ওই এক দিনে ২৯২টি নমুনা পজ়িটিভ এসেছে।
অন্য দিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলির তরফে জানা গিয়েছে, সেখানেও প্রতিদিন কয়েক জন ডেঙ্গিতে সংক্রমিত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। যাঁদের একাংশের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক থাকছে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির চিকিৎসার আদর্শ চিকিৎসাবিধি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই সরকারি চিকিৎসকদের অবগত করা হয়েছে। প্রতিটি ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লেটলেট মজুত রাখার বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
পাশাপাশি, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন পুরসভার সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। এলাকায় যাতে কোনও ভাবেই জল জমে না থাকে তার জন্য সচেতনতার প্রচারে জোর দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনেও জোর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।