কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। — ফাইল চিত্র।
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আছিয়া বিবির ঘটনাটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে মাঝেমধ্যেই এমন অভিযোগ ওঠে। তাই প্রশ্ন উঠছে, বার বার ঠেকেও কি শিক্ষা নিচ্ছে না স্বাস্থ্য দফতর?
শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শৌচাগারের জানলার ফাঁক গলে রোগীর কার্নিসে নামা ও তার পরে নীচে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে। যার ফলে বার বার প্রশ্নের মুখে পড়ে রোগীদের নিরাপত্তা। পরিজনদের অনেকেরই বক্তব্য, হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি তাঁর সুরক্ষার দায়ও কিন্তু কর্তৃপক্ষের। সেখানে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে কেন? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার অবশ্য যুক্তি, ‘‘সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ মারাত্মক বেশি। তাই প্রত্যেকের উপরে আলাদা করে নজরদারি সম্ভব হয় না। আর, শৌচাগারে বা ওয়ার্ডে সিসি ক্যামেরা থাকে না।’’
কিন্তু শৌচাগারের জানলার ফাঁক গলে রোগীর বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা যখন বার বার ঘটছে, তখন কি কোনও বন্দোবস্ত করতে পারে না স্বাস্থ্য দফতর? আছিয়া বিবির ঘটনার পরে সোমবার ন্যাশনাল মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর আত্মীয়ের প্রশ্ন, ‘‘জানলা দিয়ে এক জন মানুষের গলে বেরোনোর মতো পরিসর থাকবে কেন? এটা বন্ধই বা করা হয় না কেন?’’ প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা নিয়েও। অনেক সময়ে এমনও অভিযোগ ওঠে, রোগী ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছেন। শহরের প্রায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের পরিজনদের অভিযোগ, ‘‘নানা ছুতোয় নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশ প্রায় জোর করে আমাদের থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু রোগীর নিরাপত্তার দিকে তাঁদের খেয়াল থাকে না। এমনটা কেন হবে?’’
ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সুপার অর্ঘ্য রায় বলেন, ‘‘সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারও গাফিলতি থাকলে রেয়াত করা হবে না।’’ কিন্তু আছিয়ার রহস্য-মৃত্যু এক গুচ্ছ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এই হাসপাতালকে। রবিবার পৌনে ২টো নাগাদ ওই তরুণীর বোন ওয়ার্ডে ফিরে দিদিকে দেখতে না পেয়ে সকলকে জানিয়েছিলেন। তার পরেও এক প্রসূতিকে খুঁজে পেতে প্রায় ২০ ঘণ্টা কেন লাগল? এ দিন বিল্ডিংয়ের পিছনে খুঁজতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীরা দেহটি দেখতে পান। অন্যান্য রোগীর পরিজনদের প্রশ্ন, তা হলে রবিবার বিষয়টি জানার পরে সারা দিনে এক বারও কেন সেখানে খোঁজা হল না?
এ দিন তদন্তে নেমে পুলিশ ওয়ার্ডের বাইরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে আছিয়ার গতিবিধি জানতে পারে। রবিবার তিনি নিখোঁজ হওয়ার পরেই সেটি দেখা হলে তখনই গতিবিধি জানা যেত। শৌচাগারে গিয়েও খোঁজা যেত বলে দাবি অন্যান্য রোগীর আত্মীয়দের।
সমস্ত হাসপাতালের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ তুলছেন রোগীর পরিজনেরা। তা হল, শৌচাগারে গিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ রোগী না ফিরলেও তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। নির্দিষ্ট সময়ের পরে ওয়ার্ডে কর্তব্যরত কর্মীদের তা দেখা প্রয়োজন বলেও দাবি তাঁদের। শহরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর পরিজনের কথায়, ‘‘জানলা দিয়ে বেরিয়ে না গেলেও, কেউ তো শৌচাগারে অসুস্থ হয়েও পড়ে থাকতে পারেন। সেটাও তৎক্ষণাৎ দেখা প্রয়োজন।’’ কিন্তু বাস্তবে এমন নজরদারি নেই কোনও সরকারি হাসপাতালেই।
যদিও আছিয়ার ঘটনার পরে স্বাস্থ্য দফতর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সকলেই তদন্ত ও কড়া ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু ছবিটা বদলায় না। পাঁচ দিনের এক সদ্যোজাতের মায়ের এমন মৃত্যুর পরেও কি রোগী-সুরক্ষায় জোর দেবে না স্বাস্থ্য দফতর? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।