দমদম ক্যান্টনমেন্টের বাজারে এখনও অবাধে চলছে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
চলতি মাস থেকেই ৭৫ মাইক্রনের চেয়ে কম পুরু প্লাস্টিক ব্যাগের উপরে দেশ জুড়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে অতীতেও বহু বার প্লাস্টিক নিয়ে বিভিন্ন রকম নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও বাস্তবে দেখা
গিয়েছে, সেই প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের কারণেই বার বার রুদ্ধ হয়ে যায় শহরের নিকাশি ব্যবস্থা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, নিয়ম থাকলেও তা মানতে বাধ্য করানোর ক্ষেত্রে
প্রশাসন আদৌ কতটা সক্রিয়?
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর জানাচ্ছে, প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতে পুরসভাগুলির ভূমিকার উপরেও এ বার নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পুরসভাগুলি প্লাস্টিক ব্যবহারে রাশ টানতে নিজেদের এলাকায় কী কী পদক্ষেপ করছে, সে দিকে নজর রাখতে নোডাল অফিসারদের নিয়োগ করা হবে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, এক-এক জন নোডাল অফিসারের অধীনে কয়েকটি করে পুরসভা থাকবে। পুরসভাগুলি প্লাস্টিক নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কী কী কর্মসূচি নিচ্ছে, প্লাস্টিক অপসারণের কাজ কী ভাবে করছে— এ ধরনের নানা বিষয়ের উপরে চলবে নজরদারি। পুরসভাগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখবেন ওই নোডাল অফিসারেরা। চন্দ্রিমার কথায়, ‘‘এ বার বৃষ্টিতে যে ভাবে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন জায়গা ভেসে গিয়েছে, তার অন্যতম কারণ প্লাস্টিকের জিনিসে নিকাশি নালার মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া। ফলে বিভিন্ন এলাকার অলিগলি সহজেই ভেসে গিয়েছে। তাই পুরসভাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্লাস্টিক আটকাতে কোমর বেঁধে নামতে হবে। পুরসভাগুলি কী ভাবে কাজ করছে, সে দিকে নজর রাখবেন নোডাল অফিসারেরা।’’
উত্তর শহরতলিতে নিকাশির অন্যতম পথ বাগজোলা খাল। জমা প্লাস্টিকের কারণে ওই খালটি বহু জায়গায় মজে যাওয়ায় তার জল বহনের ক্ষমতা এখন প্রায় তলানিতে। যে কারণে এ বারের ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছে সংলগ্ন কামারহাটি, বরাহনগর, দমদম, বাগুইআটি, নিউ টাউনের মতো বিস্তীর্ণ এলাকা। বাগজোলা খালে প্লাস্টিক-সহ যাবতীয় দূষণের পিছনে খালের ধারের বেআইনি বসতিই দায়ী বলে দাবি সেচ দফতরের। সপ্তাহখানেক আগে সল্টলেকের ৩ নম্বর সেক্টরের এক জায়গায় গালিপিট পরিষ্কার করতে গিয়ে ১২ কিলোগ্রাম প্লাস্টিকের জিনিস তুলে এনেছে বিধাননগর পুরসভা।
পুরমন্ত্রী চন্দ্রিমা জানান, ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা সবে জারি হয়েছে। পুজোর পরে ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে আরও তৎপর হবে প্রশাসন। তিনি বলেন, ‘‘সরকার প্লাস্টিক ব্যবহার আটকানোর কাজ শক্ত হাতেই পরিচালনা করবে। প্রথমে জনসচেতনতা তৈরির কাজ করা হবে। তাতে কাজ না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
তবে চলতি সপ্তাহেই শহরের অনেক বাজারে প্লাস্টিক ব্যাগের দেখা মিলেছে। শ্যামবাজারের এক আনাজ বিক্রেতার কথায়, ‘‘ব্যবসায়ীরা কাপড়ের ব্যাগ কেনেন। কিন্তু ক্রেতারা সেই কাপড়ের ব্যাগের দাম দিতে চান না। তা হলে আমাদেরই বা পোষাবে কী ভাবে বলুন?’’