পুরনো সেই: ক্যাম্পাস খোলার সঙ্গেই ফিরল চায়ের দোকানের আড্ডা। মঙ্গলবার, বিধাননগর কলেজের সামনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
সল্টলেকের বিদ্যাসাগর আইল্যান্ডের ফুটপাতে, বিধাননগর কলেজের পাশের একচিলতে চায়ের দোকানে প্রায় দু’বছর ব্যস্ততার লেশমাত্র ছিল না। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলেও ক্রেতার দেখা পেতেন না দত্তাবাদের বাসিন্দা বাসন্তী দাস। অথচ করোনার আগে সেই দোকানে বসে চা ফোটাতে, ডিম-টোস্ট ভাজতে বা ঘুগনি গরম করতে করতেই কেটে যেত সারা দিন। মঙ্গলবার ফের একটা ব্যস্ততার দিন কাটালেন তিনি।
এ দিন স্কুল-কলেজ খুলতেই সরগরম হয়ে উঠল বিধাননগরের ওই কলেজপাড়া। বেলা বাড়তেই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কমবেশি ভিড় জমে গেল বাসন্তীর ওই চায়ের দোকানে। শ্রেয়া বর্ধন, শেখ আব্দুল জেনানির মতো প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের কেটলি হাতে হাসিমুখে চা দিতে দেখা গেল তাঁকে।
বাসন্তী জানাচ্ছেন, করোনা পর্বের আগে দোকানের বিক্রিবাটা অনেকাংশেই নির্ভর করত কলেজপড়ুয়াদের উপরে। শীতকালে কলেজের ফেস্টের সময়ে কাপের পর কাপ চায়ের বরাত আসত ছাত্র সংগঠনের ইউনিয়ন রুম থেকে। গত প্রায় দু’বছর কলেজ বন্ধ থাকায় ব্যবসা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। এ দিন হাসিমুখে বাসন্তী বললেন, ‘‘কলেজ খুলবে জানতাম। তা-ও ক’জন আসবেন, সে কথা ভেবে ঘুগনি বেশি পরিমাণে তৈরি করিনি। কিন্তু শুধু চা আর ডিম পড়ে রয়েছে। অথচ প্রায় দু’বছর দিনের বেলায় চুপচাপ দোকানে বসেই কেটে যেত।’’
স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন শহরের স্কুল-কলেজের আশপাশে থাকা এমন অনেক দোকানি বা খুচরো ব্যবসায়ীরা। সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজের উল্টো দিকেই চা-টোস্টের দোকান মহম্মদ ইব্রাহিমের। এ দিন সকাল থেকে তাঁর দোকানেও ব্যস্ততা বেড়েছে। ইব্রাহিমের কথায়, ‘‘সবাই সুস্থ থাক। আবার ব্যবসা ভাল হবে।’’ ঠিক তার পাশেই ফোটোকপির দোকানে পড়ুয়াদের উপচে পড়া ভিড়। হিন্দু স্কুলের সামনে দাঁড়ানো জনৈক চাট বিক্রেতার কথায়, ‘‘আমি তো ব্যবসা গুটিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। আজ স্কুল খুলবে জানতে পেরে অনেক দিন পরে দোকান খুলেছি। স্কুলের বাকি সব ক্লাস চালু হলে আবার ব্যবসা ভাল হবে।’’ হেয়ার স্কুলের সামনে বই বিক্রেতা শেখ শাহিন আহমেদ বলেন, ‘‘পাঠ্য বইয়ের বিক্রি অনেকটাই কম হচ্ছিল। আজ পড়ুয়ারা বইয়ের খোঁজ করেছে। আশা করি, সবাই সুস্থ থাকবে। তবেই ব্যবসা ভাল হবে।’’
তবে প্রথম দিন হাসি ফোটাতে পারেনি সবার মুখে। শ্যামবাজারের মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের সামনে ভেলপুরির গাড়ি নিয়ে এ দিন বসেছিলেন রামকুমার সাউ। কিন্তু আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় বেলার দিকে গাড়ির মুখ ঘোরালেন বাগবাজার উইমেন্স কলেজের দিকে।