—প্রতীকী ছবি।
বদলির সরকারি নির্দেশিকা মেনে কাজে যোগ দিয়েছেন নতুন অধ্যক্ষ। কিন্তু তিন দিন কেটে গেলেও পড়ুয়াদের একাংশের বাধায় তিনি নিজের অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি। অগত্যা প্রতিদিন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বসছেন সুপারের কার্যালয়ে! শহরের পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজের অন্যতম আর জি করকে ঘিরে দিনের পর দিন এমনই নানা রকম টালবাহানা চলছে। যার জেরে ব্যাহত হচ্ছে কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্মও।
যদিও অধিকাংশ পড়ুয়া-চিকিৎসকই চাইছেন, কলেজে শান্তির পরিবেশ ফিরে আসুক। কিন্তু তা কবে হবে কিংবা কার হাত ধরে হবে, সে বিষয়ে সদুত্তর নেই কোনও মহলেই। স্বাস্থ্য ভবনও ‘অধ্যক্ষকে বদলি করা হয়েছে’ বলেই দায় সারছে। এরই মধ্যে সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে পুনর্বহালের জন্য নির্দেশিকা জারি করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়ে চলেছেন একদল পড়ুয়া-চিকিৎসক। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন কয়েক জন প্রাক্তনী ও হাউসস্টাফও। বুধবার তাঁদের মধ্যে থেকে ১৩ জনের বিরুদ্ধে র্যাগিং এবং মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ এনে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই কলেজের মানিকতলা হস্টেলের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের একাংশ। একই রকম ভাবে, সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ এক মহিলা পড়ুয়া-চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও র্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলেছেন মহিলা হস্টেলের কয়েক জন পড়ুয়া।
অভিযোগকারীদের বক্তব্য, কেন সন্দীপকে সমর্থন করা হচ্ছে না, তার জন্যই চলছে অত্যাচার। বৃহস্পতিবার সন্দীপ-পন্থী পড়ুয়ারা আবার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বর্তমান অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পড়ুয়া-চিকিৎসক, ইন্টার্ন ও হাউসস্টাফ মিলিয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, ওই ১০ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।
প্রাক্তন ও বর্তমান অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ পড়ুয়া-চিকিৎসকদের এ হেন অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগে কার্যত জেরবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ। এ দিন মানস-ঘনিষ্ঠ পড়ুয়াদের তরফে চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র জুনিথ সিংহ এবং ইন্টার্ন অনুভব মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রাক্তন অধ্যক্ষ নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে কলেজকে নানা ভাবে ভাগ করে রেখেছিলেন। আমরা চাই, সকলে মিলেমিশে কাজ করে কলেজে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভাল ভাবে কলেজ পরিচালনার জন্য নতুন অধ্যক্ষকে সহযোগিতা করতে চাই।’’
পাল্টা সন্দীপ-পন্থীদের তরফে চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র নির্জন বাগচী ও হাউসস্টাফ সৌরভ মাজি বলেন, ‘‘আমরা কখনওই সরকারি নির্দেশিকার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু সন্দীপ স্যরের প্রতি আমাদের আলাদা আবেগ রয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী দেশে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইছি। তাঁর কাছে আবেদন করব বিষয়টি বিবেচনা করতে।’’ দু’পক্ষই অবশ্য পরস্পরের বিরুদ্ধে তোলা র্যাগিং-সহ অন্য অভিযোগ অস্বীকার করছে। প্রসঙ্গত, আর জি করে সন্দীপ অধ্যক্ষ হয়ে আসার পরে ২০২১ সালের পুজোর আগে শুরু হয় ছাত্র-বিক্ষোভ। দীর্ঘ দিন তা চলে। পরবর্তী সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত হলেও, আন্দোলনে শামিল পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন আটকে রাখা, তাঁদের ফেল করিয়ে দেওয়ার মতো কাজ সন্দীপ করেছেন বলে অভিযোগ জুনিথ-অনুভবদের। সব মিলিয়ে আর জি করের টালমাটাল পরিস্থিতি কবে কাটবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।