Blood Donation

বম্বে গ্রুপের রক্ত নিতে দাতার বাড়িতে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা 

কোভিডের মধ্যে বিরল গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগীর পরিজনেদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২০ ০২:১৬
Share:

বাড়িতেই রক্তদান করছেন স্বপন মান্না। নিজস্ব চিত্র

রোগীকে বাঁচাতে প্রয়োজন ছিল বিরল গ্রুপের রক্তের। তা সংগ্রহে দাতার বাড়িতে পৌঁছে গেলেন এসএসকেএমের ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা। বম্বে গ্রুপের রোগীকে রক্ত দিতে আপত্তি ছিল না দমদম ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দার। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে তিনি হাসপাতালে আসতে চাননি। এ দিকে, কোভিডের মধ্যে বিরল গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগীর পরিজনেদের। এই পরিস্থিতিতে করোনা-ভীতিকে দূরে সরিয়ে রোগী পরিষেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করল এসএসকেএম।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নোদাখালি থানা এলাকার বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী মন্টু নস্করের (৪২) কারখানা রয়েছে আমতলায়। গত ২৮ জুলাই কারখানার দেওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়ে মন্টুর বাঁ পায়ের উপরে। আমতলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে স্থানান্তরিত করা হয়। আপাতত উডবার্ন ব্লকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। রোগীর বন্ধু বিশ্বজিৎ পাল জানান, দুর্ঘটনার জেরে মন্টুর বাঁ পায়ের পাতার কিছুটা অংশ বাদ দিতে হয়েছে। কোভিডের ভয়ে সরকারি হাসপাতালে রোগীর দেখাশোনার জন্য আত্মীয়েরা কেউই সে ভাবে আসেননি। একই কারণে বম্বে গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে গিয়েও তাঁরা হয়রান হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্বজিৎ। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসকেরা চার ইউনিট রক্ত আনার জন্য বলেছিলেন। করোনার জন্য এমনি গ্রুপের রক্ত পেতেই সমস্যা হচ্ছে। বম্বে গ্রুপের রক্ত পাওয়া তো আরও কঠিন।’’

দুর্ঘটনাগ্রস্ত যুবক যে বম্বে গ্রুপের অধিকারী, তা এসএসকেএম ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট প্রবীর হালদার জানিয়ে দেওয়ার পরে হাসপাতাল থেকে রোগীর পরিজনেদের একটি তালিকা দেওয়া হয়। তাতে বম্বে গ্রুপের রক্তের কয়েক জন দাতার ফোন নম্বর ছিল। সেই নম্বরগুলিতে ফোন করা হলেও সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই পিছিয়ে যান। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, উত্তর কলকাতার বাসিন্দা মৃদুল দলুই রক্ত দিতে রাজি হওয়ায় কিছুটা সুরাহা হয়। কিন্তু মন্টুকে বাঁচাতে আরও রক্তের প্রয়োজন ছিল। এই পরিস্থিতিতে দমদম ক্যান্টনমেন্টের স্বপন মান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আপত্তি করেননি। তবে হাসপাতালে এসে রক্ত দেওয়ার প্রশ্নে তাঁর সায় ছিল না। সে কথা জানার পরে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তাদের কাছে বিশ্বজিৎ আর্জি জানান, যে কোনও উপায়ে যেন তাঁর বন্ধুকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। তাতে সাড়া দিয়ে দাতার বাড়ি থেকে রক্ত সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

শনিবার এসএসকেএমের ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার সংযুক্তা ভড় এবং মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সুব্রত পাল দমদম ক্যান্টনমেন্টে স্বপনবাবুর বাড়িতে যান। রক্ত সংগ্রহ করে হাসপাতালে ফিরে রোগীর পরিজনের হাতে তা তুলে দেওয়া হয়। সোমবার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা এতটা না করলে বন্ধুকে বাঁচাতে পারতাম না। এই গ্রুপের রক্ত তো পাওয়াই যাচ্ছে না।’’ মন্টুর চিকিৎসায় আরও দু’ইউনিট রক্তের দরকার। তা জোগাড় করাই এখন প্রধান চিন্তা তাঁর পরিজনেদের।

গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে সংযুক্তা বলেন, ‘‘দাতার বাড়ি গিয়ে রক্ত সংগ্রহে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা আমাদের মধ্যেও কাজ করেছিল। কিন্তু বম্বে গ্রুপের রক্ত পাওয়া সহজ নয়। তাই রোগীর কথা ভেবে আপত্তি করিনি।’’ এসএসকেএমের ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রতীক দে বলেন, ‘‘কোভিডের কারণে হাসপাতালে আসতে রাজি ছিলেন না রক্তদাতা। বাড়ি থেকে রক্ত সংগ্রহের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে গাড়ির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement