এখনও চালু হয়নি এসএসকেএমের এই কম্প্যাক্টর মেশিন। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার রাখতে তৈরি হয়েছে কম্প্যাক্টর মেশিনের ঘর। অথচ দিনের পর দিন চলে গেলেও সেই মেশিন চালু করার অনুমতিটুকু মেলেনি পুলিশের কাছ থেকে। হাসপাতাল চত্বর থেকে বর্জ্য অপসারণে তাই দীর্ঘ অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না এসএসকেএমে।
সরকারি হাসপাতালগুলিতে সংক্রমণ রোধে বর্জ্য অপসারণ প্রয়োজনীয়। সেই লক্ষ্যে কার্ডিয়োভাস্কুলার সায়েন্সেস ভবনের পিছনে কলকাতা পুরসভার সাহায্যে দু’টি কম্প্যাক্টর মেশিনের ঘর তৈরি হয়েছে এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু এসএসকেএম সূত্রের খবর, পরিকাঠামো তৈরি হলেও পুলিশের অনুমতি না মেলায় এখনও পর্যন্ত চালু করা যায়নি ওই যন্ত্র দু’টি। এসএসকেএমের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এক দিন পুলিশ জানাল, সন্ধ্যার মধ্যে অনুমতি পেয়ে যাচ্ছি। সে জন্য কম্প্যাক্টর মেশিনে যাতে পুরসভার গাড়ি যাতে ঢুকতে পারে সে জন্য পাঁচিলও ভেঙে ফেলা হয়।’’ কিন্তু তার পরে কেটে গিয়েছে বেশ কিছুটা সময়। কিন্তু এখনও সেই অনুমতিপত্র হাতে পাননি এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ।
এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্র এ বিষয়ে বলেন, ‘‘এখন খুব কম জায়গায় পরিকাঠামো তৈরি করে দূষণ এবং সংক্রমণ রোধের কথা বলা হচ্ছে। তার জন্য আদর্শ হচ্ছে কম্প্যাক্টর মেশিন। এই কমপ্যাক্টর মেশিনগুলি চালু হলে এখনকার মতো বর্জ্য আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবে না। সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পুলিশ বলছে অনুমতি দিয়ে দেবে। কিন্তু এখনও পাইনি। অনুমতি না পেলে কমপ্যাক্টর দু’টি চালুও করা যাচ্ছে না।’’
কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ২০১৬ সালের কঠিন বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী খোলা ভ্যাট ধীরে ধীরে সরিয়ে নিতে হবে। তাই শুকনো এবং ভিজে বর্জ্যের জন্য এসএসকেএমে দু’টি পৃথক কম্প্যাক্টর মেশিন বসানো হয়। কিন্তু হাসপাতালের আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, অনুমতির গেরোয় আটকে যাওয়ায় হাসপাতাল চত্বরের খোলা ভ্যাট থেকে সংক্রমণ রোধ করার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনো যাচ্ছে না। হাসপাতালে দমকলের কার্যালয় থেকে রোনাল্ট রস ভবনের দিকে যাওয়ার রাস্তাতেই রয়েছে ওই খোলা ভ্যাট। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, টোটোয় করে হাসপাতালের বর্জ্য সেই ভ্যাটে জমা করছেন সাফাই কর্মীরা। রোগীদের ফেলে দেওয়া খাবারের উচ্ছিষ্ট থেকে ডায়াপার, চিকিৎসা সরঞ্জামে ব্যবহৃত প্লাস্টিক, গ্লাভস, রক্তমাখা গজ, তুলো— রয়েছে সবই। তার উপরে ভিড় জমিয়েছে কাকের দল।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, মেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি হাসপাতালগুলির ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তার পরে এ নিয়ে এক দফা নির্দেশিকাও জারি হয়। এর পরেও অনুমতির ফাঁসে আটকে গিয়ে কম্প্যাক্টর মেশিন চালু না হওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ।
অনুমতি পেতে সমস্যা কোথায়? স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী বাবলু সিংহ বলেন, ‘‘যতদূর জানি, ওখানে কম্প্যাক্টর হলে যানজট হতে পারে। তাই অনুমতি পেতে দেরি হচ্ছে।’’ এ বিষয়ে ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, “কম্প্যাক্টর যন্ত্র দু’টির ঢোকা-বেরনোর রাস্তা একেবারে এ জে সি বসু রোডের উপরে রয়েছে। সেখান দিয়ে জঞ্জাল সরানোর লরি যাতায়াত করলে শুধু রাস্তার ওই অংশেই নয়, পুরো এ জে সি বসু রোড এবং মা উড়ালপুলে যান চলাচল ব্যাহত হবে।” তিনি আরও জানান, সাধারণত এ ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা স্তরেই ট্র্যাফিকের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। সব হয়ে যাওয়ার পরে নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট চেয়ে ট্র্যাফিক পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়েছে।