প্রতিস্থাপনের পরে মায়ের কোলে আফাজ়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
অন্য শিশুরা যখন খেলাধুলো করত, তখন মায়ের কোলে উঠে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকত ছোট্ট আফাজ়। কিছু বললেও বুঝতে পারত না। কয়েকটি শব্দ আর ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করত মনের ভাব। একমাত্র ছেলের এমন অবস্থা দেখে দু’চোখের পাতা এক করতে পারতেন না মহেশতলার বাসিন্দা আদিপ মল্লিক। সোমবার চার বছরের সেই শিশুর অন্তঃকর্ণ প্রতিস্থাপন করে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাল এসএসকেএম।
২০১৫ থেকে পিজিতে শুরু হয়েছিল অন্তঃকর্ণ প্রতিস্থাপন। এ দিন সেই প্রতিস্থাপনের সংখ্যা একশোয় পা দিল। ‘ইনস্টিটিউট অব ওটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি’ বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘জন্মগত ভাবে বধির শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর লক্ষ্যে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে অন্তঃকর্ণ প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছিল। প্রতিটিতেই সাফল্য এসেছে। একশোতম সাফল্যে সকলেই উচ্ছ্বসিত।’’ ২০১৫ সালে চারটি, ’১৬ সালে সাতটি, ’১৭ সালে ১২টি, ’১৮ সালে ১৬টি, ’১৯ সালে ১৪টি, ’২০ সালে ন’টি, ’২১ সালে ২৫টি এবং ’২২-এ (জুন পর্যন্ত) ১৩টি প্রতিস্থাপন হয়েছে।
মুদির দোকানের সাধারণ কর্মচারী আদিপ জানাচ্ছেন, অনেক চিকিৎসা করিয়েও কোনও লাভ হয়নি। শেষে বছর দেড়েক আগে পিজি-র ইএনটি বিভাগে আসেন। ওই শিশুর অন্তঃকর্ণ প্রতিস্থাপন করা চিকিৎসক অরিন্দম দাস বললেন, ‘‘পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে অন্তঃকর্ণে ‘ককলিয়ার’ যন্ত্র প্রতিস্থাপন করলে খুব ভাল ফল মেলে। এ বার শিশুটিকে স্পিচ থেরাপি দিয়ে কথাও বলানো হবে।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রের ‘অ্যাডিপ’ (এআইডিপি) প্রকল্পে প্রতি বছর যে সংখ্যক ককলিয়ার যন্ত্রমেলে, সেই মতো অপেক্ষার তালিকা অনুযায়ী প্রতিস্থাপন করা হয়। এখন ৫০ জন অপেক্ষায় রয়েছে। চিকিৎসাধীন আরও ১৫০টি শিশুকে আগামী দিনে প্রতিস্থাপনের আওতায় আনা হবে।
অরিন্দম জানাচ্ছেন, ১০০টি প্রতিস্থাপনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তহবিল থেকে ছ’টি যন্ত্র মিলেছে। আটটি যন্ত্র পরিজনেরা নিজেরা কিনেছেন। বাকিটা এসেছে অ্যাডিপ প্রকল্পে। চলতি বছরে ওই প্রকল্পে ৩২টি যন্ত্রের অনুমোদন এসেছে। অরুণাভবাবু বলেন, ‘‘এ বার স্বাস্থ্য দফতরও ৫০০টি ককলিয়ার যন্ত্র কিনছে। প্রথম পর্বে পিজিকে ৫০টি দেওয়া হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়াও হয়ে গিয়েছে। সেগুলি পেয়ে গেলে রাজ্য ও কেন্দ্রের দেওয়া যন্ত্র মিলিয়ে বছরে আরও বেশি সংখ্যক শিশুর অন্তঃকর্ণ প্রতিস্থাপন করা হবে।’’
এ দিন অরিন্দম-সহ চিকিৎসক অঙ্কিত চৌধুরী, কামরান আহমেদ, অ্যানাস্থেটিস্ট কবীর হোসেনরা মিলে প্রায় তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে আফাজের ডান কানের অন্তঃকর্ণে ককলিয়ার যন্ত্র প্রতিস্থাপন করেছেন। আর একশোতম প্রতিস্থাপনে উচ্ছ্বসিত চিকিৎসকেরা পরে কেক কেটে এ দিনের সাফল্য উদ্যাপন করেন।