—ফাইল চিত্র।
বিরল গ্রুপের রক্ত পেতে হয়রানির চিত্রনাট্যে উলটপুরাণ এসএসকেএমে!
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোরের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজন ছিল বম্বে গ্রুপের রক্ত। সে জন্য বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে দাতাকে ব্লাড ব্যাঙ্কে আনানোর ব্যবস্থা করলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গভীর রাতে দাতার শরীর থেকে রক্তগ্রহণের ব্যবস্থা করল ব্লাড ব্যাঙ্ক। সরকারি হাসপাতালে এমন ছবি বিরল, বলছেন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীরা।
সপ্তাহ তিনেক আগে পেটে ব্যথা নিয়ে বছর তেরোর কিশোর জগদীশ গিরিকে এসএসকেএমে ভর্তি করান তার মা উমা গিরি। শনিবার দিঘার রামনগরের বাসিন্দা উমা বলেন, ‘‘ছেলের টিউমারের অস্ত্রোপচারের জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। রক্ত না মেলায় সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়।’’
সম্প্রতি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি এক প্রসূতির জন্য বম্বে গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খান আত্মীয়েরা। এপ্রিলে এক সদ্যোজাতের ক্ষেত্রেও এনআরএসে একই ঘটনা ঘটে। যার প্রেক্ষিতে সরকারি তথ্য ঘেঁটে বম্বে গ্রুপের দাতাদের তালিকা করেছে স্বাস্থ্য ভবন। সেই তালিকা ধরে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কোথাও জানানো হয়, দাতার বয়স ছ’বছর! কোথাও আবার মারা গিয়েছেন দাতা।
অন্য দিকে, জগদীশের রক্তের গ্রুপ নিশ্চিত করতে উমাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে যেতে বলেছিলেন সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে গ্রুপ নির্ণয়ের পরে ফোন নম্বর-সহ দাতাদের তালিকা দেওয়া হয়েছিল। এ দিন উমা বলেন, ‘‘তিন ঘণ্টা পরে যে তালিকা পেলাম, তাতে পাঁচ জনের নাম ছিল। দু’জনের ফোন বন্ধ ছিল। দু’জন বললেন, দুমাস আগেই রক্ত দিয়েছেন। অন্য জনের বাড়ি কাঁথি। তিনি বললেন যাতায়াতের জন্য সাত হাজার টাকা দিতে হবে।’’ এসএসকেএম সূত্রের খবর, কাঁথির ব্লাড ব্যাঙ্কে ওই ব্যক্তির রক্ত নিয়ে কলকাতায় আনার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু ওঁর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকায় তা-ও ভেস্তে যায়।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি দীপঙ্কর মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এসএসকেএম ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সেই সূত্রে ফোন যায় বম্বে গ্রুপের সর্বভারতীয় মঞ্চের সদস্য মৃদুল দলুইয়ের কাছেও। দীপঙ্কর জানান, সরকারি তালিকার বাইরে হাওড়ার বড়গাছিয়ায় বম্বে গ্রুপের রক্তদাতা যে রয়েছেন, তা তিনি জানতেন। যোগাযোগ করা হয় শম্ভুনাথ বাগ নামে সেই ব্যক্তির সঙ্গে। দীপঙ্কর বলেন, ‘‘বাচ্চার রক্তের প্রয়োজন শুনে রাজি হয়ে যান।’’
সব শুনে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। রাত ১১টা নাগাদ শম্ভুনাথকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছয় অ্যাম্বুল্যান্স। সাড়ে ১১টায় শুরু হয় রক্তগ্রহণের প্রক্রিয়া। উমা বলেন, ‘‘আমার ছেলের জন্য উনি যা করলেন, ভুলব না।’’ শম্ভুনাথের কথায়, ‘‘মানুষ হিসাবে কর্তব্য করেছি।’’
সুপার রঘুনাথ মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘খবরটা শুনেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক প্রতীক দে খুবই উদ্যোগী ছিলেন। রোগী স্বার্থে যা করার তা-ই করেছি।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।