SSKM Hospital

সব দেহের অটোপসি করার সিদ্ধান্ত পিজি-র

সম্প্রতি রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে শুরু হয়েছে প্যাথলজিক্যাল অটোপসি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২১ ০৬:৩৭
Share:

ফাইল চিত্র।

শুধু করোনা আক্রান্ত মৃতদেহই নয়, এ বার থেকে স্বাভাবিক ভাবে মৃত যে কোনও দেহের প্যাথলজিক্যাল অটোপসি (মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ময়না-তদন্ত) করার সিদ্ধান্ত নিল এসএসকেএম হাসপাতাল। এর জন্য তৈরি হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও। তবে কোনও অটোপসির জন্য অবশ্যই সেই রোগীর পরিবারের সম্মতি জরুরি।

Advertisement

সম্প্রতি রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে শুরু হয়েছে প্যাথলজিক্যাল অটোপসি। ব্রজ রায়ের দেহ দিয়েই শহরে প্রথম করোনায় মৃতের প্যাথলজিক্যাল অটোপসি শুরু হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত ১৫ জুন থেকে এসএসকেএমেও করোনায় মৃতের প্যাথলজিক্যাল অটোপসি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সেখানে এরকম দু’টি অটোপসি হয়েছে। সূত্রের খবর, করোনায় মৃতের অটোপসি করার প্রস্তাব এসএসকেএম হাসপাতালে আসার পরে কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, শুধু করোনা রোগীর মৃতদেহই নয়, সার্বিক ভাবে প্যাথলজিক্যাল অটোপসি কেন্দ্র চালু করা হবে পিজিতে। তাতে যে কোনও রোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। এ জন্য ওই হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক পীযূষ রায়, শল্য বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্রকুমার সরকার, ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক ইন্দ্রাণী দাস, প্যাথলজি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক উত্তরা চট্টোপাধ্যায়, ডিন চিকিৎসক অভিজিৎ হাজরাকে নিয়ে একটি ‘প্যাথলজিক্যাল অটোপসি কমিটি’ তৈরি হয়েছে। সূত্রের খবর, দেশের মধ্যে ‘পোস্ট গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, চণ্ডীগড়’-এ সার্বিক প্যাথলজিক্যাল অটোপসি চালু রয়েছে।

অটোপসি হল শব ব্যবচ্ছেদ। কেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ধরা যাক কোনও রোগী প্রচন্ড পেটের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন এবং পরে মারা গিলেন। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অজানাই থেকে যায়। বহু ক্ষেত্রেই এমন বিষয় ঘটে। তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মৃত্যুর শংসাপত্রে ‘কার্ডিয়াক ফেলিয়োর’ লেখেন। দীপ্তেন্দ্রবাবু জানাচ্ছেন, হার্ট থেকে ‘অ্যাওর্টা’র মাধ্যমে পেট এবং শরীরে নিম্নাংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সঞ্চালিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, পেটের যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হওয়া ওই রোগীর মৃত্যুর পরে তাঁর প্যাথলজিক্যাল অটোপসি করলে হয়তো দেখা যাবে যে, ‘অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম’ হওয়ার ফলে ‘অ্যাওর্টা’ ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার পরে ওই রোগীর ক্লিনিক্যাল তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। তখন দেখা হবে, পেটের যন্ত্রণার জন্য কী কী পরীক্ষা করানো হয়েছিল। তাতে ‘অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম’ ধরা পড়ল না কেন? কী পরীক্ষায় সেটি ধরা পড়ত। আবার সমস্যাটি জানা গেলে কী ধরনের চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারত। দীপ্তেন্দ্রবাবু বলছেন, “অটোপসি করা গেলে এমন বহু রোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যেমন সম্ভব, তেমনই চিকিৎসাবিজ্ঞানকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।”

তবে প্যাথলজিক্যাল অটোপসিকে কখনই আইনগত বিষয়ে ব্যবহার করা যাবে না বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য শিবিরের আধিকারিকেরা। পিজি সূত্রের খবর, অনেক সময়েই কোনও সদ্যোজাত মারা যাওয়ার পরে তার পরিজনেরা দেহ নিতে নারাজ থাকেন। এত দিন সেই সব দেহের প্যাথলজিক্যাল অটোপসি করতেন চিকিৎসকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement