ফাইল চিত্র।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল খুঁজে বার করে মন্তব্য। ছবি নিয়ে তৈরি মিম, ভিডিয়ো। অনেক ক্ষেত্রে তা ছাড়াচ্ছে শালীনতার সীমাও। সমাজমাধ্যমের এই হিড়িকে নজর যেন দুর্নীতির অভিযোগ থেকে ঘুরে না যায়, সেই বার্তাই দিচ্ছেন এসএসসি-তে দুর্নীতির অভিযোগে আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থী থেকে বিরোধী দলের নেত্রী— সকলেই।
রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে ইডি-র অভিযানের পরে রাশি রাশি টাকা উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তে শুক্রবার রাত থেকেই সমাজমাধ্যমে আলোড়ন পড়ে। শনিবার সকালে পার্থবাবুর গ্রেফতারির পর থেকেই অর্পিতার সঙ্গে তাঁর একাধিক ছবি ছড়িয়ে পড়ে। সমাজমাধ্যমে থাকা অর্পিতার একাধিক ছবি, ভিডিয়োতেও অজস্র মন্তব্য করতে থাকেন নেট-জনতার একাংশ। ছবি জুড়ে তৈরি হয় মিম, গান জুড়ে বানানো হয় ভিডিয়ো। অনেক ক্ষেত্রেই শালীনতা, রুচির তোয়াক্কা না করা ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখে পড়েন তাঁরা। কটাক্ষ, চটুল মন্তব্য করা হয় তাঁদের বয়স, সম্পর্ক, তাঁরা কেমন দেখতে সে সব নিয়ে।
নেট-জনতার একাংশের এই প্রবণতা যাতে দুর্নীতির অভিযোগের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে না পারে, সেই সতর্কবার্তাও সমাজমাধ্যমে দিয়েছেন অনেকে। সিপিএম নেত্রী দীপ্সিতা ধর তাঁর ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করেন। সেই বার্তার সঙ্গেই সেখানে লেখা, ‘‘খিল্লিবিপ্লব আর মিমযুদ্ধ আর নয়! ন্যায্য চাকরি আর ন্যায্য বিচারের আন্দোলনে সম্পূর্ণ ফোকাস।’’ পরে দীপ্সিতা বলেন, ‘‘আমরা চাই যারা চুরি করেছে, তারা জেলে যাক। কিন্তু কে কেমন দেখতে, কে কী পোশাক পরবে, কার সঙ্গে কার কী সম্পর্ক, এগুলো নিয়ে কটু মন্তব্য করা উচিত নয়। এতে মূল বিষয়টাই লঘু হয়ে যায়।’’ বাম সমর্থক, অভিনেতা বাদশা মৈত্রও ফেসবুকে লেখেন, ‘‘ব্যক্তিগত কুৎসা করা বন্ধ করে, কারও শারীরিক গঠন নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে, দুটো মানুষের ভেতরের সম্পর্ক নিয়ে অকারণ উৎসাহ না দেখিয়ে মূল বিষয় নিয়ে কথা বলা অভ্যেস করুন।’’
পরিচিতদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এই চর্চা অবশ্য বরাবরই চলে, জানাচ্ছেন সমাজতাত্ত্বিকরা। তাঁদের মতে, যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রের ‘পাবলিক ফিগার’ হিসেবে প্রচারের আলোয় থাকেন, তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন কখনওই চর্চার বাইরে যেতে পারে না। জনতার একটা অংশ তাই সুযোগ পেলে তা নিয়ে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েও মন্তব্য করতে ছাড়ে না। মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যে কোনও ধরনের কুরুচিকর আক্রমণের নিন্দা করা উচিত। এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে কার সঙ্গে কার পরিচিতি থাকবে,কে কী করবেন, সে সব নিয়ে কথাবলা অপ্রাসঙ্গিক। কারও বিষয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে তা নিয়েই বলা উচিত।’’
স্কুলে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে চাকরিপ্রার্থীদের লড়াইয়ের শরিক ছিলেন বীরভূমের নলহাটির সোমা দাস। ক্যানসারে আক্রান্ত সোমা আদালতের হস্তক্ষেপের পরে চাকরি পেয়েছেন কিন্তু এখনও তিনি আন্দোলনের সঙ্গীদের পাশেই রয়েছেন। সোমা বললেন, ‘‘কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ আমাদের মঞ্চেরও কেউ করেননি। আন্দোলনটা কেবল কয়েক জনের চাকরি পাওয়া বা না পাওয়ার নয়। এটা সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশ্ন। তাই ব্যক্তিগত আক্রমণ, কুৎসায় না গিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের ন্যায্য দাবির পক্ষে সওয়াল করা উচিত।’’