COVID-19

‘এক মাস কোভিড-বিধি মেনে চললে সংক্রমণ কমবেই’

বিশেষজ্ঞদের একাংশও এই কথা জোর দিয়ে বলছেন যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সচেতন হলেই করোনার দাপট কমানো সম্ভব।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৫:১৯
Share:

নজরে: ধর্মতলায় মাস্কহীন এক পথচারীকে ধরে তাঁকে মাস্ক পরতে বাধ্য করলেন কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী। নিজস্ব চিত্র।

‘‘আমাদের এখন উল্টো পথে হাঁটতে হবে। যদি করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চাই তবেই।’’ উদ্বেগ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এর প্রাক্তন অধিকর্তা অরুণাভ মজুমদার। অর্থাৎ? ‘‘দেখুন বর্তমান করোনা সংক্রমণের জন্য আমরাই মূলত দায়ী। পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে, যত দিন আমরা নিয়ম পালন করছিলাম, তত দিন করোনার লেখচিত্র সাময়িক ভাবে নিম্নমুখী হয়েছিল। কিন্তু সেই রাশ আলগা হওয়াতেই ফের করোনার এত বাড়বাড়ন্ত।’’— বলছিলেন তিনি। তা হলে এখন কী করণীয়? তাঁর উত্তর, ‘‘নিয়ম না মানার ফলে করোনা বেড়েছে। ফলে এখন তার বিপরীত কাজগুলো করে অর্থাৎ, কোভিড-বিধি মেনে করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রত্যেকে অন্ততপক্ষে এক মাস কোভিড-বিধি মেনে চললে সংক্রমণ কমবেই।’’

Advertisement

শুধু অরুণাভবাবু নন, বিশেষজ্ঞদের একাংশও এই কথা জোর দিয়ে বলছেন যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সচেতন হলেই করোনার দাপট কমানো সম্ভব। এক মাইক্রোবায়োলজিস্টের কথায়, ‘‘দেখুন করোনাভাইরাসের মিউটেশন আমাদের হাতে নেই। আমাদের হাতে যেটুকু রয়েছে, তা হল নিয়ম পালন করা। সেটা ঠিক মতো করলে করোনা সংক্রমণে অনেকটাই লাগাম পরানো সম্ভব হবে।’’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত গবেষকদের একাংশও জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন এসেছে ঠিকই। সেই স্ট্রেন যে আগের থেকেও বেশি সংক্রামক, তা-ও ঠিক। কিন্তু সেই স্ট্রেন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারছে জনগোষ্ঠীর একাংশের অবিমৃষ্যকারিতার কারণেই!

অথচ জানুয়ারি থেকে মার্চ— এই তিন মাস সংক্রমণের হার কমেছিল। কারণ, গত বছরের শেষার্ধে মানুষের মধ্যে করোনা-সচেতনতা বা করোনা-আতঙ্ক কাজ করেছিল। কিন্তু সংক্রমণ কমে গিয়েছে বা নির্বাচনের বাজারে করোনা-প্রচার গৌণ হয়ে যাওয়ায় সেই সচেতনতার বর্ম খসে পড়ে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে ধরে নিয়ে বেশির ভাগ মানুষই কাছেপিঠে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। যার ফলে বর্তমানে ফের লাগামছাড়া হয়েছে সংক্রমণ। ফলে আগামী এক মাস কঠোর ভাবে করোনা-বিধি মানলে পরবর্তী সময়ে তার সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘দেখুন বর্তমানে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা যা বেড়েছে, বেড়েছে। তা তো আর এই মুহূর্তে কমানো যাবে না। কিন্তু আজ থেকে যদি কোভিড-বিধি মেনে চলি, তা হলে আগামী দিনে এই পরিস্থিতির অনেকটাই সুরাহা হবে বলে আশা করা যায়।’’

Advertisement

শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের ইর্মাজেন্সি বিভাগের প্রধান সংযুক্তা দত্ত আবার বলছেন, ‘‘সাময়িক ভাবে সংক্রমিতের সংখ্যা কিছুটা নেমেছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ! সংক্রমিতের সংখ্যাবৃদ্ধি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সবার উপরেও অসম্ভব চাপ তৈরি করছে।’’ আর সেটাও যথেষ্ট উদ্বেগের বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী-চিকিৎসকদের একাংশ। এক জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘একটা কথা আমরা ভুলে যাচ্ছি যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকে কিন্তু এই লড়াইটা করে যাচ্ছেন। পরিবর্তে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ন্যূনতম সহযোগিতাটুকু কি আমরা আশা করতে পারি না?’’

সহযোগিতা মানে আর কিছুই নয়, শুধু কোভিড-বিধি যা রয়েছে, তা মেনে চলা। প্রতিষেধক নেওয়ার পাশাপাশি ঠিক মতো মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি বজায় রাখা, নির্দিষ্ট সময় অন্তর হাত জীবাণুমুক্ত করা। এগুলো করলেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনেকটাই কাটানো যাবে বলে মনে করছেন অনেকে। কিন্তু এত কিছু বলা, লেখা, প্রচারের পরেও জনগোষ্ঠীর একাংশ তা কতটা শুনবে এবং কোভিড-বিধি মানবে, সে সম্পর্কে সন্দিহান বিশেষজ্ঞেরা। এক ভাইরোলজিস্টের কথায়, ‘‘একটা প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে যে অনেকে ধরেই নিয়েছেন যে তাঁর করোনা হবেই। অতএব তাঁরা নিজের পরিচিত-বন্ধুবান্ধব মহলে রীতিমতো বলে বেড়াচ্ছেন যে অত নিয়ম পালনের কী দরকার রয়েছে? এই মানসিকতা বিপজ্জনক!’’

এমনিতে সংক্রমণের শুরুর সময় থেকেই করোনা-বিধি পালনে অনীহা ছিল জনসাধারণের একাংশের মধ্যে। কিন্তু যাঁরা নিয়ম পালন করছিলেন তাঁরাও সংক্রমিতের কম সংখ্যা দেখে কোভিড-বিধি পালনে ঢিলেমি দেওয়ায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শদাতা তথা ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় ডাইনামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’-র ডিরেক্টর রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ বলছেন, ‘‘কোভিড-বিধি পালনের ক্ষেত্রে কোনও সমঝোতা চলবে না। এমনকি, প্রতিষেধক নিলেও সব নিয়ম পালন করতে হবে। কারণ, এটাই সংক্রমণ রোখার একমাত্র পথ!’’

কিন্তু সেই পথে ক’জন হাঁটবেন? সেই দিকেই তাকিয়ে বিশেষজ্ঞেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement