স্কুলগাড়ির এই স্পিড গভর্নরে কারচুপি করা হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
গাড়িতে স্পিড গভর্নর খোলা কেন? এই কারচুপির সুবিধাই বা কী?
পোলবার স্কুলগাড়ি দুর্ঘটনার পরে এমন প্রশ্নই উঠে এসেছে। শহর ও শহরতলির কয়েকটি স্কুলগাড়ি সংগঠনের দাবি, শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থেই গাড়ির স্পিড গভর্নরে (গতি নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র) কারচুপি করেন এক শ্রেণির মালিকেরা। কারণ স্কুলগাড়ির মতো ছোট যানে ওই বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ গতি বাধা থাকে ৮০ কিমি পর্যন্ত। কিন্তু স্কুলের সময়ের বাইরে অন্য কাজে ভাড়া খাটার সময়ে জাতীয় সড়কের মতো রাস্তায় ওই গাড়িতে ১০০-১২০ কিমি গতি তুলতে গেলেই সমস্যা দেখা দেয়।
রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, গতি নিয়ন্ত্রণের ওই যন্ত্র মূলত থাকে বাণিজ্যিক গাড়িতে। স্কুলগাড়ি-সহ অন্য গাড়ির ক্ষেত্রে ৮০ কিমি এবং স্কুলবাস ও তেলের ট্যাঙ্কারের ক্ষেত্রে ৬০ কিমি পর্যন্ত গতিবেগ নির্দিষ্ট করা রয়েছে। সেই মতোই গাড়ি অনুযায়ী ওই যন্ত্রের মাধ্যমে গতি নিয়ন্ত্রণ করা থাকে। ২০১৫ সালের আগে যে গাড়ি রাস্তায় নেমেছে তাতে ওই যন্ত্র ছিল না (ইনবিল্ট নয়)। তবে ২০১৫-’১৬ থেকে সরকারি নিয়মানুযায়ী ফিটনেস সার্টিফিকেট পেতে গেলে স্পিড গভর্নর থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। তাই খোলা বাজার থেকে ৩-৪ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই যন্ত্র পুরনো গাড়িতে লাগিয়ে নেন মালিকেরা। সেখানে ভাল কোনও সংস্থার ওই যন্ত্রের দাম পড়ে প্রায় তিরিশ হাজার টাকা।
সূত্রের খবর, ২০১৫ সাল থেকে যে সব নতুন বাণিজ্যিক গাড়ি রাস্তায় নেমেছে সেগুলিতে গতি নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র বসানো রয়েছে। সেটি খোলা যায় না। কারণ নতুন গাড়িগুলি এমনই প্রযুক্তিতে তৈরি যে ওই যন্ত্র খুললে গাড়ি আর চালু হবে না। সেখানে নিয়মানুযায়ী ফিটনেস পরীক্ষার সময়ে পুরনো গাড়িতে ওই যন্ত্র লাগিয়ে পরীক্ষায় উতরে গেলেও পরে কারচুপি করা হয় বলেই অভিযোগ। কেন এমন কারচুপি?
স্কুলগাড়ি চালকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই যন্ত্র থাকলে যতটা গতি বাধা রয়েছে তার থেকে বেশি গতি তোলার জন্য অ্যাক্সিলারেটরে চাপ বাড়ালেও কাজ হয় না। উল্টে জ্বালানি বেশি খরচ হয়। সে ক্ষেত্রে মালিকের গাড়ির ভাড়া বাবদ লাভ বেশি হয় না। অনেক সময়ে পুরো যন্ত্রটি না খুলে নির্দিষ্ট কোনও তার খোলেন অনেকে। যেমন পোলবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্কুলগাড়িটি পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন, স্পিড গভর্নর যন্ত্রটি থাকলেও সেটির তার খোলা রয়েছে। এক স্কুলগাড়ি চালকের দাবি, ‘‘ওই যন্ত্র থাকলে এক লিটার তেলে খুব বেশি হলে সাড়ে সাত থেকে আট কিমি পর্যন্ত গাড়ি চলবে। আর যদি যন্ত্রটি না থাকে তা হলে ওই একই পরিমাণ জ্বালানিতে ১০-১২ কিমি পর্যন্ত মাইলেজ পাওয়া যায়।’’
গাড়িচালকদের একটি অংশ এটাও জানাচ্ছেন যে, গতি নিয়ন্ত্রের যন্ত্রের তার শুধু খুলে রাখাতে বেশি সুবিধা রয়েছে। কারণ আচমকাই রাস্তায় যদি মোটর ভেহিক্লস দফতরের টেকনিক্যাল অফিসারেরা গাড়িটি ধরেন, তখন এটা অজুহাত দেওয়া যায় যে কোনও ভাবে তারটি ভিতরে খুলে গিয়েছে। পুলিশের একাংশের দাবি, মোটর ভেহিক্লস দফতরের টেকনিক্যাল অফিসারদেরই গাড়ির প্রযুক্তিগত দিক পরীক্ষার দক্ষতা রয়েছে। স্পিড গভর্নর-সহ অন্য প্রযুক্তিগত বিষয় তাই সব সময়ে পুলিশের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না। তা হলে প্রশ্ন হল স্কুলগাড়ির প্রযুক্তিগত দিক দেখবে কে?
রাজ্য পরিবহণ দফতরে টেকনিক্যাল অফিসার রয়েছেন ৩০০ জন। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘স্পিড গভর্নর ট্র্যাফিক পুলিশই পরীক্ষা করে দেখে। রাজ্যে নির্দিষ্ট ১৫০টি চেকিং পয়েন্ট রয়েছে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে এক জন করে টেকনিক্যাল অফিসার যুক্ত করে দেওয়া আছে। তাঁরাই বিষয়টি দেখেন। তবে স্কুলগাড়ির চালকদের সব নিয়ম মেনেই গাড়ি চালাতে হবে। না হলে কড়া আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’