তালা ঝুলছে মহানাগরিকের ঘরে।—নিজস্ব চিত্র।
ইস্তফা দিয়েছেন মন্ত্রিত্ব থেকে। মেয়র পদ থেকেও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ দলনেত্রী। কিন্তু, এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেননি শোভন। তবে, তার আগেই তালা ঝুলল মেয়রের ঘরে।
পুরসভা খোলা থাকলে সকাল ১০টার সময়েই খুলে দেওয়া হয় মহানাগরিকের ঘর। কিন্তু, বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ মহানাগরিকের ঘরের সামনে গিয়ে দেখা গেল তার দরজায় তালা ঝুলছে। তবে কি নতুন মেয়র হিসাবে কেউ দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত এই তালাই ঝুলবে? পুরসভার কর্মীরা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শোভন মেয়র পদে ইস্তফা দিলে তাঁর জায়গায় কে আসবেন? এ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই তুমুল জল্পনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি নাম উঠে এসেছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, অতীন ঘোষ এবং দেবব্রত মজুমদারের নাম। মুখ্য সচেতক রত্না সুরের নামও ভাসছে। মেয়র করা হতে পারে পুরসভার বর্তমান চেয়ারপার্সন মালা রায়কে।তৃণমূলের অন্য একটি সূত্র বলছে, রাজ্যের কোনও মন্ত্রীকেও মেয়রের পদে বসাতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই দৌড়ে সব থেকে এগিয়ে রয়েছেন কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি ২০০০-০৫ পর্যন্ত মেয়র ছিলেন। দক্ষতার সঙ্গেই সেই সময়ে তাঁর দায়িত্ব সামলেছিলেন সুব্রতবাবু।বর্তমানে সুব্রতবাবু রাজ্যের পঞ্চায়েত এবং গ্রামন্নোয়ন দফতরেরমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তেই রয়েছেন তিনি।
কে হবেন পরবর্তী মেয়র? জল্পনা তুঙ্গে।
আরও পড়ুন: ‘প্রাসাদ-রাজকন্যা’ ছেড়ে কি সন্ন্যাসের পথে মন্ত্রী, নাকি ঘুঁটি সাজানো হচ্ছে অন্য দরবারে?
আরও পড়ুন: অনেক সুযোগ দিয়েছিলেন মমতা, কিন্তু শোধরাননি শোভন
দৌড়ে রয়েছেন রাজ্যের পুর ও নগরন্নোয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও।শোভন মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যাওয়ার পর মমতা তাঁকেই দমকল এবং আবাসন দফতরের দায়িত্ব দিয়েছেন। এছাড়া তিনি অতীতে পুরসভার বিভিন্ন দায়িত্বও সামলেছেন। ছিলেন মেয়র পারিষদও। ফলে তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে মেয়র করা হতে পারে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। তাঁকে নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে বলে তৃণমূলের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে।
তবে পুরসভার বর্তমান আইন অনুযায়ী কাউন্সিলর নন এমন কাউকে মেয়র করা যায় না। ঘটনাচক্রে আগামিকাল বৃহস্পতিবার বিধানসভায় একটি বিল আসছে। সেখানে পুরআইনে সংশোধনী আনার কথা বলা হবে। ওই সংশোধনী অনুযায়ী, কাউন্সিলর নন এমন ব্যক্তি মেয়র হতে পারবেন। তবে তাঁকে ৬ মাসের মধ্যে কোনও ওয়ার্ড থেকে জিতে আসতে হবে। আগামী ডিসেম্বরেই ১১৭ ওয়ার্ডে উপনির্বাচন হওয়ার কথা। বছর দুয়েক আগে ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শৈলেন দাশগুপ্ত মারা যান। তার পর আর ওই ওয়ার্ডে কোনও উপনির্বাচন হয়নি। সেই আসনে পছন্দের কাউকে জিতিয়েও আনতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। জল্পনা রয়েছে, শহরের কোনও বিদ্বজ্জনকে মেয়র পদে আনা হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত মমতা কাকে বেছে নেবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
নিয়ম মতো মেয়রকে পদত্যাগপত্র চেয়ারপার্সনের হাতেই তুলে দিতে হবে। বুধবার সরকারি ছুটি।তা সত্ত্বেও পুরসভার কয়েকটি বিভাগ খোলা রয়েছে। এসেছেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ, চেয়ারপার্সন মালা রায়। আগামী কাল বৃহস্পতিবার পুরসভার সব কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘উত্তীর্ণ’তে ওই বৈঠক হবে। থাকবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বও। ওই বৈঠকে ঠিক হবে মেয়র কে হবেন।
যত দিন না নতুন মেয়র দায়িত্ব পাচ্ছেন, তত দিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আপাতত পুর কমিশনারই দায়িত্ব সামলাবেন।