rg kar medical college

RG Kar Medical College: আইসোলেশন কেন্দ্রের জায়গায় হয়েছে জিম, অভিযুক্ত অধ্যক্ষ

প্রশ্ন উঠেছে, তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা যেখানে রয়েছে, সেখানে কোভিড তহবিলের টাকা জিম তৈরির কাজে ব্যয় হল কী করে?

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২১ ০৫:৩০
Share:

ফাইল চিত্র।

জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ-আন্দোলনে প্রায় অচল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এ বার সেখানে উঠছে একাধিক গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ। যার কয়েকটিতে অভিযুক্ত বর্তমান অধ্যক্ষ, আবার কয়েকটিতে অভিযুক্ত জুনিয়র ডাক্তার এবং পূর্ববর্তী প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ। ইতিমধ্যে প্রতিটি অভিযোগেরই তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

অভিযোগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু আর জি করে নবনির্মিত জিম তথা ‘রিক্রিয়েশন সেন্টার’। প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় ছেলেদের কমন রুমকে কোভিড-আক্রান্ত ছাত্রদের জন্য আইসোলেশন সেন্টার করার পরিকল্পনা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। সে জন্য গত ৬ জুলাই সরকারি নির্দেশিকা জারি করে ৫ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা অনুমোদন করা হয় পূর্ত দফতরকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়েছে জিম ও টেবিল টেনিস-ক্যারম খেলার, গান শোনার জায়গা! যার উদ্বোধন করেছিলেন বর্তমান অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ।

কোভিড তহবিলের টাকা এ ভাবেই নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠেছে, তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা যেখানে রয়েছে, সেখানে কোভিড তহবিলের টাকা জিম তৈরির কাজে ব্যয় হল কী করে? অভিযোগ, এর ফলে অনেক জুনিয়র ডাক্তার আক্রান্ত হলেও থাকার জায়গা পাচ্ছেন না।

Advertisement

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষের দাবি, হাসপাতালে আসার পরে বিভিন্ন দুর্নীতি হাতেনাতে ধরে ফেলে তা বন্ধ করতে চাইতেই জুনিয়র ডাক্তার ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করছেন এবং তাঁকে সরাতে আন্দোলন হচ্ছে। সেফ হোমের বদলে জিম তৈরি নিয়ে তাঁর বক্তব্য, গত জুলাইয়ের আগেই ছেলেদের কমন রুমকে ১০ শয্যার আধুনিক আইসোলেশন সেন্টারে পরিণত করা হয়েছিল। জুলাইয়ে টাকা অনুমোদনের পরে পূর্ত দফতরকে সেই টাকা মেটানো হয়। এর পরে সেপ্টেম্বরে আইসোলেশন সেন্টার তুলে দিয়ে জিম চালু হয়।

কিন্তু জিমের টাকা এল কোন তহবিল থেকে? অধ্যক্ষের দাবি, আর জি করে কিছু জুনিয়র ডাক্তার ছাত্র সংগঠনের নাম করে হাসপাতালের বেসরকারি ক্যান্টিন থেকে ৩ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা তুলেছিলেন। যার রসিদ ছিল ছাত্র সংগঠনের নামে। অথচ প্রায় তিন বছর সেই সংগঠনের অস্তিত্বই নেই। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বিষয়টি ধরে ফেলে ছাত্রদের থেকে টাকা ফেরত নিই এবং ক্যান্টিনের মালিককে তা হাসপাতালের অ্যাকাডেমিক ফান্ডে জমা দিতে বলি। কারণ, ক্যান্টিন থেকে হাসপাতালের প্রচুর টাকা পাওনা ছিল। তার থেকেই দু’লক্ষ টাকা জিম তৈরিতে খরচ হয়। এর পরে ছাত্রদের বাঁচাতে আমি রসিদটি ছিঁড়ে ফেলেছিলাম, যা ভুল হয়েছিল। আমার কাছে আমার দাবির পক্ষে প্রমাণ কিছু নেই।’’

কিন্তু স্বাস্থ্য ভবন যেখানে আইসোলেশন সেন্টার গড়ার কথা বলছে, সেখানে অধ্যক্ষ তা তুলে দিলেন কেন? অধ্যক্ষের উত্তর, ‘‘ছাত্রদের একটা বড় অংশ ওই জায়গায় জিমের দাবি তুলেছিলেন। এখন তাঁরা স্বীকার করছেন না। তা ছাড়া, আমি মেন হস্টেল ও ললিত হস্টেলের বিকল্প জায়গায় ছাত্রদের আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করে দিয়েছি।’’ যদিও বিকল্প জায়গায় আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরির কথা ছাত্রেরা মানতে চাননি।

তবে জুনিয়র ডাক্তার ও পূর্ববর্তী প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বিরুদ্ধে পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ করছেন অধ্যক্ষও। তিনি জানান, ২০১৭-’২০ সালের মধ্যে হাসপাতালে ২২১টি কার্ডিয়াক স্টেন্ট ব্যবহার না হওয়ায় সেগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। এতে সরকারের ৬৬ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে এবং বহু মানুষ দরকারে স্টেন্ট পাননি। তাঁর আরও অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকে আর জি করে অর্থোপেডিক ইমপ্লান্ট সরবরাহের জন্য যে সংস্থাকে অনুমোদন দিয়েছিল সরকার, তাদের কাছ থেকে কোনও জিনিস কেনা হয়নি। বদলে অন্য সংস্থা থেকে বেশি দামে নেওয়া হয়েছে। নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে এক-এক জন রোগী ধরে এখানে জিনিসের দরপত্র হয়েছে। কার্ডিয়োভাস্কুলার বিভাগে বিভিন্ন পাঠক্রম খোলা হলেও তার ফি সরকারি তহবিলে জমা পড়েনি। অডিট হলে সব ধরা পড়বে।

সমস্ত অভিযোগ সম্পর্কে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এখানে মৌচাকে ঢিল পড়েছে বলে অনেকের অসুবিধা হচ্ছে। তবে আমরাও শেষ দেখব। সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement