প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে চলে ওই কিশোরের অস্ত্রোপচার। ফাইল চিত্র।
ক্যানসার আক্রান্ত এক কিশোরের পা কেটে আবার জুড়ে দেওয়ার মতো নজিরবিহীন অস্ত্রোপচার হল খোদ কলকাতার সরকারি হাসপাতালে। এসএসকেএম হাসপাতালে ওই অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই কিশোরের হাড়ের ১১ ইঞ্চি অর্থাৎ ২৯ সেন্টিমিটার মতো কেটে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল থেকে রেডিয়েশন দিতে আনা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। রেডিয়েশনের মাধ্যমে প্রথমে কিশোরের ক্যানসার আক্রান্ত কোষ নষ্ট করা হয়। এর পর আবার অস্ত্রোপচার করে পায়ে জুড়ে দেওয়া হল হাড়ের ওই অংশ।
রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে এই প্রথম ক্যানসার আক্রান্তের হাড় কেটে তা আবার মেগা প্রস্থেটিক্সের মাধ্যমে জুড়ে দেওয়া হল।
এসএসকেএমের অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ মুকুল ভট্টাচার্য বলেন, “আগে এই ধরনের ক্যানসারে পা বাদ দিয়ে দেওয়া হত।” যদিও ওই কিশোরের পা বাদ দিতে হয়নি। মুকুল জানিয়েছেন, তার সুস্থ হয়ে উঠতে মাস তিনেক সময় লাগবে। তার পর স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হবে না।
আপাতত ওই কিশোরের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল থেকে তাকে এসএসকেএমের আইটিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
বেশ কিছু দিন ধরেই পায়ের সমস্যায় ভুগছিল ১৫ বছর বয়সি মালদহের বাসিন্দা ওই কিশোর। কয়েক মাস আগে খেলতে গিয়ে পায়ে বল লেগে রক্ত জমাট বেঁধে যায় ওই কিশোরের। আঘাত লাগার জায়গায় যন্ত্রণাও শুরু হয়। ব্যথা বাড়লে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় পরিবার। চিকিৎসকরা অনুমান করেন ওই কিশোরের পায়ে ক্যানসার হয়েছে। এর পর যাবতীয় পরীক্ষা করে দেখা যায় তার পায়ের ফিমার হাড়ের মজ্জায় ক্যানসার হয়েছে।
এর পরই চিকিৎসার জন্য তাকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল থেকে এসএসকেএম পর্যন্ত গ্রিন করিডর করা হয়। প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। শম্ভুনাথে অস্ত্রোপচার শুরু করে ক্যানসার আক্রান্ত হাড়ের ওই অংশ কেটে বিশেষ বক্সে ভরে গ্রিন করিডরের মাধ্যমে এসএসকেএম হাসপাতাল আনা হয়। এসএসকেএমে হাড়ের আক্রান্ত অংশে রেডিয়েশন দেওয়া হয়। পরে আবার গ্রিন করিডর করে শম্ভুনাথে এসে ওই অংশ নিয়ে গিয়ে পায়ে জোড়া হয়।
অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ ছাড়াও, ক্যানসার, রেডিয়েশন, অ্যনাস্থেশিয়ার চিকিৎসকরা এই অস্ত্রোপচারে যুক্ত ছিলেন।
এই প্রসঙ্গে এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এসএসকেএম হাসপাতালে আগে এই ধরনের অস্ত্রোপচার হয়নি। আমরা ভবিষ্যতেও এই ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।”