ভোটের হার কম কেন, দেখতে বেরোলেন মেয়র

দুপুর দু’টো নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া দলীয় সমর্থকদের দেখেই গলা চড়িয়ে বলেন, ‘‘তোরা এখানে কী করছিস! ও দিকে ভোটের হার তো বাড়ছে না। নিজেদের পাড়ায় গিয়ে কাজ কর।’’ দলীয় সমর্থকদের নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হলেন না শাসক দলের পুর-সেনাপতি। ভোটের হার কম থাকার কারণ খুঁজতে নিজেই বেরিয়ে পড়লেন পাড়ায়!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০০:১৬
Share:

ভোটকেন্দ্রে সকন্যা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

দুপুর দু’টো নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া দলীয় সমর্থকদের দেখেই গলা চড়িয়ে বলেন, ‘‘তোরা এখানে কী করছিস! ও দিকে ভোটের হার তো বাড়ছে না। নিজেদের পাড়ায় গিয়ে কাজ কর।’’
দলীয় সমর্থকদের নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হলেন না শাসক দলের পুর-সেনাপতি। ভোটের হার কম থাকার কারণ খুঁজতে নিজেই বেরিয়ে পড়লেন পাড়ায়! এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে ঢুকতে বলেন, ‘‘ভোটের হার এত কম কেন, সেটাই বুঝতে পারছি না!’’ পাড়ায়-পাড়ায় দলের ক্যাম্পে গিয়ে জানতে চাইলেন, ‘‘কত ভোটার এখনও বাকি?’’ কী ভাবে সেই ভোটারদের নিয়ে আসতে হবে, হাসিমুখে তার উপায়ও বাতলালেন কর্মীদের।
তবে হাসিমুখের নীচে টেনশনটা লুকোতে পারলেন কি?
ভোটের ময়দানে নতুন খেলুড়ে তো নন তিনি। কাউন্সিলর থেকে বরো চেয়ারম্যান, মেয়র পারিষদ হয়ে পুর-প্রশাসনের শীর্ষস্তরে পৌঁছেছেন শোভন। তাঁকে সহজে হারানো যাবে, এমন খোয়াব ক্ষমতায় থাকা বামেরাও দেখত না। সেই তিনিই ভোটের হার নিয়ে এমন উদ্বিগ্ন কেন? প্রশ্নটা শুধু সাংবাদিক নয়, ঘোরাফেরা করেছে তাঁর অনুচরদের মধ্যেও! এ দিন বিকেলে মেয়রের বাড়ির বাইরে তাঁর এক অনুগত সমর্থক বলেন, ‘‘দাদা বোধ হয় মার্জিন নিয়ে ভাবছেন।’’
যদিও মেয়রের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, এ দিন শুধু নিজের ওয়ার্ড নয়, পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডে ভোটের কম হার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন মেয়র। সশরীরে যেতে না পারলেও ফোনে ভোট বাড়াতে নির্দেশ পাঠিয়েছেন অন্য ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের।
ভোট শুরু হয়েছিল সকাল সাতটায়। আটটায় মেয়রকে ফোনে ধরতে তিনি বলেন, ‘‘একটু দেখে নিই। তার পরে বেরোব।’’ ভোটের গতিক বুঝে তিনি বেরোলেন সকাল দশটায়। তবে সকাল থেকেই কাজ শুরু হয়েছিল মেয়রের ভোট-কন্ট্রোল রুমে। তাঁর বাড়ি লাগোয়া একটি বহুতলের নীচে খোলা হয়েছিল ওই কন্ট্রোল রুম। সেখানে বসেই ভোট পরিচালনা করছিলেন মেয়রের ‘ম্যানেজারেরা’। কেউ ফোনে ভোট করানোর নির্দেশ দিচ্ছিলেন, কারও আবার দায়িত্ব ছিল কর্মীদের কাছে খাবার পৌঁছনোর তদারকি করা। খাবার পৌঁছতে যাওয়া কর্মীরা নিয়ে যাচ্ছিলেন প্রয়োজনীয় ‘নির্দেশ’ও। কন্ট্রোল রুম লাগোয়া মেয়রের বাড়ির চৌহদ্দিতে গ্যাস ওভেন জ্বালিয়ে দুপুরের পোলাও-মাংস রাঁধছিলেন কেটারারের রাঁধুনিরা।
সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ মেয়রের অন্দরমহল থেকে খবর এল, ‘‘দাদা জলখাবার খাচ্ছেন। কিছু দরকারি কাজও সারছেন।’’ এর মিনিট পঁচিশেক পরেই জানা গেল, ‘তিনি’ আসছেন। মিনিট কয়েকের মধ্যেই সাদা রঙের হাফ-পাঞ্জাবি, পাজামা, চটি পরে নেমে এলেন মেয়র।
মুখ কিছুটা থমথমে। তড়িঘড়ি গাড়ি নিয়ে ছুটলেন ওয়ার্ডের নানা প্রান্তে। কখনও গাড়ি দাঁড় করিয়ে কথা বলছিলেন ক্যাম্পে বসা কর্মীদের সঙ্গে, কখনও আবার সটান ঢুকে যাচ্ছিলেন ভোটকেন্দ্রের মধ্যে। পথ চলতে চলতে জোড়হাত করে কুশল প্রশ্নও করছিলেন পাড়ার বাসিন্দাদের। পাড়া ঘুরে মেজাজ অবশ্য কিছুটা নরম হল ‘দাদা’র। সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরে স্ত্রী রত্না এবং ছেলে সপ্তর্ষিকে নিয়ে বাড়ির লাগোয়া বুথে ভোট দিতে চললেন তিনি। সঙ্গে তাঁর ছোট্ট মেয়েও। ভোটের বয়স না হলেও হাতে কালি লাগিয়ে এল সে-ও। পিছু পিছু সংবাদমাধ্যম ও অনুচরেরা। প্রসঙ্গত, এ বারই প্রথম ভোট দেবেন মেয়র-পুত্র। সপরিবার ভোট দিয়ে বেরিয়ে শোভন বলেন, ‘‘বিরোধীদের অস্তিত্ব সে ভাবে চোখে না পড়লেও শেষ সিদ্ধান্ত মানুষই নেবেন।’’
ভোট দিয়ে ফিরে কন্ট্রোল রুমের দরবারি আড্ডায় বসলেন মেয়র। সবাই খাবার খাচ্ছে কি না, তার খোঁজ নিলেন। তার পরে হঠাৎই আড্ডা ছেড়ে ঘরে ফিরে গেলেন তিনি। তখন দুপুর বারোটা। ফিরলেন দু’ঘণ্টা পরে। কর্মীদের ধমকে পাড়ায় টহল দিতে বেরোলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত কত ভোট পড়ল মেয়রের ওয়ার্ডে? শোভন বলেন, ‘‘আমাদের হিসেবে ৬৬.৭৪ শতাংশ।’’ তিনি কি এতে খুশি? ‘‘খুশির কি শেষ আছে,’’ একটু হেসে বলেন মেয়র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement