ডিজে আর বক্স বাজিয়েই চলল ছটের শব্দতাণ্ডব

গল্ফগ্রিনের মাদারতলা ঝিলের এই দৃশ্যের পাশাপাশি শনিবার বিকেলে কলকাতা পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডেও দেখা গেল, আরও এক শব্দ-তাণ্ডবের দৃশ্য। সেখানকার পাটুলি ঝিলে খোদ কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের সামনেই দেদার ডিজে বাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩৪
Share:

শব্দ-যন্ত্রণা: পাটুলির একটি জলাশয়ে বাজল ডিজে। শনিবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

দুপুর থেকে ঘাট পাহারায় বসে ছিল পুলিশ। একটু দূরে ছিল পুলিশ পিকেট-ও। কিন্তু দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কার্যত ঘাটের দৃশ্য দেখেই সময় কাটল সেই পুলিশকর্মীদের। কানের কাছেই যে পেল্লায় বক্স বাজিয়ে শব্দতাণ্ডব চলছে, সে দিকে যেন খেয়ালই নেই কোনও উর্দিধারীর। অভিযোগ, বক্স বন্ধ করা তো দূর, উদ্দাম নাচে ব্যস্ত ছটপুজোর জনতাকে সন্ধ্যার পরে চেয়ার ছেড়ে উঠে নাচার জন্য জায়গা করে দিয়েছে সেই পুলিশই!

Advertisement

গল্ফগ্রিনের মাদারতলা ঝিলের এই দৃশ্যের পাশাপাশি শনিবার বিকেলে কলকাতা পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডেও দেখা গেল, আরও এক শব্দ-তাণ্ডবের দৃশ্য। সেখানকার পাটুলি ঝিলে খোদ কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের সামনেই দেদার ডিজে বাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ। কাউন্সিলর যখন ঝিলের কাছে ঘুরেছেন, তখন শব্দ কিছুটা কমিয়ে দিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও তিনি বেরিয়ে যেতেই ফের স্ব-মূর্তি ধারণ করেছেন ছটপুজোর জনতা। সেখানেই হিন্দিতে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘আমাদের উৎসবে নাচা-গানা হবে না, তা হয় নাকি? অত নিয়ম বুঝি না। আজ যা ভাল লাগে, তা-ই করব।’’ বাপ্পাদিত্য অবশ্য এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘শুনেছিলাম, ডিজে বক্স বাজানো

হচ্ছে ওখানে। তাই বলে দিয়েছিলাম, বক্স থাকলে আমি যাব না। পরে বক্স সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জেনেই গিয়েছিলাম। আমি থাকাকালীন কোনও বক্স ওখানে বাজেনি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞাই সার! গেট ভেঙে, প্রশাসনের সামনেই ছটপুজো রবীন্দ্র সরোবরে​

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উড়িয়ে রবীন্দ্র সরোবরের গেটের তালা ভেঙে এ দিন ছটপুজোর তাণ্ডব চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সময়ে কেন সেখানে কোনও পুলিশকর্মী উপস্থিত ছিলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে শুধু রবীন্দ্র সরোবরই নয়, দূষণ এড়াতে কলকাতা পুর প্রশাসনের চিহ্নিত করা বাকি ১১টি জলাশয়েও একই রকম বিশৃঙ্খলা দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। তাঁদের বক্তব্য, অস্থায়ী ভাবে ঘাটের পাড় বাঁধিয়ে, জলের অংশ ঘিরে দিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হলেও শব্দ-তাণ্ডব আটকানোর কোনও পরিকল্পনাই ছিল না।

রবীন্দ্র সরোবরের বিকল্প হিসেবে ছটপুজোর ব্যবস্থা হওয়া আনন্দপুর, যোধপুর পার্ক, গল্ফগ্রিনের রামধন পার্ক ও গোবিন্দান কুট্টি জলাশয় ঘুরে দেখা গেল, কাঠ বা তক্তা পেতে অস্থায়ী ঘাট তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। জলের অংশ ঘিরে দিয়ে তৈরি হয়েছে পুজোর উপচার ফেলার জায়গাও। জলে ফেলা পুজোর সামগ্রী দ্রুত তুলে ফেলতে সক্রিয় ছিলেন পুরকর্মীরা। ছিল বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। তবে এ সবের মধ্যেই চলেছে কান ফাটানো বক্স ও তাসার বাজনা। গল্ফগ্রিনের বাসিন্দা তমাল রায় বলেন, ‘‘দু’দিন আগেই কালীপুজোর বিসর্জনে ডিজে-র তাণ্ডবে কান পাতা যাচ্ছিল না। আজও দেখলাম একই অবস্থা। রবীন্দ্র সরোবরেরই তো সুরক্ষা নেই।’’

গল্ফগ্রিন কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরোয়। এলাকার বাসিন্দারা যতই অভিযোগ করুন না কেন, সেখানকার বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘আমি আমার বরো এলাকায় ঘুরেছি। কোথাও বক্স বাজতে শুনিনি।’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য-সচিব রাজেশ কুমার অবশ্য বললেন, ‘‘এই ধরনের শব্দ-তাণ্ডব হওয়ার কথা নয়। আমরা বিষয়টি দেখছি।’’ এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে লালবাজারের একাধিক কর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।

আরও পড়ুন: যাদবপুরে উত্তরপত্র ফাঁস কাণ্ডে এ বার এফআইআর দায়ের, কাঠগড়ায় পরীক্ষক

গল্ফগ্রিন, পাটুলি এবং আনন্দপুরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, প্রশাসন যত দিন এমন ‘বধির’ থাকবে, তত দিন এই যন্ত্রণা থেকে তাঁদের মুক্তি নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement