ছবি: সংগৃহীত
হঠাৎ মনে হবে যেন ডিজে বাজছে। সওয়ারি নিয়ে প্রায় উড়তে উড়তে চলছে মোটরচালিত ভ্যানরিকশা। সেই রিকশা থেকেই উচ্চগ্রামে বাজছে গান। সর্বত্রই প্রায় রাস্তার উপরে রিকশা দাঁড়িয়ে। সারি দিয়ে দাঁড়ানো সেই সব রিকশায় বাজতে থাকা গানের চোটে কান ঝালাপালা এলাকার মানুষের।
এমনিতেই কেবল মাত্র ই-রিকশা ছাড়া মোটরচালিত রিকশা, ভ্যানো (মোটরচালিত ভ্যান রিকশা) এমনকি, টোটোও বেআইনি বলে জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সে সব নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এ রাজ্যে বহাল তবিয়তে চলছে ওই সব বেআইনি যান। দ্রুত গতিতে চলা পলকা যানগুলি উল্টেও হাত-পা ভাঙছে যাত্রীদের। তার উপরে ওই সব মোটরচালিত যানে ‘সাউন্ড সিস্টেমের’ বাড়াবাড়িতে শব্দ দূষণে জেরবার হচ্ছে এলাকা। যাত্রীদের অভিযোগ, জোরে গান বাজাতে নিষেধ করলেও বেশির ভাগ চালকই কথা কানে তোলেন না।
শব্দ যাতে বাইরে না যায় এমন ভাবেই গাড়ির ভিতরে গান বাজানো যেতে পারে বলেই জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা অনন্ত সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ওই ধরনের গাড়ির রাস্তায় চলার অনুমতিই নেই। ফলে সেখানে তাতে গান বাজানোর প্রশ্নই ওঠে না।’’
বস্তুত দমদম, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম থেকে বারাসত— সর্বত্রই চলছে মোটররিকশায় বক্স বেঁধে গানের দাপট। এলাকার মানুষের অভিযোগ, অবস্থা এমন হয়েছে যে, উচ্চগ্রামে গান বাজাতে থাকা মোটরচালিত যানের জন্য রাস্তাঘাটে প্রয়োজনীয় কথাটুকু বলারও জো থাকে না। দমদমের মতো শহরাঞ্চলের কথাই ধরা যাক। দমদম স্টেশনকে ঘিরে চার দিকের রাস্তাগুলোয় এমনিতেই রিকশার দাপটে গাড়ি নিয়ে
যাতায়াত তো দূরের কথা, বাজার-হাট করা বা চলাফেরাই দায় হয়ে পড়ে। তার উপরে মোটরচালিত রিকশার শব্দের দাপটে নাজেহাল অবস্থা মানুষের। অভিযোগ, বেআইনি যান চলাচল বা এ ভাবে বক্স বাজানো নিয়ে পুরসভা, দমদম থানা কিংবা পরিবহণ দফতর কেউ-ই আমল দেয় না।
এর আগে কিছু অটোতে এ ভাবে গান বাজানো নিয়ে বিস্তর অভিযোগের পর সেই প্রবণতা বন্ধ করে দেয় পরিবহণ দফতর। কিন্তু মোটরচালিত ওই সব যানে গানবাজনা চলছে পুরোদমে। দমদমের পূর্ব সিঁথি, এম সি গার্ডেন, কদমতলা, পাতিপুকুরের মতো অলিগলি ছাড়াও দমদম রোডের মতো মূল রাস্তাতেও চলছে রিকশায় এমন জলসা। তবে যে সব জায়গায় এ রকম ঘটছে সেখানে হানা দিয়ে রিকশাগুলি বাজেয়াপ্ত করা হবে বলেও এ দিন জানান অধিকর্তা।
মোটরচালিত রিকশার দাপটে এমনিতেই নাজেহাল অবস্থা উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসতের। অলি-গলি তো বটেই, আদালতের নিয়ম অগ্রাহ্য করে ৩৪ এবং ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক ছাড়াও রাজ্য সড়কেও অবাধে বিচরণ করছে ওই সব যান। এলাকার মানুষের অভিযোগ, যত্রতত্র বিচরণের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে চলছে কান ফাটানো গান। এ ব্যাপারে বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘বারণ করা হলেও চালকেরা শুনছেন না। টোটো, মোটরচালিত ভ্যানরিকশা বন্ধের জন্য কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সভাপতি কল্যাণ রুদ্র এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘প্রতিটি ক্ষেত্রে শব্দবিধি রয়েছে। এমনকি, অ্যাম্বুল্যান্স কতটা জোরে সাইরেন বাজাবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। এ ক্ষেত্রে এই ভাবে প্রকাশ্যে সাউন্ড বক্স বাজানো অপরাধ।’’