বৃক্ষচ্ছেদন: কৈখালির ভিআইপি রোডের বুলেভার্ডের উপরে থাকা একের পর এক পাম গাছে কোপ। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
ভিআইপি রোডের সবুজায়নে করাত চালাল কে? উত্তর পেতে বাগুইআটি থানার দ্বারস্থ হল পূর্ত দফতর।
গত শনিবার কৈখালিতে ভিআইপি রোডের বুলেভার্ড থেকে অন্তত ২০টি পাম গাছ রাতের অন্ধকারে কাটা পড়েছে। পরের দিন, রবিবার সকালে গাছ কাটার ঘটনা আধিকারিকদের নজরে এলে তা দফতরের প্যাডে লিখিত ভাবে বাগুইআটি থানাকে জানানো হয়েছে। অতীতে ভিআইপি রোড সম্প্রসারণের সময়ে প্রচুর গাছ কাটা পড়েছিল। রাস্তার সম্প্রসারণের কাজে একটি গাছ কাটা পড়লে পাঁচটি গাছ লাগানোর নিয়ম। সেই নিয়মে নাস্তি! কারণ, বন দফতরের পরিসংখ্যানই বলছে, উত্তর ২৪ পরগনায় বিগত ১২ বছরে (চলতি বছরের জুন পর্যন্ত) রাস্তা সম্প্রসারণ বা উন্নয়নের কাজে ৩৭ হাজার ৭৪২টি গাছ রাস্তার দু’ধার থেকে হারিয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে সবুজ রক্ষায় যে টুকু চেষ্টা করা হয়েছিল, তা-ও এখন বিপন্ন। পূর্ত দফতরের অভিযোগ অন্তত সে কথাই বলছে।
২০১৬ সালে ভিআইপি রোডের বুলেভার্ডে পাম গাছগুলি লাগানো হয়। তিন বছরের পরিচর্যায় সেগুলি বেড়ে উঠেছিল। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, পূর্ত দফতর
লিখিত অভিযোগে জানিয়েছে, সবুজ রক্ষায় অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে ভিআইপি রোজের সবুজায়ন রক্ষা করা সম্ভব নয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী, রাত ১২টা ৫০ মিনিট থেকে দেড়টার মধ্যে গাছগুলি কাটা হয়েছে। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানান, মাস চারেক আগে ভিআইপি রোডে রঘুনাথপুরের কাছেও সবুজায়ন আক্রান্ত হয়েছিল।
যাদবপুরের অধ্যাপক তথা পরিবেশকর্মী অনুপম দেবসরকার বলেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে হলেও ভিআইপি রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কী ভাবে এত গুলি গাছ কাটা সম্ভব হল সেটা আমার কাছে রহস্যের। তবে উন্নয়নের নামে যে ভাবে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, সেখানে পূর্ত দফতর প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে গাছ কাটার বিহিত করতে চাইছে, এটাও স্বস্তির।’’
বস্তুত, ভিআইপি রোডের সৌন্দর্যায়ন রাজ্য সরকারের কাছেও অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ, বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে বিদেশের অতিথিরা ভিআইপি রোডের সৌন্দর্যায়নের প্রশংসা করেছেন। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে শহরে প্রবেশ পথে সৌন্দর্যায়নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বরাবরই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে একের পর এক গাছে কোপ পড়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন দফতরের কর্তারা। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, প্রতিটি গাছের জন্য মাসে রক্ষণাবেক্ষণে ১৭০০ টাকা খরচ হয়। গত দু’বছর ধরে দফতর সেই খরচ বহন করছে। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের করের টাকার গাছ কেটে নষ্ট করা হচ্ছে। তিন বছর ধরে যে পরিচর্যা করা হল তা জলে গেল। সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, গাছ কাটবে কেন?’’