TET

বাড়িতে হোক বা অনশন মঞ্চে, আন্দোলনের মধ্যেও চিন্তা সন্তানের

ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বাড়িতে রেখে আসা মায়েরা জানাচ্ছেন, আন্দোলনের মধ্যেও সারা ক্ষণ একটা পিছুটান অনুভব করছেন তাঁরা।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২২ ০৭:২৯
Share:

অবিচল: সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই হোক বা বাড়িতে রেখে, চাকরির দাবিতে লড়াইয়ের মঞ্চ ছাড়তে নারাজ এই মায়েরা। বৃহস্পতিবার, করুণাময়ীতে। নিজস্ব চিত্র।

ওঁরা সকলেই মা। কেউ বাড়িতে পাঁচ বছরের ছেলেকে রেখে এসেছেন। কেউ বা আড়াই বছরের মেয়েকে। যাঁদের আবার বাড়িতে দেখাশোনার কেউ নেই, তাঁরা সন্তানদের সঙ্গে নিয়েই এসেছেন ধর্না মঞ্চে। সেই শিশুরা মায়ের সঙ্গে ধর্না মঞ্চেই থাকছে সারা দিন। এমনকি, রাতেও মায়ের সঙ্গে সেখানেই শুয়ে পড়ছে।

Advertisement

ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বাড়িতে রেখে আসা মায়েরা জানাচ্ছেন, আন্দোলনের মধ্যেও সারা ক্ষণ একটা পিছুটান অনুভব করছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার ধর্না অবস্থানে একদম সামনের সারিতে বসে ছিলেন শুভ্রা মালাকার। তাঁর বাড়ি সোনারপুরের কাছে সুভাষগ্রামে। সেখানে রয়েছে ছ’বছরের ছেলে। শুভ্রা বলেন, ‘‘বাড়িতে অসুস্থ শ্বশুর-শাশুড়ি রয়েছেন। স্বামী কাজে বেরিয়ে যান সকালেই। আমি ধর্নায় চলে এসেছি। ছেলে খুব ছটফটে। অথচ, বাড়িতে ওকে দেখার মতো কেউ নেই। তাই আমি বা আমার স্বামী, যে যখন বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি, তখন বাইরে থেকে তালা দিয়ে যাচ্ছি। চাবি পড়শিদের কাছে রেখে আসছি। যাতে কোনও দরকারে দরজা খোলা যায়।’’ শুভ্রা জানান, ছেলে আগের রাতেই ফোনে জানতে চেয়েছিল, মা কবে ফিরবে? তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে এর কোনও উত্তর নেই। তবু ওকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছি, কালই ফিরব। কিন্তু নিয়োগপত্র না পাওয়া পর্যন্ত আমার বাড়ি ফেরার কোনও ইচ্ছে নেই।’’

শুভ্রার পাশে বসে থাকা সুস্মিতা দাস মণ্ডল জানালেন, তিনি বাড়িতে পাঁচ বছরের মেয়েকে রেখে এসেছেন। সকাল থেকেই তাঁর শরীর খারাপ লাগছিল। তাই দুপুরে রাস্তার উপরেই শুয়ে পড়েন। জানালেন, তাঁর বাড়ি যাদবপুরে। বাড়ি তো অনশনের জায়গা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তবু তিনি এখনই বাড়ি ফিরবেন না। মেয়ের জন্য মনখারাপ হচ্ছে ঠিকই। তবু ফিরবেন না। সুস্মিতা বললেন, ‘‘যতই কষ্ট হোক, নিয়োগপত্র নিয়েই বাড়ি ফিরব। মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করতে এই চাকরিটা খুব দরকার।’’

Advertisement

পাঁচ বছরের মেয়েকে বাড়িতে রেখেই হাওড়ার শ্যামপুকুর থেকে অনশন মঞ্চে এসেছেন স্বরূপা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘যখন শুনলাম, আমাদের চাকরির দাবিতে পর্ষদ অফিসের সামনে অনশনে বসা হবে, আমি বাড়ি থেকে সোজা অনশন মঞ্চে চলে এসেছি। এসে দেখেছি, কেউ কেউ তাঁদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়েই এসেছেন। কিন্তু মেয়ের কষ্ট হবে ভেবে ওকে আর আনিনি। তবে ওকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট তো হচ্ছেই।’’ স্বরূপা জানালেন, কষ্টটা আরও বেশি হচ্ছে, যখন তিনি দেখছেন, সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ, যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও নিয়োগ হচ্ছে না। তবে অনশন মঞ্চে বসেই মোবাইলে বার বার মেয়ের খবর নিচ্ছেন তিনি।

তিন বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই অনশন মঞ্চে এসেছেন কামারপুকুরের সুস্মিতা জানা। তিনি জানালেন, বাড়িতে ছেলেকে রেখে আসার মতো পরিস্থিতি নেই। বৃদ্ধ শ্বশুর ও শাশুড়ি ছাড়াও রয়েছেন অসুস্থ দিদিশাশুড়ি। তাঁর স্বামী এ দিন তাঁকে অনশন মঞ্চে রেখে কাজে চলে গিয়েছেন। সুস্মিতা বললেন, ‘‘বাড়িতে তিন বছরের ছেলেকে কে দেখবে? এখানেও ওকে চোখে চোখে রাখতে হচ্ছে। ওর খাবার জোগাড় করতে হচ্ছে। রাস্তায় রোদের মধ্যে বসে থেকে ওর বার বার জল তেষ্টা পাচ্ছে। তবে আমার সঙ্গে অন্য অনশনকারীরাও ওর খেয়াল রাখছেন।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের পানিপারুল থেকে তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছেন বীথিকা নায়েক। তিন জনের পরিবার। স্বামীকে তো কাজে বেরোতেই হবে। তাই মেয়েকে অনশন মঞ্চে নিয়ে আসা ছাড়া উপায় ছিল না। গত দু’দিন ধরে মেয়েকে নিয়ে দিনের বেলার পাশাপাশি রাতেও খোলা আকাশের নীচে রাস্তায় বসে আছেন তিনি। মেয়েকে কোলের কাছে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। বীথিকা বলেন, ‘‘রাতে মাঝেমধ্যে ঘুম ভেঙে দেখি, মেয়ে জেগে আছে। অচেনা পরিবেশ তো, তাই বোধহয় ঘুম হচ্ছে না ঠিক মতো। তখন আবার ঘুম পাড়িয়ে দিই। মেয়েটা সঙ্গে আছে, এত কষ্টের মধ্যে এটা ভেবেই কিছুটা শান্তি পাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement