আত্মবিশ্বাসী: পরীক্ষা দেওয়ার আগে শিক্ষার্থীরা। নিজস্ব চিত্র
সরকারি হাসপাতালে হাফ ডজন ‘ব্ল্যাক বেল্ট’! এখন অপেক্ষা শুধু ফল প্রকাশের। ডাক্তারি পড়াশোনা এবং সরকারি হাসপাতালে রোগী সামলানোর মধ্যেই গত দু’বছর ধরে চলছিল তাইকোন্ডো-র প্রশিক্ষণ। রবিবার কোরীয় মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তিন জন জুনিয়র চিকিৎসক, দু’জন তৃতীয় বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়া এবং এক জন শিক্ষক-চিকিৎসক। সব ঠিক থাকলে ডাক্তারি বিদ্যার পাশাপাশি মাস দেড়েক পরে ওই সম্মানও অর্জন করবেন চিকিৎসক ও ভাবী চিকিৎসকেরা।
দু’বছর আগের এই মার্চেই ডেপুটি সুপার দ্বৈপায়ন বিশ্বাসের উদ্যোগে কোরীয় মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল এনআরএসে। তিনি আবার চিকিৎসকের পাশাপাশি তাইকোন্ডোয় মাস্টার এবং ‘সেকেন্ড ডান’ ব্ল্যাক বেল্ট। ২০১৭ সালে পঞ্চাশ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হলেও মাঝপথে অনেকে হাল ছেড়ে দেন। অধ্যবসায় অটুট রেখে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যান এক্স-রে ও আলট্রাসাউন্ডের শিক্ষক-চিকিৎসক তৌসিফ মির্জা, জুনিয়র চিকিৎসক প্রীতম রহমান, আকাশ মণ্ডল, ইন্দ্রায়ুধ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃতীয় বর্ষের ডাক্তারি ছাত্রী কৌশিকী রমন ও ঋতুপর্ণা মুখোপাধ্যায়। রবিবার অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের অডিটোরিয়ামে ডেপুটি সুপার ছিলেন পরীক্ষক। সঙ্গে গ্র্যান্ডমাস্টার ও ‘সেভেন ডান’ ব্ল্যাক বেল্ট প্রদীপ্ত রায় এবং মাস্টার রুমা রায়চৌধুরী। যিনি ‘ফিফথ ডান’ ব্ল্যাক বেল্ট। তাঁদের সামনেই প্রীতম, আকাশ, কৌশিকী, ঋতুপর্ণারা স্ট্যামিনা টেস্ট, ফুমসে, সেলফ ডিফেন্স, ব্রেকিং, স্প্যারিংয়ের ধাপ পার করার পরীক্ষা দেন। জমা দিতে হয় থিসিসও।
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে প্রায়ই রোগীর পরিজনদের মারমুখী মেজাজের সামনে পড়েন চিকিৎসকেরা। ডাক্তারবাবুদের কলার চেপে ধরা, ধস্তাধস্তি, মারামারি— কিছুই বাদ যায় না। প্রতি আক্রমণের জন্য এই প্রশিক্ষণ কি না, সে বিতর্ক আগেই তৈরি হয়েছিল। ডেপুটি সুপার সেই সম্ভাবনা নস্যাৎ করে বলেন, ‘‘তাইকোন্ডোর অর্থ পাল্টা মার নয়। এখানে হাতের
সামান্য কায়দায় কাউকে আঘাত না করেই কব্জি ছাড়ানো যায়। মানসিক স্থিরতা দেয় তাইকোন্ডো।’’
মাস তিনেক আগে জরুরি বিভাগে গন্ডগোলের জেরে কর্মবিরতি করার ব্যাপারে অনড় ছিলেন ইন্টার্নরা। তখন তাইকোন্ডোর শিক্ষার্থীরাই ইন্টার্নদের বুঝিয়ে নিরস্ত করেন বলে জানান ডেপুটি সুপার। তাঁর কথায়, ‘‘তাইকোন্ডো হল অঙ্কের মতো। সূত্র মেনে চললে এক জন কম শক্তির মানুষ তাঁর দ্বিগুণ শক্তির মানুষকেও পরাস্ত করতে পারেন। ব্ল্যাক বেল্টের পরীক্ষায় ইট বা কাঠের বোর্ড ভাঙতে হয়। এটা কিছুই নয়। লক্ষ্য স্থির রেখে ঠিক কোথায় আঘাত করলে কাজ হাসিল হবে, তা রপ্ত করতে হয়। তাইকোন্ডো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ করতে শেখায়।’’
জুনিয়র চিকিৎসক প্রীতম বলেন, ‘‘আগে একসঙ্গে অনেক কাজ করতে হলে বিচলিত হয়ে পড়তাম। এখন মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে শিখেছি।’’ আর এক জুনিয়র চিকিৎসক কৌশিকীর
কথায়, ‘‘মেয়েদের জন্য আত্মরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আবার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হওয়ার চাপও প্রচুর। তাইকোন্ডো শেখার পরে পরিস্থিতি যা-ই হোক, সামলে নেওয়ায় আমি আত্মবিশ্বাসী।’’
সাধে কি আর তৃপ্তির হাসি হাসছেন কৌশিকীদের শিক্ষক ও ব্রুসলির ভক্ত ডেপুটি সুপার।