ঘুরল সপ্তাহ, আশা ও আশঙ্কায় বাগড়ি

পোড়া বাড়ির ঠিক উল্টো দিকের ফুটপাত। টেবিল পেতে, তার উপরে ডালা বসিয়ে চার কোনায় চারটি লাঠি বাঁধতে শুরু করেছেন এক ব্যক্তি। খানিক তফাতে চওড়া প্লাস্টিক নিয়ে ওই ডালার উপরে লাঠির আগায় লাগাবেন বলে তোড়জোড় করছেন আর এক জন! মাটিতে ফেলা বস্তা থেকে প্লাস্টিকে মোড়া একের পর এক বেল্ট বার করে যত্নের সঙ্গে ডালায় রাখছেন এক মহিলা।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২১
Share:

বাগড়ি মার্কেটের সামনে ফুটপাতে শুরু কেনাবেচা

পোড়া বাড়ির ঠিক উল্টো দিকের ফুটপাত। টেবিল পেতে, তার উপরে ডালা বসিয়ে চার কোনায় চারটি লাঠি বাঁধতে শুরু করেছেন এক ব্যক্তি। খানিক তফাতে চওড়া প্লাস্টিক নিয়ে ওই ডালার উপরে লাঠির আগায় লাগাবেন বলে তোড়জোড় করছেন আর এক জন! মাটিতে ফেলা বস্তা থেকে প্লাস্টিকে মোড়া একের পর এক বেল্ট বার করে যত্নের সঙ্গে ডালায় রাখছেন এক মহিলা।

Advertisement

খানিক পরে ওই ব্যক্তিদেরই এক জন হাঁকডাক শুরু করলেন, ‘‘একশো টাকা, দেড়শো টাকা!’’ এক মহিলা একটি বেল্ট হাতে তুলে নিয়ে বললেন, ‘‘বাগড়ির মাল? পোড়া নেই তো!’’ মহিলাকে আশ্বস্ত করে বিক্রেতার দাবি, ‘‘পোড়া দেখাতে পারলে টাকা ফেরত।’’ জানালেন, আগুন একটু কমতেই গত বুধবার এই সব জিনিসপত্র বার করে নিয়েছেন। মহিলা আশ্বস্ত হলেন না। হাঁটা দিলেন পাশের দোকানে!

বাতাসের পোড়া গন্ধ এখনও যায়নি। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে ধীরে ধীরে এ ভাবেই স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে ক্যানিং স্ট্রিট। বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগার এক সপ্তাহ পরে রবিবারই প্রথম দোকান খুললেন ওই এলাকার বেশ কিছু ব্যবসায়ী। বিপদ-আশঙ্কার মধ্যে এ দিন ফের আগের মতোই ডালা পেতে শুরু হয়ে গেল ফুটপাতের ব্যবসা। যদিও প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছে, বাগড়ি-কাণ্ডে ডালা থেকেই ছড়িয়েছিল আগুন। ফলে ওই এলাকায় ডালার ব্যবসা আদৌ চলতে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল। এ দিন অবশ্য দেখা গেল, ডালার ব্যবসা চলছে বহাল তবিয়তেই। মহম্মদ আফরোজ নামে এক ডালা-ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘দোকান করতে দেবে না বললেই হল? বিপদ তো সবেতেই থাকে।’’ মহম্মদ জাহাঙ্গির নামে আর এক ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘সব দোষ ডালার নয়। বাগড়ি মার্কেটের অবস্থাও কম ভয়ঙ্কর ছিল না।’’

Advertisement

ডালা ব্যবসা শুরু হলেও বাগড়ি মার্কেট খোলার সম্ভবনা এখনও বিশবাঁও জলে। এ দিনও জোর-কদমে মার্কেটের ভষ্মীভূত সামগ্রী সরানোর কাজ করেছে কলকাতা পুরসভা। এক পুর আধিকারিক জানান, সোমবার একতলার যাতায়াতের পথের সব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলা যাবে। যদিও দ্রুত মার্কেট চালু করতে উদগ্রীব ব্যবসায়ীরা আজ, সোমবার রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। বিকেল তিনটেয় বাগড়ি মার্কেটের সামনে থেকে ব্যবসায়ীদের মিছিল শুরু হয়ে রাজভবন পর্যন্ত যাবে।

পোড়া বর্জ্য সরানোর কাজ চলছে পুরোদমে। রবিবার বিকেলে, বড়বাজারে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

‘বাগড়ি মার্কেট সেন্ট্রাল কলকাতা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি আশুতোষ সিংহ বলেন, ‘‘পুজোর আগে দ্রুত মার্কেট চালু করতে চাই। সরকারের কাছে আবেদন, আমাদেরই বাগড়ি মার্কেট সংস্কারের অনুমতি দেওয়া হোক।’’ জয়দেব সাহা নামে এক ব্যবসায়ী আবার বলেন, ‘‘মার্কেটে ডি ব্লকের মতো বেশ কিছু অংশ ভালই আছে। সেগুলি আমরাই সারিয়ে প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করতে পারি। মুখ্যমন্ত্রী শহরে ফিরলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’ মার্কেটের কোন অংশ থেকে কাজ শুরু করা যায়, এ দিনই তার তদারকিও শুরু করে দিয়েছেন আশুতোষবাবুরা।

এক সপ্তাহ পরে এ দিন নিজের মিষ্টির দোকান খুলতে পেরেছেন দিলীপকুমার গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘মার্কেট পুরো ভেঙে ফেলতে দেওয়া যাবে না। ব্যবসায়ীরা বড় প্রতিবাদে নামব। মার্কেট ভাঙতে গেলে আমাদের দোকান ফের বন্ধ হয়ে যাবে!’’ একই মত ব্যাগের ব্যবসায়ী মুস্তাক আহমেদের। এখন তাঁর একটাই কথা, ‘‘দোষ কার, পুলিশ খোঁজ করুক। আমাদের ব্যবসাটা করতে দিক। পরিবার নিয়ে এমনিতেই পথে বসে কেটেছে এক সপ্তাহ। আর নয়!’’

এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। আশা-আশঙ্কায় এখন শুধু ফেরার লড়াই বাগড়ি-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement