—প্রতীকী ছবি। Sourced by the ABP
রটওয়েলার, পিটবুল, ম্যাস্টিফের মতো একাধিক বিদেশি প্রজাতির কুকুরের বিক্রি ও প্রজননে কেন্দ্র নিষেধাজ্ঞা জারির পরে এ নিয়ে রাজ্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরকে বুধবার চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় পশুপালন মন্ত্রক। তবে পশুপ্রেমীদের মতে, এমনিতেই ‘মোহ’ কেটে গেলে পোষ্যদের ফেলে যাওয়া হচ্ছে রাস্তায়। কখনও বেআইনি ভাবে ব্যবসা করতে বিদেশি কুকুরকে দিয়ে প্রজনন করানো হচ্ছে। তাই কেন্দ্রীয় এই নিষেধাজ্ঞার পরে বিদেশি কুকুরদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল বলেই মনে করছেন পশুপ্রেমীদের একাংশ।
নিয়মানুযায়ী, পুরসভার ওয়েবসাইটে ঢুকে বাড়িতে পোষা বিদেশি কুকুরের লাইসেন্স নথিভুক্ত করাতে হয়। কিন্তু অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরসভাকে অন্ধকারে রেখেই চলে বিদেশি কুকুরের প্রজনন। পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘শহরের বসতি এলাকায় বিদেশি কুকুর পুষে প্রজনন করানো হলেও তার ঠিকঠাক তথ্য পুরসভার কাছে নেই।’’ প্রজনন করিয়ে অসুস্থ রটওয়েলারকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়ার নজির অতীতে দেখেছিল শহর। তাই অনেক পশুপ্রেমীর প্রশ্ন, ‘‘শহরে ইতিমধ্যেই যে সমস্ত জায়গায় রটওয়েলার, পিটবুল বা ম্যাস্টিফের প্রজনন করানো হচ্ছে, তাদের ঠিকানা কোথায় হবে?’’ বৃহস্পতিবার প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব বিবেক কুমার বলেন, ‘‘চিঠি সবে পেয়েছি। কেন্দ্রীয় নির্দেশ কী ভাবে কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে সব পক্ষকে নিয়ে শীঘ্রই আলোচনায় বসব।’’
এ দিকে, পোষ্যকে ফেলে যাওয়ার মতো ‘অপরাধের’ ক্ষেত্রে শাস্তি বলতে সর্বনিম্ন জরিমানা ১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। তিন বছরের মধ্যে একই অপরাধে শাস্তি হতে পারে তিন মাসের হাজতবাস ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা জরিমানা! প্রশ্ন উঠেছে, এই লঘু শাস্তির কারণেই কি পরিস্থিতি বদলায় না?
পশুপ্রেমীদের একাংশের দাবি, পশুপাখির উপরে নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইনে (প্রিভেনশন অব অ্যানিম্যাল ক্রুয়েলটি অ্যাক্ট, ১৯৬০) এখনও পশুর দামের উপরে অপরাধ নির্ধারিত হয়। তাই নির্ভর করতে হয় ভারতীয় দণ্ডবিধির উপরে। এ ক্ষেত্রে কিছু কড়া সাজার সুযোগ থাকলেও সচেতনতা প্রায় নেই-ই। এক পশুপ্রেমীর মন্তব্য, ‘‘কড়া হাতে মামলা করবে যারা, সেই পুলিশও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তৎপর নয়।’’ লালবাজার যদিও জানিয়েছে, এ নিয়ে থানায় সচেতনতা কর্মসূচির বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।
‘পিপল ফর দি এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস’ (পেটা)-এর তরফে সালোনি সাকারিয়া জানান, ‘প্রিভেনশন অব অ্যানিম্যাল ক্রুয়েলটি অ্যাক্ট, ১৯৬০’ অনুযায়ী, পশুর দায়িত্বে থাকা কোনও ব্যক্তি যদি তাকে পর্যাপ্ত খাবার, জল, আশ্রয় না দেন এবং ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ছেড়ে চলে যান, তা হলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘প্রিভেনশন অব অ্যানিম্যাল ক্রুয়েলটি’ আইনের ১১(১)(আই) এবং ১১(১)(এইচ) ধারায় মামলা করা যায়। রাস্তায় ছাড়ার কারণে পশুটি রোগাক্রান্ত হতে পারে। দৃষ্টিহীন বা রোগাক্রান্ত পশুকে রাস্তায় ছাড়লে অন্যদেরও যে সমস্যা হতে পারে, তারও উল্লেখ রয়েছে আইনে। সালোনি বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে নন-কগনিজ়িবল মামলা হবে। অর্থাৎ, পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া অভিযুক্তকে ধরতে না পারার যুক্তি দিতে পারে।’’ পশুপ্রেমীরা যদিও বলছেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৫ ধারা অনুযায়ী আদালত মনে করলে কোনও ‘নন-কগনিজ়িবল’ অপরাধকে ‘কগনিজ়িবল’ (ধর্তব্যে আনার মতো অভিযোগ) ধরে নিয়ে এফআইআর রুজু এবং তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে।
পশুপাখির উপরে নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মী তথা আইনজীবী স্নেহময় দত্ত বলেন, ‘‘৪২৯ ধারায় মামলা করা যায়। ৫০ টাকা বা তার বেশি দামে বিক্রি হয়, এমন পশুকে জেনেবুঝে আঘাত করলে এই ধারায় পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। যোগ করা যায় ৫১১ নম্বর (জেনেবুঝে অপরাধ করা) ধারাও। সবটাই বিচার্য পশুর দামের উপরে!’’