পুরুষ দিবসে এমন মিম ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
দিনটা আর তত অচেনা নয়! নারী দিবসের ধাঁচে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস জুড়েও এখন কেনাকাটি আর আকর্ষক ছাড়ের ধুম। সেই সঙ্গে পৌরুষের চিরকেলে ধারণাটিকেও কিন্তু প্রশ্ন করার প্রবণতা ইদানীং মালুম হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে কলকাতা দেখেছে, সল্টলেক থেকে নিউ টাউনে পুরুষদের বাইক-র্যালি কিংবা গড়িয়াহাটে হকার থেকে শুরু করে পথচারীদের হাতে ব্যান্ড পরিয়ে সচেতনতার নানা কর্মসূচি। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসেও গড়িয়াহাট থানায় পুরুষদের অভিযোগ ভাল ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার দাবিতে কয়েক জন পুরুষ অধিকার কর্মী শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু এর উল্টো পিঠে পুরুষদের দিনের মঞ্চটিতে লিঙ্গসাম্য নিয়ে সচেতনতার ডাক দিতেও মুখ খুলছেন কেউ কেউ।
নানা ধরনের রান্না করতে ভালবাসেন, বেঙ্গালুরুতে প্রবাসী কলকাতার এক তরুণের শেয়ার করা একটি পোস্টে পৌরুষের তথাকথিত ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন। ‘প্রিয় পুরুষ’ সম্বোধনে তাতে লেখা, ‘তুমি কালো বা নীলের বদলে নরম রং ভালবাসলে ক্ষতি নেই, কষ্ট হলে চাইলে কাঁদতেও পারো, জেনো রান্নাবান্নায় ঝোঁক থাকাটা দোষের কিছু নয়, কোনও মেয়ের বদলে কখনও অন্য ছেলের প্রেমেও পড়তে পারো তুমি!’
এ বিষয়ে কী বলছেন, পুরুষ অধিকার রক্ষার কর্মীরা? তাঁদের মধ্যেও আবার নারীরা রয়েছেন। পুরুষ দিবসের নানা কর্মসূচির সংগঠক নন্দিনী ভট্টাচার্য যেমন বলছিলেন, ‘‘আমি খুব খুশি মেয়েরাও অনেকে তাঁদের প্রিয় পুরুষ বাবা-ভাই, প্রেমিককে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন, কিংবা পুরুষ দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন! পুরুষদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও তাঁরা করছেন।’’ কিন্তু প্রিয় জনের প্রতি এই মুগ্ধতা প্রকাশই বা কিসে এত অভিনব? নন্দিনী বলছেন, ‘‘আমরা চাই, নারীদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট কিছু আইন বদলাক। অন্য লিঙ্গের মানুষও তো ধর্ষণের শিকার হন।’’ বালির কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের মতো কেউ কেউ শামিল হয়েছেন, নিজেদের ‘মানব-বই’ হিসেবে মেলে ধরার অনুষ্ঠানে। পুরুষের প্রতি গৃহহিংসার আখ্যানও শোনাচ্ছেন তাঁরা।
পেশায় আইনজীবী, রূপান্তরকামী পুরুষ অঙ্কন বিশ্বাসও মনে করেন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কিছু ক্ষেত্রে জন্মগত পুরুষদের প্রতিও রীতিমতো নির্মম। চাকরি বা পড়াশোনার চাপে ছেলেদের আত্মহননের বিপদও খুব উদ্বেগের। কিন্তু তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমাদের বাঁধা গতের ধারণায় ক’জন মানতে পারবেন, শরীরে ততটা পুরুষালি না হয়েও কেউ মনের দিক থেকে পুরুষ হতে পারেন? শরীরে মেয়ে মনে পুরুষ এক জন যাঁর পিরিয়ড হয়, তিনিও যে পুরুষ, এটা বোঝেন ক’জন? পুরুষ দিবসের গল্পে এই অন্য রকম পুরুষরা কি ঠাঁই পাচ্ছেন?’’
আপাতত কলকাতা যা দেখছে, তাতে চোখে পড়ছে, শহরের হাসপাতালে পুরুষদের জন্য ছাড়, বরাহনগরের গয়নার দোকান থেকে নিউ টাউনের ট্যাটু আঁকার বুটিকে, পুরুষ ক্রেতার বিশেষ ছাড়! ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা নারী দিবসেও যা হয় আর কী! ‘‘পুরুষ দিবস নিয়ে আমার তেমন ঝোঁক নেই, নারী দিবসের মতো পুরুষ দিবসের অত ইতিহাস-টিতিহাসও নেই,’’ বলছিলেন নারী অধিকার কর্মী অঞ্চিতা ঘটক। তবে নারী অধিকার বা লিঙ্গ সাম্যের লড়াইয়েও পুরুষকে শরিক করায় বিশ্বাসী তিনি। তাঁর কথায়,
‘‘আমি বরং পুরুষ দিবসের ধারণাটা পাল্টাতে উৎসাহী। ছেলেদের বাড়ির কাজ করার গুরুত্ব বোঝানো থেকে কথায় কথায় গালিগালাজে মেয়েদের খামোখা অসম্মান করার প্রবণতা ভাল নয়, এটাও ছেলেদের শেখানো জরুরি।’’