প্রতীকী ছবি।
আগামী ১৪ তারিখ ইদ। তার আগে রমজান মাসে কলকাতা-সহ রাজ্যের অধিকাংশ মসজিদেই কোভিড-বিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। মসজিদে নমাজ পড়তে আসার সময়ে দূরত্ব-বিধি না মানা এবং মাস্ক না পরার মতো অভিযোগও রয়েছে। এমতাবস্থায় সংক্রমণ রুখতে মুসলিম সমাজকে আরও সচেতন হওয়ার এবং কঠোর ভাবে কোভিড-বিধি মেনে চলার আর্জি জানাচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিরা। এর পাশাপাশি গত বছরের মতো এ বারেও মসজিদে কোভিড-বিধি মেনে চলার জন্য প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছেও আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা। যদিও ইতিমধ্যে চিঠি দিয়ে মসজিদে কোভিড-বিধি মেনে চলার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে কলকাতা পুরসভা।
রেড রোডে ইদের নমাজের ইমাম ফজলুর রহমান বলছেন, ‘‘এখন মসজিদে ৫০ জনের বেশি ঢুকতে দেওয়া ঠিক নয়। গত বছরের তুলনায় এ বার করোনার প্রকোপ অনেকটাই বেশি। এ কথা মাথায় রেখে মসজিদে ভিড় না করে নিজের নিজের বাড়িতে নমাজ পড়াই ভাল।’’ ফজলুর সাহেবের আরও আবেদন, ‘‘মসজিদে ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। গত বছর মার্চে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পরে সমস্ত মসজিদে প্রবেশের উপরে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। এ বারও তা-ই করা উচিত। দেশের স্বার্থে ও সংক্রমণ রুখতে সকলকে বাড়িতে বসেই নমাজ পড়ার আর্জি জানাচ্ছি।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ওসমান গনি বলছেন, ‘‘কোরানে ধর্মের আগে কর্মের কথাই বলা আছে। কোরানে কোথাও বলা নেই, মসজিদে গিয়েই নমাজ পড়তে হবে। এখন করোনার থাবা মারাত্মক। সমস্ত মুসলিম ভাইদের কাছে অনুরোধ, আপনারা এই অতিমারির সময়ে বাড়িতে থেকেই নমাজ আদায় করুন।’’
কলকাতার অধিকাংশ মসজিদের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে যে, তারা কোভিড-বিধি মেনে চলতে নোটিস দিলেও মসজিদে আসা অধিকাংশ মানুষই সে কথা বিশেষ মানছেন না। মাস্ক পরা বা দূরত্ব-বিধি মেনে চলার তোয়াক্কাই করছেন না কেউ কেউ। নাখোদা মসজিদের কো-ট্রাস্টি নাসের ইব্রাহিমের অভিযোগ, ‘‘মসজিদ নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। নমাজের সময়ে মসজিদে করোনা-বিধি মেনে চলার জন্যেও বার বার মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মাস্ক থাকলেও অধিকাংশের ক্ষেত্রেই তা থুতনিতে নামানো। মসজিদ কমিটির লোকজনকে দেখলেই মাস্ক নাকের উপরে তুলে দিচ্ছেন। এর পরে আমরা কী করতে পারি!’’
ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের কো-ট্রাস্টি তথা টিপু সুলতানের প্রপৌত্র শাহিদ আলমের আবেদন, ‘‘গত বছরের মতো প্রশাসনকে কড়া হতে হবে। আমাদের কথা কেউই শুনছেন না, মাস্ক পরছেন না। দূরত্ব-বিধিও মানছেন না। গত বছরে সরকারি তরফে ধর্মীয় স্থানে প্রবেশে বিধিনিষেধের মতো এ বারেও কিছু একটা করতেই হবে।’’ সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামানের আর্জি, ‘‘দয়া করে সবাই করোনা-বিধি মেনে চলুন। এখন প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন। সে কথা মাথায় রেখে যতটা সম্ভব ঘরে বসেই নমাজ পড়ুন। মসজিদে গেলেও নিয়ম মেনে চলুন।’’ ফুরফুরা শরিফের তরফে ত্বহা সিদ্দিকি বলেন, ‘‘মাস্ক পরুন। শিশু, বয়স্করা দয়া করে মসজিদে যাবেন না। করোনা-বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলুন। না-হলে খুবই বিপদ।’’
ইতিমধ্যেই কোভিড-বিধি মেনে চলার জন্য শহরের বিভিন্ন মসজিদ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম। মসজিদ চত্বরে যাতে বেশি ভিড় না হয়, তা নিশ্চিত করতে ছোট ছোট দলে ভাগ করে দফায় দফায় নমাজ পড়ার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। দূরত্ব-বিধি মেনে চলার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর নমাজ পড়ার জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।