রোমাঞ্চের জন্য ছিনতাই, দাবি ৩ ধৃতের

মোটরবাইকে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কারও ব্যাগ নিয়ে পালানো। বা কারও গলার চেন ছিনতাই। কখনও বা মোবাইল, এমনকী টাকাও। অভাবের দায় নয়। পুরোটাই অ্যাডভেঞ্চার, নিছক মজা। বৃহস্পতিবার ধরা পড়া অবস্থাপন্ন পরিবারের তিন তরুণ-তরুণীর এমন কথা শুনে হতবাক পুলিশই। গত ক’মাসে বেশ কয়েকটি ছিনতাই হয়েছে সল্টলেকে। প্রতিটি ঘটনাতেই একটি মোটরবাইক ও এক তরুণীর যুক্ত থাকার সূত্র পেয়েছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৭
Share:

মোটরবাইকে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কারও ব্যাগ নিয়ে পালানো। বা কারও গলার চেন ছিনতাই। কখনও বা মোবাইল, এমনকী টাকাও। অভাবের দায় নয়। পুরোটাই অ্যাডভেঞ্চার, নিছক মজা। বৃহস্পতিবার ধরা পড়া অবস্থাপন্ন পরিবারের তিন তরুণ-তরুণীর এমন কথা শুনে হতবাক পুলিশই।

Advertisement

গত ক’মাসে বেশ কয়েকটি ছিনতাই হয়েছে সল্টলেকে। প্রতিটি ঘটনাতেই একটি মোটরবাইক ও এক তরুণীর যুক্ত থাকার সূত্র পেয়েছে পুলিশ। সাম্প্রতিক ঘটনাটি ঘটে আইএসএলের উদ্বোধনের দিনে। যে দিন যুবভারতীতে তারকাদের মেলা, ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা এবং জনতা সামলাতে ব্যস্ত ছিল পুলিশ। সেই সুযোগে এডি ব্লকের একটি বাড়ির সামনে থেকে এক মহিলার ব্যাগ ছিনিয়ে পালান তিন তরুণ-তরুণী। এর পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ওই এলাকার একটি সিসিটিভি-ফুটেজও খতিয়ে দেখা হয়। এ দিনও একটি হন্ডা সিটি গাড়িতে ওই তিন তরুণ-তরুণী সল্টলেকে ঘুরছিলেন। বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে করুণাময়ী মোড়ের কাছ থেকে শিবম ঘোষ, শুভঙ্কর দাস ও টুম্পা ঘোষ নামে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।

টুম্পা কলকাতা ও সল্টলেকের নামী স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। সল্টলেকে তাঁদের দোতলা বাড়ির একতলায় একটি দোকান রয়েছে। টুম্পাদের চর্মজাত দ্রব্যের পারিবারিক ব্যবসা। বেলেঘাটার বাসিন্দা শিবমের চারতলা বাড়ি, মিষ্টির দোকান। এ দিন যে গাড়িতে তিন জন ধরা পড়ে, সেটিও তাঁদেরই। এই দু’জনের তুলনায় বেলেঘাটার বাসিন্দা শুভঙ্কর আর্থিক ভাবে খানিকটা পিছিয়ে। ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি শুভঙ্কর এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতেন। মাস দুই আগে তাঁর চাকরি চলে যায়। পুলিশ জানায়, একই এলাকায় থাকার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরেই শিবম ও শুভঙ্করের বন্ধুত্ব ছিল। টুম্পার সঙ্গে শিবমের আলাপ ও বন্ধুত্ব বিভিন্ন নৈশ পার্টিতে যাওয়ার সূত্রে।

Advertisement

ধৃত তিন জনের মধ্যে দু’জনেরই টাকার অভাব নেই। তা হলে কী ভাবে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলেন তাঁরা? প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ জানায়, ওই তরুণ-তরুণীরা বলেছেন, প্রথম দু’টি ঘটনা ঘটিয়ে তাঁরা মজা পেয়ে যান। তীব্র গতিতে মোটরবাইক ছুটিয়ে ছিনতাইয়ের মধ্যে রোমাঞ্চ, মজা ভরপুর। তা ছাড়া, তাঁরা যে জীবনযাপনে অভ্যস্ত, তার জন্য অনেক টাকার দরকার। সব সময়ে বাড়ি থেকে টাকা মেলে না। তাই অপরাধের পথে পা বাড়ান তাঁরা।

তবে ধৃতদের সব কথা এখনও মানতে নারাজ তদন্তকারীরা। এর পিছনে কোনও চক্র রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। পুলিশ জানায়, প্রতি ক্ষেত্রে শিবম মোটরবাইক চালাতেন, পিছনে থাকতেন টুম্পা ও শুভঙ্কর। ছিনতাই করতেন কখনও টুম্পা, কখনও বা শুভঙ্কর। সল্টলেকের বিজে ব্লক, সিটি সেন্টারের কাছে, কেষ্টপুর খাল ও এডি ব্লকের ছিনতাইয়ের ঘটনায় ধৃতেরা দোষ কবুল করেছেন বলে পুলিশের দাবি।

বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “কী ভাবে ওই তরুণ-তরুণীরা অপরাধে যুক্ত হলেন, তা দেখা হচ্ছে।” সল্টলেকের এক পুলিশকর্তার দাবি, কিছু ঘটলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

চার দিনের মাথায় ছিনতাইবাজদের ধরা হল। নজরদারি না থাকলে হত না। আগেও কয়েকটি ঘটনা রুখে দেওয়া গিয়েছে। ভবিষ্যতে নজরদারি আরও জোরদার হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement