কী ভাবে চোর আলমারি খুলে হাতিয়েছিল নগদ টাকা। দেখাচ্ছেন সমীরবাবু।
সকাল সাড়ে সাতটা। হঠাৎই বেডরুম থেকে স্ত্রী সুচেতার চিৎকার। তড়িঘড়ি সেই ঘরে দিকে যেতে গিয়ে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সমীর সরকার দেখলেন এক যুবক বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পেরেছিলেন, কোনও একটা বিপদ ঘটে গিয়েছে। কিন্তু নীল-সাদা ফুল শার্টের যুবককে থামাতে পারেননি সমীর বাবু। আতঙ্কিত স্ত্রীয়ের কাছ থেকে জানতে পারলেন, বেডরুমে ঢুকে গলার হার ছিনতাই করে পালিয়ে গেল ছেলেটা। শুধু সোনার হারের উপর দিয়ে অবশ্য যায়নি। আকস্মিকতার ঘোর কাটার পর অধ্যাপক দম্পতি বুঝতে পারলেন স্মার্ট ফোন, ঘড়ি, নগদ টাকাও গিয়েছে।
সল্টলেকের জিসি ব্লকের বাসিন্দা সমীর সরকার এবং সুচেতা সরকার পুলিশে খবর দেন। ১৪ জুলাই সকালে ঘটেছিল ঘটনাটা। খবর পেয়েই বিধাননগর দক্ষিণ থানা থেকে সরকার পরিবারের বাড়িতে পৌঁছয় পুলিশ। ঘটনার বিবরণ শুনে এলাকার ছ-সাত জন দাগি ছিনতাইবাজের ছবিও সরকার দম্পতিকে দেখানো হয়। তবে তাদের কারওর সঙ্গেই নীল-সাদা ফুলশার্ট পরিহিত যুবকের মিল খুঁজে পাননি সমীর বাবুরা।
প্রায় ৩৫ বছর ধরে সস্ত্রীক ওই বাড়িতেই থাকেন সমীর সরকার। বছর আশির সমীরবাবু সাহা ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। স্ত্রী সুচেতাদেবী গোখেল কলেজে পড়াতেন। একমাত্র ছেলে দীপ্তভাষ হিউস্টনে কর্মরত। সমীর বাবুর কথায়, ‘‘সকালবেলায় ঘরের ভিতরে ঢুকে চুরি করে নিয়ে গেল, সন্ধেবেলায় কী ঘটতে পারে, ভাবতেই পারছি না!’’
আরও পড়ুন: প্রোমোটারের হাত থেকে বাঁচান, চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে
সমীর বাবু জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে ঢোকা-বোরনোর জন্য চারটি দরজা আছে। কিন্তু, মূলত সামনের একটা এবং পিছনের একটা দরজাই খোলা হয়। পুরসভার গাড়িতে ময়লা ফেলার জন্য খোলা হয় পিছনের দরজা। সমীর বাবুর কথায়, ‘‘আর পাঁচ দিনের মতো সে দিনও ভোর ছ’টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠেছিলাম। পিছনের দরজা খুলে রেখে ছিলাম পুরসভার গা়ড়ি এলে ময়লা ফেলব বলে। খোলা ছিল সামনের দরজাও। হঠাৎই শোবার ঘর থেকে চিৎকার করেন আমার স্ত্রী।’’
সে দিনের ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন সুচেতাদেবী।
৭২ বছরের সুচেতা দেবী বললেন, ‘‘তখন খাটে শুয়ে ছিলাম। গলার হারে টান পড়তেই চোখ খুলে যায়। দেখি বছর পঁচিশের এক যুবক সেটা টানার চেষ্টা করছে।’’ সুচেতা দেবী জানান, তিনি দুষ্কৃতীকে ধরার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু, তাঁকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইবাজ। গলার হারে টান দেওয়ার আগেই ওই দুষ্কৃতী ঘড়ি, মোবাইল হাতিয়েছিল বলে সরকার দম্পতির দাবি। পাশের ঘরের আলমারি খুলে হাতিয়েছিল নগদ টাকা।
সল্টলেকে চুরির ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু, সকালে বাড়ির ভিতর ঢুকে এ ভাবে চুরির ঘটনা নিঃসন্দেহে বিরল। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জিসি ব্লকে। প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। সল্টলেকের অনেক বাড়িতেই এখন শুধু প্রবীণ দম্পতিদের বাস। কর্মসূত্রে বা অন্য কোনও কারণে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম এখন রাজ্য বা দেশের বাইরে থাকেন। জিসি ব্লকের ঘটনা সেই সবক’টি পরিবারের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
ছবি: শৌভিক দে