পুজোর ধুমে হারিয়ে গিয়েছে শিশু গণেশ

লেক কালীবাড়ির গণেশ উৎসবে ভক্তদের সামলাতে গলদঘর্ম সেবায়েত নিতাইচন্দ্র বসু সেটাই বলছিলেন। ‘‘চার বছর হল, ভক্তদের আবদারে গণেশপুজো বড় করেই করছি।’’

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:১৮
Share:

আরাধনা: দক্ষিণ কলকাতার লেক কালীবাড়িতে গণেশপুজো। নিজস্ব চিত্র

খুকির ছেলেমানুষি-বুলির ‘গানুশ’ নন। বাঙালির কাছেও তিনি এখন পুরোদস্তুর সিদ্ধি বিনায়ক বা গণপতি বাপ্পা। এমনকি কলকাত্তাওয়ালি কালীর ঠাঁইয়েও যিনি সগর্বে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন।

Advertisement

লেক কালীবাড়ির গণেশ উৎসবে ভক্তদের সামলাতে গলদঘর্ম সেবায়েত নিতাইচন্দ্র বসু সেটাই বলছিলেন। ‘‘চার বছর হল, ভক্তদের আবদারে গণেশপুজো বড় করেই করছি।’’ মন্দিরে মা কালীর পাশটি ছেড়ে তাই বুলেভার্ডে বসেছেন প্রকাণ্ড ১৬ ফুটের গণেশ। উল্টোডাঙা থেকে এসে হাজির সনাতন রুদ্রপালের ঠাকুর। নিতাইবাবু বলছেন, ‘‘সরস্বতী পুজোয় হাতেখড়ি এবং গণেশ চতুর্থীতে হালখাতার পুজো— দু’টোই এখন সমান তালে চলছে।’’ সোমবার সকাল থেকে চতুর্থী পড়লেও গত শনি-রবির ছুটিতেই পুজোর কেনাকাটি, উদ্‌যাপন শহরের পাড়ায় পাড়ায়। চতুর্থী শেষ হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ। তাই লেক কালীবাড়ির মতো অনেক জায়গায় মঙ্গলবারও পুজো হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বাংলার নেতাদের গণেশ-প্রীতি তো জলভাত। দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্তারাও গণেশপুজোর শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছেন। আগে রথ, জন্মাষ্টমী মায় বিশ্বকর্মা পুজো ঘিরে বাঙালির উন্মাদনা দেখা যেত। এখন গণেশপুজোই যেন দুর্গাপুজোর আগমনি। লালবাজারের কর্তারা জানাচ্ছেন, রবিবার রাত থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাকুর আসা উপলক্ষে শহর জুড়ে যানজটের শুরু। বাগুইআটি থেকে বেহালাই হোক বা শ্যামবাজার থেকে গড়িয়া—নানা মাপের বড়-মেজ গণেশ-বাবার ছড়াছড়ি। দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী দুর্গাপুজোর কর্তার কাছে ইদানীং যেন গণেশই প্রধান উপাস্য। বছর দু’-তিন ধরে মুম্বই থেকে ঠাকুরের নকশা করাচ্ছিলেন তিনি। এ বার কালো রঙের অতিকায় গণেশকে সোনার গয়নায় সাজিয়ে কলকাতাতেই যাবতীয় আয়োজন সেরেছেন।

Advertisement

ভবানীপুরের একটি পুজোর প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকান থেকে শুরু করে ইউটিউব-দীক্ষিত বাঙালি গিন্নিরা অনায়াসে মহারাষ্ট্রের গণপতির প্রিয় খাবার চূড়াকৃতি মোদক তৈরি করে ফেলেন। সিমলেপাড়ার নকুড় নন্দী সন্দেশ ছাড়া কিছুই গড়েন না। তবে নন্দী-বাড়ি পারিবারিক গণেশের জন্য এ দিন বড়বাজারের লাড্ডুর ব্যবস্থা করেছেন। তাঁরাও টের পাচ্ছেন, গণেশপুজোয় মিষ্টির কাটতি বাড়ছে। গত ক’বছরে মোদক-ব্যবসা বহু দোকানেই ১০০-১৫০ থেকে ১০০০ কেজি ছাড়িয়ে গিয়েছে। রিষড়ার ফেলু ময়রা থেকে ভবানীপুরের বলরাম ময়রার ভাঁড়ারে মতিচুর লাড্ডু বা মোদকের বিচিত্র রকমফের। মিষ্টি-কারবারিরা বলছেন, অবাঙালি ক্রেতা নন, ছোটখাটো বাঙালি ব্যবসায়ী থেকে সিদ্ধিকামী গৃহস্থই এই ব্যবসা জিইয়ে রেখেছেন।

ভক্তের তালিকায় বাড়ির পুজো নিয়ে ব্যস্ত রাজ্যের মন্ত্রী থেকে উটকো পথচারী। খাস ধর্মতলায় রাজপথে গণেশের ছবি এঁকে পকেট ভর্তি জনৈক বিকাশ নায়ারের। গত কয়েক বছর ধরে বাঙালির ধনতেরাস পালন, রাম, হনুমান পুজো বা হোলিকা-দহনের সঙ্গে গণেশ-চর্চাকেও এক গোত্রে ফেলছেন অনেকে। বাঙালির এই ‘ভারতীয়করণ’ মেনে নিয়েও কিছু আফশোস ঘনিয়ে ওঠে। আগমনি গানে মেনকার নাতি গণেশকে একদা শুভকারী বলে জানত বাঙালি। বিঘ্ননাশক সিদ্ধিদাতাকে নিয়ে ভক্তির আতিশয্যে কোথাও সেই ‘শিশু গণেশ’-এর দেখা নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement