প্রতীকী ছবি।
বিভিন্ন বিপিও সংস্থায় শাগরেদদের নিয়োগ করত চাঁইয়েরা। সেই সংস্থা থেকে বিদেশি নাগরিকদের তথ্য হাতিয়ে তা দিয়েই চলত অনলাইনে প্রতারণা চক্র। সম্প্রতি খাস কলকাতা থেকে ছ’জনকে গ্রেফতার করার পরে বিষয়টি জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। পুলিশের দাবি, চক্রের শিকড় অনেক গভীরে রয়েছে।
শুক্রবার কড়েয়া থানা এলাকার বেকবাগান রো-এর একটি অফিসে হানা দিয়ে গুন্ডা দমন শাখার আধিকারিকেরা বেআইনি কলসেন্টার চালানোর অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেন। তাদের জেরা করে আরও তিন জনকে ধরা হয়। ধৃতদের থেকে ল্যাপটপ ও তিনটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাদের বিশদে জেরা করে পুরো পরিকল্পনা জেনেছেন গোয়েন্দারা।
পুলিশ জানিয়েছে, ভিনির কুমার নামে কেরলের তাল্লেসরের এক যুবক চক্রের অন্যতম পান্ডা। তার সঙ্গে মিলে সাহিল সিংহ এবং রাকেশ মণ্ডল নামে কলকাতার দু’জন অফিস খুলেছিল। ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে জেরায় উঠে আসে সাহিল হোসেন, মহম্মদ ফিরদৌস এবং শাজিব উল হোসেনের নাম। তাদেরও পাকড়াও করা হয়। তারা ওই অফিসেরই কর্মী। অফিসটি একটি নামী সংস্থার শাখা বলে পরিচিত ছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, বিপিও-তে ‘চর’ নিয়োগ করে তথ্য হাতিয়ে নিত এই চক্রের চাঁইয়েরা। বেকবাগানের অফিসে প্রতারণা করার জন্য কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষ ও ইংরেজিতে সাবলীল যুবক-যুবতীদের কাজে নেওয়া হত। তারা ইউরোপ, আমেরিকার নাগরিকদের ফোন করে নিজেদের নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার প্রতিনিধি বলে পরিচয় দিত। তার পরে নানা কথার ফাঁদে কম্পিউটারটিকে সাময়িক বিকল করে দিত এবং বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে কলকাতায় বসে ওই বিদেশিদের কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে নিত। অ্যান্টিভাইরাস বিক্রির নাম করে ফের কম্পিউটারটিকে সচল করে দিত এবং মোটা অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা হাতিয়ে নিত। বিভিন্ন অনলাইন ওয়ালেট মারফত এই টাকা হাতানো হত।
পুলিশ বলছে, এ ভাবে প্রতারণা শহরে নতুন নয়। কিন্তু বিদেশি নাগরিকদের তথ্য কী ভাবে ফাঁস হচ্ছিল, তা জানা যাচ্ছিল না। এই চক্রটিকে পাকড়াও করার পরে সেই সূত্র মিলেছে।
সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এ রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত ব্যবসা অনেকটাই বিপিও নির্ভর। কিন্তু এ ভাবে যদি তথ্য ফাঁস হয়ে যায়, তবে বিপিও শিল্প জগতে কলকাতার সংস্থাগুলির বদনাম হবে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়তে পারে।