WBBSE

WBBSE Madhyamik Result 2022: শৃঙ্খলা আর নিয়মেই সাফল্য, জানাল চতুর্থ হওয়া শ্রুতর্ষি

মাধ্যমিকে ৬৯০ পেয়ে চতুর্থ হয়েছে চার জন। তাদেরই এক জন পাঠভবনের শ্রুতর্ষি ত্রিপাঠী। ঘোষণায় নিজের নাম শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি তার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২২ ০৫:৫২
Share:

কৃতী: বন্ধুদের সঙ্গে এ বারের মাধ্যমিকে চতুর্থ স্থানাধিকারী শ্রুতর্ষি ত্রিপাঠী (বাঁ দিক থেকে চতুর্থ)। শুক্রবার, পাঠভবনে। নিজস্ব চিত্র।

সারা রাত ঘুম হয়নি। শুক্রবার সকাল সকাল স্নান সেরে বাবার সঙ্গে ল্যাপটপ খুলে বসেছিল সে। চোখ খবরে। মেধা তালিকার নামগুলো বলছিলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়দের নামের পরেই শোনা গেল, সে চতুর্থ হয়েছে। তখনই যেন বদলে গেল চারপাশটা।

Advertisement

মাধ্যমিকে ৬৯০ পেয়ে চতুর্থ হয়েছে চার জন। তাদেরই এক জন পাঠভবনের শ্রুতর্ষি ত্রিপাঠী। ঘোষণায় নিজের নাম শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি তার। শ্রুতর্ষি বলল, ‘‘যেমন প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তাতে মেধা তালিকায় যে থাকব, জানতাম। কিন্তু চতুর্থ হব ভাবিনি। কারণ, প্রথম দশ জনের মধ্যে নম্বরের তফাত খুব কম থাকে।’’

শ্রুতর্ষির বাড়ি সেলিমপুর লেনে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই সেখানে ভিড় জমতে থাকে প্রতিবেশীদের। মিষ্টিমুখের মধ্যেই স্কুল ও বিভিন্ন চ্যানেল থেকে ডাক আসতে থাকে। একটি খবরের চ্যানেলে কিছু ক্ষণ বসেই সে চলে যায় নিজের স্কুলে।

Advertisement

পাঠভবনের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শুভা গুপ্ত বলেন, ‘‘নার্সারি থেকেই শ্রুতর্ষি এই স্কুলে। বরাবরই মেধাবী। পদার্থ বিজ্ঞান আর অঙ্ক সব থেকে বেশি ভালবাসে। সপ্তম শ্রেণিতেই নবম শ্রেণির পদার্থ বিজ্ঞানের নানা সমস্যার সমাধান করত।’’ আর এক শিক্ষক সব্যসাচী প্রামাণিক বলেন, ‘‘ইতিহাস, ভূগোলকেও অবহেলা করেনি কখনও।’’

শ্রুতর্ষির বাবা শুভঙ্কর ত্রিপাঠী সরশুনা কলেজের অধ্যক্ষ। তাঁর বিষয়, পদার্থবিদ্যা। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে কোনও দিন পড়তে বসতে বলতে হয়নি। পড়ার সময়ের কোনও হিসেব ছিল না। পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে একটু ঘুমিয়ে নিত বা গল্পের বই পড়ত।’’ তাঁর মতে, অনলাইনে পড়াশোনায় তেমন অসুবিধা হয়নি ছেলের। স্কুলের পাশাপাশি অনলাইনে টিউশন ক্লাসও করেছে সে।’’

দুপুর ১টা নাগাদ শ্রুতর্ষি স্কুলে আসতেই বন্ধুরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। মিষ্টির হাঁড়ি রাখাই ছিল। শ্রুতর্ষি জানায়, স্কুলের শিক্ষকেরা, টিউশনের শিক্ষকেরা ও বাবা— ভাল ফলের পিছনে অবদান রয়েছে সকলেরই। তবে সব থেকে বেশি অবদান মায়ের। মা মহুয়া ত্রিপাঠী অঙ্কের ছাত্রী হলেও ছেলের জন্য কখনও চাকরি করেননি। তিনি বলেন, ‘‘ছোট থেকেই ওকে নির্দিষ্ট রুটিনে বড় করেছি। বাড়িতে কেব্‌ল টিভি নেই। ওকে ফোন দেওয়া হয়নি। বাবার স্মার্টফোন নিয়েই যা করার করে।’’

শ্রুতর্ষি অঙ্কে একশোয় একশো পেয়েছে। পদার্থ বিজ্ঞানেও একশো। বাংলায় ৯৬, ইংরেজিতে ৯৯, জীবনবিজ্ঞানে ৯৯, ভূগোলে ৯৮ এবং ইতিহাসে ৯৮। তার মতে, সে বাংলা ও ভূগোলে যত নম্বর আশা করেছিল, তত পায়নি। চার থেকে ছ’নম্বর বাড়তে পারত। ভবিষ্যতে মুম্বই আইআইটি-তে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চায় শ্রুতর্ষি।

অবসরে উঁচু ক্লাসের বই পড়তে ভালবাসে সে। এ ছাড়া, ছবিও আঁকে। পেন্টিংয়ে তার ডিগ্রি রয়েছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সত্যজিৎ রায়ের বই পড়ে শ্রুতর্ষি। ফেলদুা ও ব্যোমকেশ তার প্রিয়। শ্রুতর্ষি মনে করে, কলকাতার আরও কয়েক জন মেধা তালিকায় থাকলে ভাল হত।

পরীক্ষার্থীদের জন্য তার পরামর্শ, ‘‘শেষের কয়েক মাস বেশি করে পড়ে বাজিমাত করব ভাবলে ভুল হবে। সাফল্যের শর্টকাট নেই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement