—প্রতীকী ছবি
বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ, তার প্রক্রিয়াকরণ-সহ কাজের বরাত দেওয়ার অনিয়ম নিয়ে শেষ পর্যন্ত পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরে নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে রাজ্যের ন’টি জ়োনে কোভিড-সহ বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘কনসোর্শিয়াম অব স্পেকট্রাম ওয়েস্ট সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড এসএনজি মার্কেন্টাইল প্রাইভেট লিমিটেড’-কে শো-কজ় করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যে নিজস্ব প্লান্ট না থাকা সত্ত্বেও কিসের ভিত্তিতে ওই সংস্থা বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দায়িত্ব পেল, তা তাদের জানাতে বলা হয়েছে।’’
যদিও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের অনুমান, সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে শো-কজ় করা হল প্রাথমিক ধাপ। চূড়ান্ত ধাপে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিলও করা হতে পারে। তবে তাঁদের এ-ও প্রশ্ন, এই ঘটনার সূত্র ধরেই কি সম্প্রতি প্রশাসনিক স্তরে রদবদল হয়েছে? কারণ ঘটনাচক্রে দেখা যাচ্ছে, বুধবারই বিজ্ঞপ্তি জারি করে পরিবেশ দফতরের সচিব বিবেক কুমারকে সরিয়ে বন দফতরের সচিব করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় এসেছেন ‘পার্সোনেল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্ম’ দফতরের সচিব অর্ণব রায়। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, এই অনিয়মের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন বিবেক কুমার। সে কারণেও এই রদবদল হয়ে থাকতে পারে। যদিও প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘শুধু একটি দফতরেই নয়, আরও অনেক দফতরেই প্রশাসনিক স্তরে রুটিনমাফিক পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এর অন্য ব্যাখ্যা খোঁজা নিষ্প্রয়োজন।’’
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডাকা দরপত্রের মাধ্যমে রাজ্যে ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি অপারেটর’ (সিবিডব্লিউটিএফ) হিসেবে কাজের বরাত পেয়েছিল সংশ্লিষ্ট ‘কনসোর্শিয়াম’। অথচ বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইনে ‘অপারেটর’ হিসেবে রাজ্যে তাদের নিজস্ব প্লান্টের পাশাপাশি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র থাকাও ছিল বাধ্যতামূলক। কিন্তু সে সব ছাড়াই ওই সংস্থার বরাত পাওয়ার পিছনে প্রাক্তন মুখ্যসচিব তথা তৎকালীন স্বাস্থ্যসচিব রাজীব সিংহের ‘প্রভাব’ ছিল বলে অভিযোগ। যদিও রাজীববাবু অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, তাঁর সময়ে দরপত্রে অনিয়ম হয়নি।
আরও পড়ুন: এগ্রি গোল্ড দুর্নীতিতে ৪ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ইডি-র
আরও পড়ুন: তিন মেদিনীপুরের ৩৫ টি আসনই দখল করবেন, দাবি শুভেন্দুর
প্রশাসনিক সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, চলতি মাসে অনিয়মের খবর প্রকাশ্যে আসতেই তড়িঘড়ি আলোচনায় বসেন স্বাস্থ্য, পরিবেশ-সহ অন্যান্য দফতরের কর্তা। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য দফতর একটি কমিটিও গড়ে। তার পরেই শো-কজ়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভিযুক্ত এসএনজি সংস্থার ডিরেক্টর এস পি সিংহের অবশ্য দাবি, ‘‘দরপত্র আগে ডাকা হলেও কোভিড-বর্জ্যের চাপ সামলাতেই রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো আমরা কাজ করছিলাম। তাদের অনুমতি ছাড়া তো কিছু করতে পারতাম না।’’
কেলেঙ্কারি
ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
• সিবিডব্লিউটিএফ বাছাইয়ে দরপত্র স্বাস্থ্য দফতরের।
মে, ২০১৯
• রাজ্যের ন’টি জ়োনের দায়িত্বে ‘কনসোর্শিয়াম’।
• দরপত্রে বেআইনি ভাবে অংশ নিয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি দিল স্বীকৃত সিবিডব্লিউটিএফ ‘মেডিকেয়ার’।
• একই কথা জানাল ‘সিবিডব্লিউটিএফ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’।
• দরপত্রে ‘কনসোর্শিয়াম’ তাদের নথি জাল করেছে বলে জানাল ‘বায়োটিক ওয়েস্ট সলিউশনস’ও।
সেপ্টেম্বর, ২০১৯
• ‘কনসোর্শিয়াম’-এর সঙ্গে পারস্পরিক এলাকা বদলের আর্জি জানাল ‘মেডিকেয়ার’-ই।
নভেম্বর, ২০১৯
• তার ভিত্তিতে ‘সোয়াপিং অ্যারেঞ্জমেন্ট অর্ডার’ স্বাস্থ্য দফতরের।
ডিসেম্বর, ২০২০
• অভিযোগ প্রকাশ্যে এল।
• খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়ল স্বাস্থ্য দফতর।
• শো-কজ়ের সিদ্ধান্ত।
• শো-কজ় করা হল ‘কনসোর্শিয়াম’-কে।