—প্রতীকী চিত্র।
নতুন কেনা গাড়ি ‘অপটু’ হাতে চালাতে গিয়ে ব্রেকের বদলে অ্যাক্সিলারেটরে পা পড়ে যাওয়ার ফলেই কি অঘটন? দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িতে ‘এল’ লেখা স্টিকার না থাকায় এবং চালকের লাইসেন্স নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হওয়ায় এই প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলির উপরে পরিবহণ দফতরের নজরদারি আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা এই সমস্ত স্কুলগুলির প্রশিক্ষণ যথেষ্ট কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
সোমবার সকালে উল্টোডাঙা থানা এলাকার বেলগাছিয়া মোড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ইউ-টার্ন করার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুত গতিতে সোজা রাস্তার উল্টো দিকের দোকানে ঢুকে যায় একটি গাড়ি। সেই গাড়ির ধাক্কায় দোকানে থাকা লোকজন ছিটকে পড়েন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা এক জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। জখম চার জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার পরেই চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার দাবি করলেও তা এখনও তদন্তকারীরা হাতে পাননি বলে পুলিশ সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, ‘লার্নার্স লাইসেন্স’ পাওয়া কেউ গাড়িতে এক জন প্রশিক্ষিত চালককে বসিয়ে তবেই গাড়ি চালাতে পারেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অপটু হাতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন অভিযুক্ত চালক। গাড়িতে ছিলেন তাঁর বাবা। তবে, বাবার আদৌ লাইসেন্স আছে কি না, জানতে পারেনি পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অনভ্যস্ত হাতে রাস্তা ঘোরার সময়ে ব্রেকের বদলে অ্যাক্সিলারেটরে পা পড়ে যায়। তার জেরেই এই দুর্ঘটনা।
যদিও এমন দুর্ঘটনা এই প্রথম নয়। বছর দেড়েক আগে পঞ্চসায়র থানা এলাকাতেও একই রকম দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল এক জনের। গাড়ি চালানো শেখার সময়ে অপটু হাতে রাস্তায় বেরিয়ে পথচারীকে ধাক্কা মারেন এক জন। মৃত্যু হয়েছিল সেই পথচারীর। সেই ঘটনার পরে এ দিন সকালে বেলগাছিয়া মোড়ের দুর্ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, ‘অপটু’ হাতে ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরোনো কি আদৌ উচিত? সেই সঙ্গে এটাও প্রশ্ন, গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত রাস্তায় নামার জন্য শুধুমাত্র মোটর ট্রেনিং স্কুলের প্রশিক্ষণ কি যথেষ্ট? বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতার মতো জনবহুল রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরোতে হলে চালকের যথেষ্ট দক্ষতা থাকা দরকার। কয়েক দিনের অনুশীলনে সেই দক্ষতা অর্জন করা আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তা পঙ্কজ দত্তের কথায়, ‘‘শুধুমাত্র মোটর ট্রেনিং স্কুলের প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়। কারণ, মোটর ট্রেনিং স্কুলের প্রশিক্ষণ এবং পরবর্তী কালে লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়ায় নানা অস্বচ্ছতা থাকে। শহরে দুর্ঘটনা কমাতে লাইসেন্স প্রক্রিয়া আরও কঠোর হওয়া উচিত।’’
গত কয়েক বছরে শহরের অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে একের পর এক মোটর ট্রেনিং স্কুল। ওই সমস্ত স্কুলের অধিকাংশেরই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই বলে অভিযোগ। কোনও রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই তারা গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দেয় বলেও অনেকের দাবি। এমনকি, টাকার বিনিময়ে শিক্ষানবিশ চালকদের লার্নার্স লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার চক্রও শহরে সক্রিয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবহণ দফতরের কোনও নজরদারি না থাকায় এই চক্র আরও জাঁকিয়ে বসেছে বলেও অভিযোগ। পরিবহণ দফতরের তরফে কার্যত কোনও নজরদারি না থাকায় এই দৌরাত্ম্য আরও বাড়ছে।
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মোটর ট্রেনিং স্কুলে প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ সুবিধাযুক্ত গাড়ি রাখার নিয়ম রয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য রাখার কথা অভিজ্ঞ চালকদের। কিন্তু নজরদারির অভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। যদিও পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘সম্প্রতি দফতরের তরফে মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলিকে প্রশিক্ষিত করতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে যাতে চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলির লাইসেন্স পরিবহণ দফতর দেয়। আদৌ বিধি মেনে প্রশিক্ষণ হচ্ছে কি না, ছ’মাস অন্তর তা খতিয়ে দেখারও নিয়ম রয়েছে।