বহু বছর ভাড়া বাড়েনি বেসরকারী বাসের। — ফাইল চিত্র।
পাঁচ বছরে লিটার প্রতি ডিজ়েলের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বাড়লেও ভাড়া বাড়েনি বেসরকারি পরিবহণে। বেসরকারি বাস ও মিনিবাসে অনুদান নেওয়ার নামে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশ মতো পুরনো তালিকার ভাড়া নেওয়ার কথাই জানিয়েছে রাজ্য সরকার। ভাড়া নিয়ে এই টানাপড়েনে এ বার আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে একাধিক বেসরকারি পরিবহণ সংগঠন। বেসরকারি বাস, মিনিবাস, হলুদ ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাবের বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই সরকারের কাছে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে।
বাসমালিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, জ্বালানির খরচ বৃদ্ধি ছাড়াও সরকারি বিধিনিষেধের ঠেলায় নিত্য খরচ বাড়ছে। আবার জাতীয় সড়ক ছুঁয়ে চলা স্থানীয় বাস রুটের জন্য পৃথক সার্ভিস রোড না থাকায় টোলের খরচ বাড়ছে। সঙ্গে শহরে যুক্ত হয়েছে যথেচ্ছ পুলিশি জরিমানা।রাজ্যের নির্দেশ মেনে ধাপে ধাপে বেসরকারি বাস, মিনিবাস, অ্যাপ-ক্যাবে ভেহিক্ল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস বসাতে হচ্ছে। তার জন্যও বাড়তি খরচ হচ্ছে।
ফলে, সব দিক থেকে খরচ বাড়লেও ভাড়া না বাড়ানোয় পরিবহণ-ব্যবসা অলাভজনক হয়ে পড়ছে। শহর এবং শহরতলির বহু রুটে বাসের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বহু রুট কার্যত অবলুপ্ত। টানা অচলাবস্থার মধ্যে বাসমালিকদের অনেকেই ব্যবসা চালিয়ে যেতে আগ্রহী না হওয়ায় রুটে নতুন বাস প্রায় নামছেই না।
এই অবস্থায় বেসরকারি গণপরিবহণের প্রতিনিধিত্বকারী দু’টি মঞ্চই ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে সরব হয়েছে। ‘জয়েন্ট ফোরাম অব ট্রান্সপোর্ট অপারেটর্স’ এবং ‘বেসরকারি যাত্রী পরিবহণ বাঁচাও কমিটি’ পৃথক পৃথক ভাবে সরকারের কাছে ভাড়া বৃদ্ধির দাবিও জানিয়েছে। জয়েন্ট ফোরাম অব ট্রান্সপোর্ট অপারেটর্স ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা, জেলাশাসক ও আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। ওই মঞ্চের পক্ষ থেকে টিটু সাহা বলেন, ‘‘ভাড়া বৃদ্ধির দাবি নিয়ে আমরা নবান্নের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নতুন বাসের কাঠামোর দাম ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। ফলে নতুন বাস নামানো অসম্ভব। এই শিল্পের ছন্দ ফিরে আসা জরুরি।’’ বেসরকারি যাত্রী পরিবহণ বাঁচাও কমিটির তরফে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাড়া না বাড়ানোয় সর্বস্তরে অনটন চলছে। টিকে থাকতে ন্যূনতম খরচ তোলার প্রতিযোগিতায় পরিষেবার মান খারাপ হচ্ছে।’’
হলুদ ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাবের ভাড়া বাড়ানো নিয়েও দাবি জোরালো হয়েছে। বাম প্রভাবিত এআইটিইউসি-র হলুদ ট্যাক্সির সংগঠন ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে জুন মাস জুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। ভাড়া বৃদ্ধি এবং পুলিশি নির্যাতন বন্ধের দাবিতে গত ৮ জুন ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ট্যাক্সিচালকেরা এসপ্লানেড থেকে এন্টালি পর্যন্ত মিছিল করেন। পরিবহণমন্ত্রীকে একাধিক চিঠি দিয়েও ফল মেলেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। সংগঠনের তরফে কলকাতার নানা প্রান্তে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে বিক্ষোভ কর্মসূচি সংঘটিত হয়েছে। ওই সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘সব কিছুর দাম বাড়লেও ভাড়া বাড়ছে না। রাস্তায় পুলিশি নির্যাতন ভোগ করতে হচ্ছে। ফলে সব স্তরের পরিবহণ শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে।’’
সিটু, এআইটিইউসি-সহ অনলাইন ক্যাব-অপারেটর্স গিল্ডের মতো অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনগুলিরও ভাড়া বৃদ্ধির দাবি রয়েছে। ওই সব সংগঠনের পক্ষ থেকে লাক্সারি ট্যাক্সির কিলোমিটার প্রতি ১৮.৭৫ টাকা ভাড়া করার দাবি জানিয়ে সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরিবহণ মন্ত্রক সূত্রের খবর, পরিচালন খরচ বৃদ্ধির নিরিখে ভাড়া বাড়ার হার খতিয়ে দেখতে গত তিন বছরে দু’বার কমিটি গড়া হলেও তার সুপারিশ নবান্নের আপত্তিতে কার্যকর হয়নি। এমনকি সরকারি এসি বাসের ভাড়া বৃদ্ধির সুপারিশও মানা হয়নি।
দীর্ঘ দাবিদাওয়ার পরেও পরিবহণ দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ভাড়া না বাড়ানো সরকারের সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে তাদের করণীয় কিছু নেই।