সাদামাটা গণেশ পুজো। —ফাইল চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে পুজোর জৌলুস কি এ বছর কিছুটা কম দেখা যাবে? শহরের কিছু এলাকায় এ বছরের গণেশ পুজো অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ওই সমস্ত পুজোয় দেখা গিয়েছে, মণ্ডপ তৈরি করে সমস্ত আচার মেনে পুজো হলেও উদ্যাপনের মাত্রা রাখা হয়েছে নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যে। কোথাও জলসা বাতিল হয়েছে, কোথাও আবার বাতিল হওয়ার পথে বিসর্জনের শোভাযাত্রা। কিন্তু আগামী মাসে দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রেও সেই ‘সংযম’ দেখা যাবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। উদ্যোক্তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করলেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। কেউ আবার পরিস্থিতির ‘জল মেপে’ তবেই সব করবেন বলে জানাচ্ছেন।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় চলছে রাজ্য জুড়ে। ঘটনার বিচার চেয়ে প্রতিদিন পথে নামছেন হাজার হাজার মানুষ। যার প্রভাব পড়েছে এ বছরের গণেশ পুজোতেও। প্রতিবাদের এই আবহে এ বছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জলসা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভবানীপুরের শরৎ বসু রোডের নিউ ইন্ডিয়ান ক্লাব। এমনকি, বিসর্জনের শোভাযাত্রাও করা হবে না বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাঁদের এক জন রঞ্জন দে বললেন, ‘‘আর জি কর-কাণ্ডের পরে আমাদের আর এ বছর উৎসব পালন করতে মন চায়নি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর আবার জাঁকজমক করে পুজো হবে।’’
একই পথে হেঁটেছে বাগুইআটির একটি আবাসন। গণেশ পুজো উপলক্ষে প্রতি বছরই পাঁচ দিন ধরে নানা অনুষ্ঠান হয় সেখানে। সাধারণের জন্য আবাসন প্রাঙ্গণ খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এ বছর শুধু ভোগের অনুষ্ঠান করা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। আর জি কর-কাণ্ডের প্রতীকী প্রতিবাদ করতেই আবাসনের উৎসব কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাঁকজমক ও উৎসব থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছেন রাজা রামমোহন রায় সরণির চালতাবাগানের গণেশ পুজোর উদ্যোক্তারা। তাঁদের তরফে অভিজিৎ যশপাল বলেন, ‘‘পুজো মানে তো উৎসব, আনন্দ। কিন্তু মানুষের মন কি আর আনন্দ করার মতো অবস্থায় আছে?’’ পুজো করলেও কোনও রকম উৎসবে না থাকার কথা জানিয়েছেন ভবানীপুর ডাকঘর পাড়ার গণেশ পুজোর উদ্যোক্তা গোপী ঠক্করও।
কিন্তু মাস পেরোলেই দুর্গাপুজো। সে ক্ষেত্রে কী হবে? দুর্গাপুজোয় কি আদৌ সংযমের পথে হাঁটবেন উদ্যোক্তারা? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই জানাচ্ছেন, তাঁরা আপাতত পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন। দেশপ্রিয় পার্ক পুজো কমিটির তরফে সুদীপ্ত কুমার বললেন, ‘‘আপাতত পরিস্থিতির উপরেই সব নির্ভর করছে। মানুষের মধ্যে এ বার পুজো নিয়ে উৎসাহে ভাটা রয়েছে। মানুষকে বাদ রেখে তো কোনও পুজো হয় না। তাই সব দিক দেখেশুনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
সব অস্থিরতা পুজোর আগে কেটে যাবে বলে আশা করছেন সুরুচি সঙ্ঘের উদ্যোক্তারা। তাঁদের এক জন, কিংশুক মৈত্র বললেন, ‘‘আমরা এখনও অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা নিয়ে ভাবিনি। পুজোর প্রস্তুতি যেমন চলে, তেমনই চলছে। পরে কী হয়, দেখা যাক।’’ একই কথা শোনালেন আর জি কর সংলগ্ন টালা প্রত্যয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা ধ্রুবজ্যোতি বসু। তিনি বলেন, ‘‘পুজোর প্রস্তুতি কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। প্রতিমার বায়না থেকে মণ্ডপের কাজ— সবই অনেক আগে থেকে শুরু হয়। তাই চাইলেই কাটছাঁট করা যায় না।’’
তবে, ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সভাপতি শাশ্বত বসু বললেন, ‘‘আর জি করের ঘটনায় আমরা সকলেই সমব্যথী। সকলেই প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু দুর্গাপুজো তো শুধু একটি উৎসব নয়, এর সঙ্গে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা জড়িত। অর্থনীতির সেই দিকটাও আমাদের ভাবতে হবে।’’