খুনে অভিযুক্ত বিট্টু সর্দারকে (মাটিতে পড়ে) মারধর স্থানীয় বাসিন্দাদের। থামানোর চেষ্টা পুলিশের। রবিবার, বিধাননগরের শান্তিনগরে। —নিজস্ব চিত্র।
এলাকায় তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ। তবে শনিবার রাতের ঘটনা সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। গলায় কাঁচি চালিয়ে এলাকারই এক যুবককে খুনের অভিযোগে রবিবার তাকে গণপিটুনি দিয়েছেন এলাকাবাসী। এর পরেই স্থানীয় এলাকা থেকে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে যে, পুলিশ সক্রিয় হলে এত বড় ঘটনা ঘটতে পারত না।
বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার শান্তিনগরে শনিবার রাতে গলায় কাঁচি চালিয়ে খুন করা হয় সাহেব আলি সর্দার নামে এক স্পা-কর্মীকে। যার বিরুদ্ধে সাহেবকে খুনের অভিযোগ, সেই বিট্টু সর্দার গণপিটুনিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তার পরে শনিবার রাত থেকেই স্থানীয় মানুষের যাবতীয় ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে স্থানীয় বিধাননগর দক্ষিণ থানার উপরে। এমনকি, রবিবার সকালে বিধাননগরের নগরপাল গৌরব শর্মার সামনে স্থানীয় বাসিন্দাদের এবং নিহত সাহেবের পরিবারকে সেই ক্ষোভই উগরে দিতে দেখা গিয়েছে।
সাহেবের পিসি রোজিনা শেখের অভিযোগ, ‘‘একাধিক বার গ্রেফতার হয়েছিল বিট্টু। প্রতি বারই কিছু দিন জেলে থাকার পরে ফিরে এসে নতুন করে উপদ্রব শুরু করে দিত। সম্প্রতি স্থানীয় এক জনের যৌনাঙ্গে এমন মেরেছিল যে, সেই ব্যক্তি মরতে মরতে বেঁচে যান। পুলিশকে বার বার বলা হত। ৫০০ টাকা নিয়ে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ বিট্টুকে ছেড়ে দিত।’’
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিট্টু মাদকাসক্ত। এলাকায় দাদাগিরি, তোলাবাজি করত। শনিবার রাতে তার হাতে কাঁচিতে আহত মোক্তার মোল্লা নামে এক যুবকও জানিয়েছেন, বিট্টু সাহেবের থেকে ৫০০ টাকা চেয়েছিল। সাহেব তা দিতে অস্বীকার করেন। তার পরেই বিট্টু কাঁচি চালিয়ে দেয় সাহেবের গলায়। এ দিন ফের নতুন করে বিট্টুর পরিবারকে ওই জায়গায় থাকতে না দেওয়ার দাবি তুলে পুলিশের উপরে চাপ সৃষ্টি করেন স্থানীয় মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশকে শনিবার রাতেও বিট্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তারা জানিয়েছে, গত তিন বছর বিট্টু কোনও অপরাধ করেনি। শনিবার রাতে বিট্টুর খোঁজ তার বাড়িতে গেলেও স্থানীয় মানুষকে পুলিশই বাধা দেয় বলে অভিযোগ সাহেবের পরিবারেরও।
কিন্তু কেন বিট্টুর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?
কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তার দাবি, ‘‘ওকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছিল বিধাননগর দক্ষিণ থানা। আদালতে জামিন পেয়ে বেরিয়েছে। আগেও একাধিক বার গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে, অভিযোগ অনুযায়ী পুলিশ ধারা দেয়।’’
পুলিশ জানায়, বিট্টু অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রেফতার হয়েছে মত্ত অবস্থায় গোলমাল করার জন্য কিংবা মারামারির ঘটনায়। যেখানে পুলিশ নিজেই মামলা করে তাকে গ্রেফতার করেছে। তার জেরে থানা তাকে ৫০০ টাকার জামিনে ছেড়ে দিয়েছে। এক পদস্থ আধিকারিকের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘শনিবার রাতে যখন বিট্টুকে ভাসানের ওই মিছিলে দেখা গিয়েছিল, তখনই স্থানীয়েরা প্রতিবাদ করেননি কেন?
জবাবে ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, পুলিশই যে দুষ্কৃতীকে আটকাতে পারে না, সেখানে কে তার বিরুদ্ধে কথা বলবেন?