Women Self Help Group

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বরাতে ‘কাটছাঁট’, পরিষেবার মানে হতাশ গ্রাহকেরাও 

গত কয়েক মাসে ভাটা পড়েছে সেই ভরসায়। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের সামগ্রিক এলাকা উন্নয়ন পর্ষদের বাড়ি বাড়ি রান্না করা খাবার, আনাজ, মাছ-মাংস পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগে কাটছাঁট করা হয়েছে অনেকটাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:৪৪
Share:

রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের সামগ্রিক এলাকা উন্নয়ন পর্ষদের বাড়ি বাড়ি রান্না করা খাবার, আনাজ, পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগে কাটছাঁট করা হয়েছে অনেকটাই। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব আয়ের মুখ দেখেছিলেন তাঁরা। সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা ভরসাও পেয়েছিলেন। তাঁদের ফলানো চাল, আনাজ বা ঘরে তৈরি ঘি, বড়ি, গুড়, মোয়া পৌঁছে যাচ্ছিল কলকাতার বাড়ি বাড়ি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদেরই কাউকে কাউকে কলকাতায় এনে প্রশিক্ষণের পরে দেওয়া হয়েছিল রান্নার ও আনুষঙ্গিক কাজের ভার। তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় লকডাউনের সময়ে উপকৃত হয়েছেন বহু শহরবাসী, বিশেষত প্রবীণেরা।

Advertisement

অভিযোগ, গত কয়েক মাসে ভাটা পড়েছে সেই ভরসায়। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের সামগ্রিক এলাকা উন্নয়ন পর্ষদের (কম্প্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন বা সিএডিসি) বাড়ি বাড়ি রান্না করা খাবার, আনাজ, মাছ-মাংস পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগে কাটছাঁট করা হয়েছে অনেকটাই। অভিযোগ, তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির উপরেও। সিএডিসি-র তরফে এক ধাক্কায় বরাত কমিয়ে দেওয়ায় তাদের আয় কমেছে বলেও দাবি।

রায়দিঘি থানা এলাকার একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তরফে স্বাতী হাজরা জানাচ্ছেন, তাঁরা চাল, মাছ, বড়ি, গুড়, পাটালি, মোয়া ইত্যাদি সরবরাহ করতেন সিএডিসি-কে। প্রতি মাসে চার-পাঁচ বার জিনিসপত্রের গাড়ি পাঠাতেন। মাসে ২ থেকে ৪ কুইন্টাল চাল বিক্রি করতেন তাঁরা। সম্প্রতি সেই পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ কুইন্টালে। স্বাতী বলেন, ‘‘বরাত এত কমে যাওয়ায় অসুবিধা হচ্ছে। বেশি বরাত না এলে গাড়ি করে জিনিসপত্র কলকাতায় পৌঁছে দেওয়া লাভজনক হয় না। নতুন করে ক্রেতা খোঁজার চেষ্টা করছি আমরা।’’ বীরভূমের লাভপুর এলাকার একটি গোষ্ঠীর তরফে বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ‘‘আগে মাছ, মাংস, চাল, মশলা মিলিয়ে মাসে অন্তত দেড় লক্ষ টাকার জিনিস সরবরাহ করতাম। এখন এক টাকারও জিনিস নেওয়া হচ্ছে না।’’

Advertisement

অন্য দিকে, সিএডিসি-র হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে হতাশা প্রকাশ করেছেন গ্রাহকেরাও। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সল্টলেক সেক্টর ১-এর মৃত্তিকা ভবন থেকে সিএডিসি-র এই উদ্যোগের সূচনা করেছিলেন তৎকালীন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। অনলাইনে বরাত আসত নিউ টাউন, বাগুইআটি, দমদম, গড়িয়া, বেহালা-সহ দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ থেকে। লকডাউনে প্রবীণদের কথা ভেবে বাড়িতে রান্না করা খাবার পৌঁছনোও শুরু হয়। সিএডিসি সূত্রের খবর, জনপ্রিয়তা পায় সেই পরিষেবা। এ শহরে থাকা পরিজনদের জন্য বরাত পাঠাতেন ভিন্ রাজ্য বা বিদেশে বসবাসকারীরাও। করোনার ছায়া সরলেও ওই পরিষেবায় আস্থা রেখেছিলেন তাঁরা।

অভিযোগ, কয়েক মাস আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় দুপুরের খাবার সরবরাহ। পরে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চিহ্নিত করা হয় শুধু সল্টলেককে। কিছু দিন পরে জানানো হয়, অন্য জিনিস সরবরাহের জন্যও ১০ কিলোমিটারের সর্বোচ্চ দূরত্ব বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। তখনই কমেযায় গ্রাহক।

এর সঙ্গেই গয়ংগচ্ছ মনোভাবের অভিযোগও উঠছে। অভিযোগ, কখনও বরাত দিতে চাইলেও মেলেনি উত্তর। কখনও আবার রাতের খাবারের অপেক্ষায় বসে থেকে হতাশ হয়েছেন বয়স্ক দম্পতি। নিয়মিত গ্রাহকদের এক জন, টরন্টো নিবাসী সায়ন ঘোষ বলেন, ‘‘করোনার সময় থেকেই বয়স্ক বাবা-মার জন্য অর্ডার করতাম। পরিষেবায় খুবই খুশি ছিলাম। সম্প্রতি একাধিক গোলমালের পরে সিএডিসি থেকে খাবার নেওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।’’ আবার মল্লিকবাজারের বাসিন্দা লিপিকা আঢ্য বলছেন, ‘‘এত দিন ধরে নিয়মিত জিনিসপত্র নিতাম। বাড়িতে অতিথি এলেও ওদের উপরে ভরসা করেছি। কিন্তু এখন আমার ঠিকানা ডেলিভারি এলাকার বাইরে চলে গিয়েছে!’’ বিষয়টি নিয়ে অনলাইন গ্রুপে সরব হয়েও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ।

হঠাৎ এমন অবস্থা কেন? পর্ষদের প্রশাসনিক সচিব সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘করোনার সময়ে যে পরিমাণ বরাত আসত, এখন তা কমেছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় সরবরাহ করা লাভজনক হচ্ছে না। সেই জন্যই পরিষেবা কমানো হয়েছে।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, গ্রাহকদের বরাত কম এলেও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির থেকে নেওয়া জিনিসের পরিমাণ কমানো হয়নি।

পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপকুমার মজুমদার বলেন, ‘‘কয়েক হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করি আমরা। দু’-একটি গোষ্ঠীর অসুবিধা মানেই আমরা জিনিস নিচ্ছি না, তা নয়। জিনিস বিক্রির অন্য মাধ্যমও রয়েছে। পরিষেবা দিতে গাড়ি বাবদ বিপুল খরচ হচ্ছিল, তুলনায় আয় হচ্ছিল না। তাই লোকসানে পরিষেবা না চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement