ব্যস্ত শিয়ালদহ উড়ালপুল। ফাইল চিত্র
নির্মীয়মাণ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গের কাজের জন্য শিয়ালদহ উড়ালপুল বা বিদ্যাপতি সেতু দিয়ে তিন দিন যান চলাচল বন্ধ রাখতে চান মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মেট্রো। এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে মেট্রোকর্তাদের কথা হলেও উড়ালপুল বন্ধ রাখার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
শিয়ালদহ উড়ালপুল তিন দিন বন্ধ রাখা হলে কোন বিকল্প পথ দিয়ে যান চলাচল করানো হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছেন কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা। লালবাজার সূত্রের খবর, সোমবার কলকাতা পুলিশ এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণ সংস্থা ‘কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড’ (কেএমআরসিএল)-এর কর্তারা যৌথ ভাবে শিয়ালদহের ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানেই মেট্রোর তরফে জানানো হয়, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গটি বিদ্যাপতি সেতু এলাকা পেরোবে। তাই চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে ওই সেতু তিন দিন বন্ধ রাখা জরুরি। পুলিশের তরফে অবশ্য এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার জানান, সবটাই এখন আলোচনার স্তরে রয়েছে। দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। ভূগর্ভের যে অংশে সুড়ঙ্গ কাটার কাজ হবে, তার উপরে রয়েছে শিশির মার্কেটের একটি অংশ। ওই অংশের দোকানপাট সেই ক’দিন বন্ধ রাখা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
ট্র্যাফিক পুলিশ জানিয়েছে, উত্তরে টালা সেতু এখন নেই। ফলে সেখানে গাড়ি ঘুরপথে চলছে। এ বার বিদ্যাপতি সেতু বন্ধ থাকলে উত্তর কলকাতার বাসিন্দাদের ভোগান্তি যাতে না বাড়ে, সে কথা মাথায় রেখেই বিকল্প রাস্তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বদলের ডাকে বিপাকে মিষ্টি-বিক্রেতারা
পুলিশ জানিয়েছে, গোটা উড়ালপুল বন্ধ রাখা হবে না। মহাত্মা গাঁধী রোড র্যাম্প থেকে বেলেঘাটা র্যাম্পের মধ্যবর্তী অংশটুকু বন্ধ থাকবে। তার নীচ দিয়েই সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ চলবে। প্রাথমিক ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেতুর মধ্যবর্তী অংশ বন্ধ থাকলে মৌলালির দিক থেকে যে সব গাড়ি রাজাবাজারের দিকে বা মহাত্মা গাঁধী রোডের দিকে যাবে, সেগুলিকে মৌলালি, এস এন ব্যানার্জি রোড, ধর্মতলা, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, কলুটোলা দিয়ে ঘুরিয়ে পাঠানো হবে। আবার যে সব গাড়ি উত্তর কলকাতা থেকে ধর্মতলা বা দক্ষিণে যাবে, সেগুলিকে মানিকতলা মোড় থেকে বিবেকানন্দ রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট হয়ে পাঠানো হবে। কিছু গাড়ি যাতে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট-ওয়েলিংটন হয়ে মৌলালি ধরে ফিরতে পারে, সেই ব্যবস্থাও রাখা হবে।
বেলেঘাটার দিক থেকে যে সব গাড়ি রাজাবাজার কিংবা মহাত্মা গাঁধী রোডের দিকে যাবে, সেগুলির জন্য পুলিশের বিকল্প ভাবনা হিসেবে রয়েছে বেলেঘাটা সিআইটি মোড়, ফুলবাগান, নারকেলডাঙা মেন রোড হয়ে রাজাবাজার-মহাত্মা গাঁধী রোড র্যাম্প। এর পরে গাড়িগুলি আমহার্স্ট স্ট্রিট-বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট-নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট-ওয়েলিংটন ও মৌলালি হয়ে যেতে পারবে।
আরও পড়ুন: বেহাল বহু রাস্তা, পুজোর আগেই সারাতে অনুরোধ পুলিশের
লালবাজার জানিয়েছে, ট্রেন বন্ধ থাকায় শিয়ালদহে এখন গাড়ির চাপ কম রয়েছে। সেই সঙ্গে স্কুল-কলেজও বন্ধ। তাই ছুটির দিন গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হলে তেমন কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু উত্তরের গাড়িগুলিকে ঘুরিয়ে বিকল্প পথে পাঠানো হলে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে অনেকটা বেশি সময় লেগে যাবে। কারণ, টালা সেতু না থাকায় এমনিতেই তাদের ঘুরে আসতে হচ্ছে।
এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘গত বছর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ওই উড়ালপুল তিন দিন বন্ধ ছিল। সেই সময়ে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, এ বারও তা-ই নেওয়া হতে পারে। কারণ, গত বার বিশেষ অসুবিধা হয়নি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, তাদের
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আমহার্স্ট স্ট্রিট, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট-সহ ওই এলাকার সব রাস্তাতেই ‘নো পার্কিং’ বিধি চালু করা হতে পারে। আবার কিছু বাসকে মৌলালি এবং রাজাবাজারে থামিয়ে দেওয়া হতে পারে। তবে কোনওটাই চূড়ান্ত হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।