কাজিয়া চলছেই, অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ স্কটিশ চার্চ

রাজ্যের দুই মন্ত্রীর কাজিয়ার জেরে এ বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পদত্যাগ করেছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ। কয়েক সপ্তাহ পরে সেই কাজিয়ার পুনরাবৃত্তির জেরেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য বুধবার রাত থেকে বন্ধ হল স্কটিশ চার্চ কলেজ। যদিও আপাতভাবে এর কারণ হিসেবে সামনে এসেছে কলেজের একটি ভবন তৈরি নিয়ে বিতর্ক। কিন্তু কলেজের একাংশ বলছেন এই সমস্যার জট অনেক গভীরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৪
Share:

বন্ধের নোটিস। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র

রাজ্যের দুই মন্ত্রীর কাজিয়ার জেরে এ বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পদত্যাগ করেছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ। কয়েক সপ্তাহ পরে সেই কাজিয়ার পুনরাবৃত্তির জেরেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য বুধবার রাত থেকে বন্ধ হল স্কটিশ চার্চ কলেজ। যদিও আপাতভাবে এর কারণ হিসেবে সামনে এসেছে কলেজের একটি ভবন তৈরি নিয়ে বিতর্ক। কিন্তু কলেজের একাংশ বলছেন এই সমস্যার জট অনেক গভীরে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শনিবার ১ অক্টোবর কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠক আছে। ওই বৈঠকেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কলেজের টিচার-ইন-চার্জ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কলেজ কাউন্সিল নেবেন। আমি এই বিষয়ে কিছু বলব না।’’

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজ চত্বরে নতুন একটি ভবন তৈরি হচ্ছে। সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বুধবার বিকেল ৩টে নাগাদ ইঞ্জিনিয়ার এবং সরকারি অধিকর্তাদের সঙ্গে কলেজ পরিচালন সমিতি একটি বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলেজের সাম্মানিক রেক্টর জন আব্রাহাম। পরিচালন সমিতির এক সদস্য জানান, আব্রহাম কলেজে ঢুকতেই একদল ছাত্র ‘গো ব্যাক আব্রাহাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। এমনকী, বিক্ষোভকারী ছাত্রদের একাংশ রেক্টর এবং কলেজের শিক্ষকদের উদ্দেশে গালাগালিও করেন। কলেজের এক শিক্ষকের অভিযোগ, বুধবার পরিচালন সমিতির রুদ্ধদ্বার বৈঠক ছিল। সেখানে কলেজের ছাত্রদের কথা বলার নিয়ম নেই। তা সত্ত্বেও তাঁরা বন্ধ দরজায় লাথি মারতে থাকেন এবং কলেজের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন, কলেজের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন। পরিচালন সমিতির সদস্যরা বিক্ষোভকারী ছাত্রদের চলে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁরা দাবি করেন, রেক্টর কলেজ থেকে না বেরোলে বিক্ষোভ চালতেই থাকবে। বিকেল তিনটে থেকে এই দৌরাত্ম্য চলে রাত ন’টা পর্যন্ত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি বিশপ অশোক বিশ্বাস অনির্দিষ্টকাল কলেজ বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। পরিচালন সমিতির এক সদস্য জানান, বুধবারের ঘটনা চলাকালীন তাঁরা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে কলেজের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। অভিযোগ, বিক্ষোভকারী ছাত্রদের আচরণ এতটাই মাত্রা ছাড়ায় যে কলেজ পরিচালন সমিতি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।

Advertisement

কলেজ বন্ধ হওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার ছাত্রদের একাংশ অবশ্য দোষারোপ করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাঁদের বক্তব্য, কলেজের পড়াশোনা বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছেন। কলেজের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি সায়ক চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রেক্টরের সঙ্গে শুধু কথা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি তো কলেজে একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন। তাই কথা না বলে এখন আমাদের বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ তুলছেন।’’ বিক্ষোভকারী ছাত্রদের একাংশ জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার কলেজের সেনেটের বৈঠক ছিল। একমাত্র সেনেটের বৈঠকেই ছাত্র প্রতিনিধি পরিচালন সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কিন্তু সেই বৈঠকে রেক্টর উপস্থিত ছিলেন না। তিনি চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, বৈঠকে থাকতে পারবেন না। ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ, জন আব্রাহাম ছাত্রদের মুখোমুখি হতে চান না। তাই তিনি সেনেটের বৈঠকে আসেননি। অথচ ভবন তৈরির বৈঠকে আসতে পেরেছেন রেক্টর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র অভিযোগ তুলেছেন, ভবন তৈরির সঙ্গে আর্থিক লেনদেন জড়িত। যেহেতু কলেজের অধ্যক্ষ এখন কেউ নেই, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উনি দুর্নীতি করতে চাইছেন।

এ দিন যদিও কলেজের আর এক অংশ বলছে, এই সব ঘটনার পিছনে রয়েছে রাজনীতি এবং ক্ষমতা দখলের লড়াই। সেই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ছাত্র ভর্তিই এই সংঘাতের মূলে। যা নিয়ে রাজ্যের দুই মন্ত্রীর কাজিয়ার জেরে কলেজ ছেড়েছিলেন অধ্যক্ষ অমিত আব্রাহাম। কে, কটা আসন ‘বিক্রি’ করতে পারবেন, তা নিয়েই দুই মন্ত্রী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত চলছিল। অভিযোগ, আসলে শাসক দলের দুই গোষ্ঠী কলেজ দখল রাখার জন্য লড়াই করছেন। এ বার ভবন তৈরিকে সামনে রেখে দুই গোষ্ঠী ফের সংঘাতে নেমেছে। পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠী হওয়ায় রাজ্যের শাসক দলের এক মন্ত্রী চাননি কলেজে জন আব্রাহাম কোনও পদে বহাল থাকুন। তাই তিনি ছাত্রদের উস্কানি দিচ্ছেন। শাসক দলের যে শীর্ষ নেতা এবং মন্ত্রীর কাছের লোক বর্তমান রেক্টর, সেই মন্ত্রী এই ঘটনায় খুবই ক্ষুব্ধ। তিনি বলেছেন, ‘‘যাঁরা বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা তো কলেজের বাইরের ছেলে। পুলিশ ডেকে তাঁদের ধরিয়ে দেওয়া উচিত।’’

কলেজের অন্দরে ঘুরছে আরও একটি কথা। কেউ কেউ বলছেন, দুই মন্ত্রীর যেমন কাজিয়া আছে, তেমনই আবার এক মন্ত্রীর দুই গোষ্ঠীর মধ্যেও চলছে লড়াই। যে যাঁর নেতার কাছে নিজের ক্ষমতা দেখাতে চাইছেন। তাই সামান্য ঘটনাতেও বাইরের নেতাদের উস্কানি পেয়ে ছাত্রেরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করছেন।

যদিও এই সব রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। রেক্টর জন আব্রাহামের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি, উত্তর মেলেনি এসএসএসেরও।

কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে এলাকার বিধায়ক ও রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, ‘‘কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলব না।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলেজের ভিতরের বিষয়ে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সরকারের সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন অবশ্যই সাহায্য করবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement