অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস
কলকাতা মেট্রোয় ‘টাইম ট্রাভেল’! গত শনিবার মেট্রো করে বাড়ি ফেরার সময় এমনই আশ্চর্যজনক ঘটনার ‘সাক্ষী’ রইলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী। কল্পবিজ্ঞান থেকে বাস্তব— টাইম ট্রাভেল নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে দেশ-বিদেশে। হয়েছে নানা পরীক্ষানিরীক্ষাও।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের ‘জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি’ আবিষ্কারের পর নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছিল। কিন্তু এখনও ‘টাইম ট্রাভেল’ কল্পবিজ্ঞানেই আটকে রয়েছে।
গত শনিবার কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’ (আইসিএসপি)-এর অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তীর সঙ্গে যা ঘটল, তার সঙ্গে টাইম ট্রাভেলেরই তুলনা টেনেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তাঁর অভিজ্ঞতার কথা কলকাতা মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজারকে চিঠি লিখেও জানিয়েছেন।
সে দিন ঠিক কী ঘটেছিল? সত্যিই কি তিনি টাইম ট্রাভেল করেছিলেন? শনিবার রবীন্দ্রসদনে একটি অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন সন্দীপবাবু। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রীও। ওই অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার জন্য তিনি রবীন্দ্রসদন স্টেশন থেকে কবি সুভাষের জন্য সন্ধ্যা ৫.৫৯ মিনিটে টোকেন কাটেন। এ জন্য তিনি নগদ ২০ টাকা দেন। তাঁর স্ত্রী যে হেতু প্রায়ই মেট্রোতে যাতায়াত করেন, তাই তাঁর কাছে আগে থেকে মেট্রোর ‘মান্থলি কার্ড’ ছিল।
আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, ভাঙচুর সিঁথি থানায়
দু’জনে সন্ধ্যা ৬টা বেজে ১ মিনিটে ট্রেনে ওঠেন। সন্দীপবাবুর দাবি, ৬.২৪ মিনিটে ট্রেন পৌঁছয় শহিদ ক্ষুদিরাম স্ট্রেশনে। তাঁর স্ত্রী কার্ড পাঞ্চ করে স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেলেও, সন্দীপবাবুর টোকেনে গেট খুলছিল না। তখন মেট্রো কর্মীরা চলে আসেন। তাঁরা জানান, সন্দীপবাবু বেলগাছিয়ার টিকিট কেটে ঢুকেছিলেন, ফলে এ ভাবে বেরতে পারবেন না। তাঁকে জরিমানা দিতে হবে।
সন্দীপবাবুর অবাক হওয়া তখনও বাকি ছিল। তিনি ওই কর্মীকে বললেন, “আমি স্ত্রীর সঙ্গে কবি সুভাষের টিকিট কাটলাম। আপনারা বলছেন বেলগাছিয়ার দিকের টিকিট কেটেছি। হতেই পারে না!’’
এর পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় স্টেশন মাস্টারের ঘরে। সন্দীপবাবুর দাবি, স্টেশন মাস্টার তাঁকে বলেন, “১৮টা ৫৮ মিনিট (অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে) ওই টিকিট কাটা হয়েছে।” তখন তার প্রতিবাদ করেন সন্দীপবাবু বলেন, “ঠিক বলছেন তো? আমি ৬টা ৫৮ মিনিটে কী করে টিকিট কাটব? এখন তো ৬টা ৪৮ বাজে। আমি ৬ নাগাদ মেট্রোতে উঠেছিলাম। এখানে ৬টা ২৪ মিনিটে নেমেছি। আপনি সিসি ক্যামেরা খতিয়ে দেখুন। ভুল হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস: ‘আমাদের বাঁচান’, হাত জড়ো করে মোদীর কাছে আর্তি বাঙালির
কিন্তু তিনি কিছু শুনতে রাজি হননি। সন্দীপবাবু এর পর ২৫৫ টাকা জরিমানা দিয়ে তাঁকে বলেন, ‘‘আমি কি তা হলে টাইম ট্রাভেল করে আপনার সামনে দাঁড়িয়েছি?’’
এই ঘটনার কথা সবিস্তার জানিয়ে সন্দীপবাবু কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজারকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি মেট্রো কর্তাদের কানেও পৌঁছেছে।
সোমবার এক মেট্রো কর্তা বলেন, “ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভুল হলে ওঁর কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেব আমরা।”