Kolkata Municipality

আছে খাতা-বই থেকে মিড-ডে মিল, তবু নেই পড়ুয়া

সাইনবোর্ড না দেখলে বোঝার উপায়ই নেই যে, বিবর্ণ, ভাঙাচোরা সেই বাড়িতেই চলছে পুরসভার স্কুল।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২০ ১০:০০
Share:

দুর্দশা: গৌরীবাড়ি লেনে পুরসভার স্কুলে এই ক’জনকে নিয়েই চলছে ক্লাস। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। কড়া নাড়ার পরে খুললেন এক মধ্যবয়সি ব্যক্তি। স্যাঁতসেতে, ভাঙাচোরা, সুনসান তিনতলা একটি বাড়ি। মধ্যবয়সি জানালেন, ১১বি গৌরীবাড়ি লেনের ওই বাড়িতেই দু’টি ঘর নিয়ে চলছে ‘কলকাতা পৌর নিগম প্রাথমিক বিদ্যালয়’। ওই সাইনবোর্ড না দেখলে বোঝার উপায়ই নেই যে, বিবর্ণ, ভাঙাচোরা সেই বাড়িতেই চলছে পুরসভার স্কুল।

Advertisement

শুধু গৌরীবাড়ি লেনের ওই স্কুলটিই নয়, এ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, কলকাতা পুরসভা পরিচালিত বহু প্রাথমিক স্কুলেরই এমন বেহাল দশা।

গৌরীবাড়ি লেনের ভাড়া বাড়িতে চলা ওই স্কুলে শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার মোট সংখ্যা ২১। এর মধ্যে শিশু শ্রেণিতে পাঁচ জন, প্রথম শ্রেণিতে চার জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছ’জন, তৃতীয় শ্রেণিতে তিন জন, চতুর্থ শ্রেণিতে দু’জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে এক জন পড়ে। যিনি দরজা খুলে দিয়েছিলেন, সেই ভবতোষ রায় ছাড়া এই স্কুলে রয়েছেন আর মাত্র এক জন শিক্ষক।

Advertisement

খাতায় কলমে ২১ জন পড়ুয়া। কিন্তু সেই ২১ জনই বা আসছে কোথায়? শিক্ষকেরা জানালেন, যে ক’জন পড়ুয়া স্কুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের অধিকাংশই এসেছে মিড-ডে মিলের টানে। মিড-ডে মিল খাওয়া হয়ে গেলেই দে ছুট। তার পরেই আবার কাগজকুড়ানির কাজে লেগে পড়তে হবে তাদের। ভবতোষবাবু বললেন, ‘‘প্রতিদিনই বাড়ি থেকে ডেকে আনতে হয় পড়ুয়াদের। বিধাননগর রোড স্টেশন থেকে কিছু পথশিশুকেও রোজ স্কুলে নিয়ে আসি।’’

শহর জুড়ে রয়েছে ২৩৫টি পুরসভা পরিচালিত স্কুল। যে সমস্ত স্কুল ভাড়া বাড়িতে চলছে, সেগুলির অধিকাংশেরই অবস্থা বেশ খারাপ। তুলনায় ভাল অবস্থায় পুরসভার নিজস্ব ভবনে চলা স্কুলগুলি। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট এলাকার একটি স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, স্কুলবাড়িটি নীল-সাদা রং করার কাজ চলছে। কিন্তু প্রশ্ন, নতুন রং হলেও তাতে পড়ুয়ার সংখ্যা কি বাড়ছে?

১৩ নম্বর ক্যানাল ইস্ট রোডের পুর স্কুলে নীল-সাদা রং করা হয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর নতুন ভবনের উদ্বোধন করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ঘটা করে উদ্বোধন হওয়া ওই স্কুলেও পড়ুয়া-সংখ্যা খুব কম, জানালেন শিক্ষক সুকান্ত রায়। শিশু বিভাগ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সেই সংখ্যাটা মেরেকেটে ২০-২৫। তাই শিশু ও প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের একসঙ্গে বসিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়। বাকি শ্রেণিগুলিরও ক্লাস হয় একসঙ্গে। পড়ুয়ার সংখ্যা হাতে গোনা হলেও স্কুলে রয়েছে কম্পিউটার রুম।

উত্তর কলকাতার আর এক পুর স্কুল রয়েছে বলরাম ঘোষ স্ট্রিটে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এক জন পড়ুয়াও নেই। শিক্ষিকা রয়েছেন মাত্র এক জন। তিনি বললেন, ‘‘পড়ুয়ারা শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়েছে। তাই কেউ নেই।’’ তবে স্কুলের এক কর্মী জানালেন, রোজ বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়ুয়াদের অনেককেই ডেকে আনতে হয়।

পুরসভার স্কুলগুলিতে কিন্তু পরিষেবার কোনও অভাব নেই। মেয়র পারিষদ (স্কুল) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বই থেকে শুরু করে খাতা, পেন, পেনসিল, পেনসিল পাউচ, বইয়ের ব্যাগ, জলের বোতল, বর্ষাতি, এমনকি মেয়েদের চুল বাঁধার ফিতে-ক্লিপও দেওয়া হয়। এ ছাড়া, মিড-ডে মিল তো আছেই।’’

উত্তর কলকাতার একটি পুর স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বললেন, ‘‘মিড-ডে মিল ছাড়াও খাতা, পেনসিল, বইয়ের ব্যাগ-সহ এত কিছু পড়ুয়াদের দেওয়া হয়। তাতেও পর্যাপ্ত পড়ুয়া হচ্ছে না। সারা দিন শুধু শুধু স্কুলে বসে থেকে মাঝেমধ্যে খুব হতাশ লাগে। এত খরচ করে এই স্কুলগুলি পুরসভা চালাচ্ছে কেন?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement