R G Kar Hospital Incident

সরকারি অনুষ্ঠান আপাতত স্থগিত, আরজি কর আবহে নিচু তারে শিক্ষক দিবস পালন করবে বিভিন্ন স্কুল

যোধপুর পার্ক বয়েজ় হাইস্কুলে প্রতি বছর শিক্ষক দিবসে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা পাঠ্যক্রমের কোনও একটি বিষয় পড়ায় নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৪
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়া তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে চলতি বছরের শিক্ষক দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রতি বছর ৫ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান হয়। শহরের বিভিন্ন স্কুল অবশ্য জানাচ্ছে, তারা শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান পুরোপুরি বাতিল করছে না। তবে, আর জি কর-কাণ্ডের আবহে এ বারের অনুষ্ঠান হবে কিছুটা ভিন্ন। কোনও স্কুলের পড়ুয়ারা ওই দিন কালো ব্যাজ পরে আসবে। কোনও স্কুলে আবার পড়ুয়ারা ছোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজ সচেতনতার বার্তা দেবে।

Advertisement

যেমন, যোধপুর পার্ক বয়েজ় হাইস্কুলে প্রতি বছর শিক্ষক দিবসে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা পাঠ্যক্রমের কোনও একটি বিষয় পড়ায় নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের। ওই স্কুলের প্রধান
শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বললেন, ‘‘এ বার পাঠ্যক্রমের পড়া নয়। উঁচু ক্লাসের দাদারা তাদের ভাইদের মূল্যবোধের পাঠ দেবে। ওই পড়ুয়াদের বলা হবে, সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে মুখ ফেরানো নয়, বরং নিজেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি
করতে হবে আঠারো বছরের কম বয়স থেকেই।’’

তিনি জানান,
অন্যান্য বার শিক্ষক দিবসে পড়ুয়ারা শিক্ষকদের বিভিন্ন উপহার দেয়। এ বার শিক্ষকেরা বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে কোনও উপহার নয়। তা-ও কিছু দিতে হলে সামান্য কিছু দেওয়া যেতে পারে।

Advertisement

যদি রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তা হলে ১৮ বছরের নীচেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে তাঁর ছাত্রীদের বার্তা দিয়েছিলেন হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোনালিসা মাইতি। মোনালিসা
বলেন, ‘‘১৮ বছরের নীচে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা আবার বলব শিক্ষক দিবসে। সেই সঙ্গে পড়ুয়াদের মূল্যবোধের শিক্ষাও দেব। তবে এ বার আমাদের স্কুলে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। ছাত্রীরা কালো ব্যাজ পরে সে দিন আসবে।’’

‘আমার বোন আমার দিদি থাকুক নিরাপদে/তাকে যেন ছুঁতে না পারে দানবে, শ্বাপদে।’ এ বারের শিক্ষক দিবসে এই বিষয়-ভাবনাকে সামনে রেখে অনুষ্ঠান করবে বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির পড়ুয়ারা। এমনটাই জানালেন সেখানকার শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এর অর্থ এই নয় যে, শুধুমাত্র মেয়েরাই
নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। ছেলেরাও কিন্তু নির্যাতিত হয়। তবে, যে হেতু আর জি করের ঘটনার আবহে এ বার শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান, তাই মেয়েদের কথাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার কথাও তুলে ধরা হবে।’’ সুমনা জানান, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা লাল ও কালো রং দিয়ে একটি কার্ড তৈরি করেছে। সেই কার্ড তারা ৫ তারিখ শিক্ষকদের দেবে। ওই কার্ডের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে শোক ও ঘৃণার বার্তা।

উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান করবে না। তবে পঞ্চম, ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ারা যদি
শিক্ষক দিবস পালন করতে চায়, তা হলে তাঁরা বাধা দেবেন না বলে জানিয়েছেন ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক
রাজা দে। তিনি জানান, ছোট পড়ুয়ারা সারা বছর তাকিয়ে থাকে এই অনুষ্ঠানের দিকে। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক
পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, ‘‘এ বারের শিক্ষক দিবসে আমরা পড়ুয়াদের শ্রদ্ধা, সম্মান ও সহিষ্ণুতার পাঠ দেব। আজকের এমন পরিস্থিতিতে যা অত্যন্ত জরুরি।’’

পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা জানিয়েছেন,
ছোট করে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান করবেন তাঁরা। সুপ্রিয় বলেন, ‘‘দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের এই বছরই
স্কুলজীবন শেষ হচ্ছে। শেষ বছরের শিক্ষক দিবসে উপহার দেয় ওরা। ওদের উপহার নিতে অস্বীকার করবেন না শিক্ষকেরা। তবে আমরা বলে দিয়েছি, সেই উপহার যেন খুব
সামান্য হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement