ছবি সংগৃহীত
সকাল হোক বা বিকেল, বাড়ি থেকে বেরিয়ে খেলতে যাওয়ার জো নেই। অনলাইন ক্লাসের পরেও আবার সেই কম্পিউটার, ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে চলছে গেম খেলা। কেউ আবার টিভিতে দেখছে করোনা নিয়ে নানা খবর। অতিমারির এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কতটা সচেতন তাদের বাবা-মায়েরা?
ছাত্রছাত্রীদের অনলাইন ক্লাস করানোর পাশাপাশি অভিভাবকদের সঙ্গেও এই সব বিষয়ে আলোচনা করতে উদ্যোগী হয়েছে শহরের বেশ কিছু স্কুল। কোনও স্কুল বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরামর্শ দিচ্ছে অভিভাবকদের। কোথাও আবার শিক্ষক-শিক্ষিকারাই বলছেন কথা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকদের ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত, সন্তানেরা একটানা বহুদিন বাড়িতে বন্দি থাকার ফলে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়লে কী করণীয়, এ সব নিয়েই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অভিভাবকদের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ কাউন্সেলর। ওই স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘টানা অনেক দিন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে পড়ুয়াদের মনে অবসাদ তৈরি হতে পারে। সে সব কাটিয়ে কী ভাবে ছেলেমেয়েদের পজ়িটিভ রাখা যায়, তা নিয়েও বিশেষজ্ঞেরা অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। কবে কোন ক্লাসের অভিভাবকেরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবেন, তার একটা রুটিনও তৈরি হয়েছে।’’
লকডাউন শুরু হওয়ার আগে, অর্থাৎ মার্চের প্রথম দিকে সাইকেল চালানো শিখতে শুরু করেছিল ভবানীপুরের বাসিন্দা, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী অর্পিতা রায়। লকডাউনের জেরে সেই শেখা আর হয়ে ওঠেনি। মাকে সে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে, কবে আবার সাইকেল নিয়ে পার্কে যাবে? অর্পিতার মা বললেন, ‘‘মেয়ের এই প্রশ্নের কী জবাব দেব, জানি না। ওর মনখারাপ তো কাটছেই না। শুধু ঘরবন্দি হয়ে অনলাইন ক্লাস করাটাই কি একটা বাচ্চার জীবন হতে পারে?’’
নিউ টাউন স্কুলের কর্মকর্তা সুনীল আগরওয়াল এবং শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, অভিভাবকদের প্রায়ই এমন নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্যই অনলাইনে কাউন্সেলরদের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে অভিভাবকদের। ব্রততী বলেন, ‘‘অনেক সময়ে বিশেষজ্ঞ কাউন্সেলর নন, আমরা যাঁরা পড়াই, তাঁরাই অভিভাবকদের নানা সমস্যার কথা শুনি। সমাধানেরও চেষ্টা করি।’’
এপিজে স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবক জানান, ওই স্কুলেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিশেষজ্ঞদের প্যানেল বসানো হয়েছিল। অতিমারির পরিস্থিতিতে শিশুদের মন কী ভাবে ভাল রাখা যায়, সেখানে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বেসরকারি স্কুলগুলির পাশাপাশি এ নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে সরকারি স্কুলও। হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বললেন, ‘‘মিড-ডে মিল নিতে অভিভাবকেরা স্কুলে আসেন। তখনই তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে জেনে নিচ্ছি, পড়ুয়ারা কেমন আছে। মানসিক বা অন্য কোনও সমস্যা থাকলে তা সমাধানেরও চেষ্টা করেছি।’’