কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শৌচাগার সংস্কারে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে চার্জ গঠনের পরে শুনানির সময়ে আদালতে হাজিরা দিতে হবে অভিযোগকারী স্কুলশিক্ষকদেরও। ২০১৭-’২০ সালের মধ্যে শহরে ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৩টি শৌচাগার সংস্কারের কাজে প্রতিটির জন্য ৬০ হাজার টাকা করে খরচ দেখানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু পুর তদন্তে উঠে এসেছে, ওই টাকার বেশির ভাগই শৌচাগার সংস্কারের কাজে লাগানো হয়নি। এই ঘটনায় পুর শিক্ষা বিভাগের তদানীন্তন দুই আধিকারিক-সহ আরও দুই কর্মীকে ইতিমধ্যেই কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘চার জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পার্সোনেল ও আইন বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যে শিক্ষকেরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদেরও হাজিরা দিতে হবে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, চার্জ গঠনের সময়ে কোন কোন ধারা যুক্ত করা হবে, সে বিষয়ে শিক্ষা বিভাগের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে পার্সোনেল বিভাগ।
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ প্রধান শিক্ষক পুর শিক্ষা বিভাগের কাছে অভিযোগে জানিয়েছিলেন, তাঁদের দিয়ে জোর করে রসিদে সই করানো হয়েছিল। সই না করলে দূরের স্কুলে বদলি করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এমনকি, বাম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের তরফে তদানীন্তন যুগ্ম পুর কমিশনারকে চিঠি লিখেও কাজ হয়নি।
পুরসভা সূত্রের খবর, চার্জ গঠনের পরে শুনানি শুরু হবে শীঘ্রই। শুনানির সময়ে তাই ওই শিক্ষকদেরও ডাকা হবে। তাঁরা লিখিত আকারে যে অভিযোগ করেছেন, তা শুনানিতে যাচাই করা হবে। সেখানে পুরসভা নিযুক্ত তদন্তকারী আধিকারিক বিচারকের ভূমিকায় থাকবেন। এক পুর আধিকারিক বলেন, ‘‘ঠিকাদারদের দেওয়া রসিদে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলির প্রধান শিক্ষকদের সই নকল করার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের নকল প্যাড তৈরি করে হিসাব দেখানো হয়েছিল। অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তাই শুনানিতে তাঁদেরও ডাকা হবে।’’
বছর পাঁচেক আগে শৌচাগার সংস্কারে দুর্নীতির আঁচ পেয়ে পুর কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেও কাজ হয়নি। দীর্ঘ দিন পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ায় খুশি বাম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ‘কলিকাতা পৌর শিক্ষক ও কর্মী সঙ্ঘ’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুনানিতে শিক্ষকদের ডাকলে অবশ্যই তাঁরা যাবেন। তাঁদের ঢাল করে যে অপরাধমূলক কাজ করানো হয়েছিল, সেটা তাঁরা বলবেন। আমাকে ডাকলেও হাজিরা দিতে চাই। পাঁচ বছর আগে প্রতিবাদ করেও কাজ হয়নি। এই দুর্নীতিতে দোষীদের শাস্তির দাবিতে যত দূর যেতে হয় যাব।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পার্সোনেল ও আইন বিভাগ। এ বিষয়ে দুই বিভাগের আধিকারিকেরা ইতিমধ্যেই পরস্পরের সঙ্গে এক দফা বৈঠকও করেছেন। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘দুর্নীতি যে হয়েছে, সেটা স্পষ্ট। আমরা বিষয়টি একেবারেই লঘু করে দেখছি না।’’