বছরে যেখানে ২০০টি ক্লাসে উপস্থিতির নিয়ম, সেখানে তাঁদের পাওয়া যায় একশোরও কম ক্লাসে। উপস্থিতির দিনগুলিতেও আবার ঘুরে বেড়িয়েই দিন কাটে তাঁদের। কেউ আবার সাড়ে চার বছর স্কুলে না আসার পরে সম্প্রতি কাজে যোগ দিয়েছেন। এঁরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর।
পর্যাপ্ত হাজিরা না থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসার দাবিতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের আন্দোলন চলে প্রায়ই। এ বারে নির্ধারিত ক্লাসের ৫০ শতাংশও হাজিরা না থাকার কারণ দর্শাতে বলা হল এক দল শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
বাংলা মাধ্যমের স্কুল বাঁচাতে যেখানে পঠনপাঠনের মানোন্নয়নে জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার, সেখানে শিক্ষকদের এই উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্কুল শিক্ষা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, গোটা রাজ্য জুড়ে শিক্ষকদের একাংশের এমনই হাল।
বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্কুলে যান পরিদর্শকেরা। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, ওই জেলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকদের একাংশ নিয়মিত ক্লাসে আসেন না। বছরের পর বছর তাঁরা ক্লাস না করেই বেতন নিচ্ছেন। এর জেরে পড়ুয়ারা বঞ্চিত হয়েছে। নানা কারণে প্রধান শিক্ষকেরাও ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারেননি। কিন্তু জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের তরফে পরিদর্শন করতে গিয়ে নজরে আসে বিষয়টি। এর পরেই ওই শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেখা গিয়েছে, একটি স্কুলে সাড়ে চার বছর ধরে আসেনই না এক শিক্ষক। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের ঠিক পথে নিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব। আমরা বিপথে গেলে, সেটা দুঃখের।’’ বিকাশ ভবনের এক কর্তা জানান, এই চিত্র শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই নয়, গোটা রাজ্যেই কমবেশি দেখা যায়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন জেলায় শিক্ষকেরা ক্লাসে ফাঁকি দিয়ে চলেছেন।
অথচ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় একাধিকবার শিক্ষকদের নিয়ম মেনে ক্লাস করার কথা বলেন। কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশ যে কিছু শিক্ষক কানেই তুলছেন না, সেটা মানছেন কর্তারা।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা জানান, বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ক্লাসের সময় ঠিক করা হয়। কিন্তু শিক্ষকেরা যদি নিজেদের দায়িত্ব ঠিক করে পালন না করেন, তা হলে সেটা আক্ষেপের।