saraswati puja

করোনা-বিধি মানল ছোটরা, পরোয়া নেই বড়দের

যাদের নিয়ে ভয় তুলনায় বেশি, সরস্বতী পুজোর দিন স্কুলে এসে করোনা-বিধি মেনে চলল সেই ছোটরা।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৪৭
Share:

দূরত্ব-বিধি না মেনে সরস্বতী পুজোর অঞ্জলিতে হাজির কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। কারও মুখে নেই মাস্কও। নিজস্ব চিত্র।

যাদের নিয়ে ভয় তুলনায় বেশি, সরস্বতী পুজোর দিন স্কুলে এসে করোনা-বিধি মেনে চলল সেই ছোটরা। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের দাদা-দিদিরা অধিকাংশই হেলায় উড়িয়ে দিলেন সব নিয়মকানুন। দিনের শেষে দেখা গেল, বিধি মেনে সংযত থাকার পরীক্ষায় কচিকাঁচারাই জয়ী।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে কমলা গার্লস স্কুলের সামনে জড়ো হয়েছিল দশম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা। স্কুলের
গেট বন্ধ। ওই ছাত্রীরা জানাল, করোনার জন্য এ বার কোনও পড়ুয়াই স্কুলে ঢুকতে পারছে না। স্কুলের লোহার গেটেই রয়েছে একটি গোল ফুটো। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তাতে চোখ রেখেই নিজেদের
স্কুলের সরস্বতী প্রতিমা দর্শন সেরে নিচ্ছিল পরমা সাহা, পৌলোমী চক্রবর্তী, রূপসা মুখোপাধ্যায়রা। ওই ছাত্রীরা জানাল, করোনা-বিধি মেনে পুজো হচ্ছে বলে তাদের স্কুলে ঢোকা বারণ। তবু তারা স্কুলে এসেছে বাইরে থেকে পুজোটা দেখবে বলে। পরমা বলল, ‘‘এই দিনটায় আমরা প্রতি বারই স্কুলে আসি। এ বার করোনা-বিধি মেনে পুজো হচ্ছে। তাই বলে কি স্কুলের প্রতিমা দেখব না? সেই কারণেই চলে এসেছি। তবে ভিতরে ঢুকব না। বাইরে থেকেই পুজো দেখে চলে যাব।’’ দেখা গেল, স্কুলের বাইরে দাঁড়ানো অধিকাংশ ছাত্রীর মুখেই রয়েছে মাস্ক।

যাদবপুর বিদ্যাপীঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও স্কুলের গেট বন্ধ। রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে বাইরে দাঁড়ানো পড়ুয়াদের প্রসাদ দেওয়া হচ্ছে। বাইরে থেকেই প্রতিমা দর্শন সারছে পড়ুয়ারা। প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘যে পড়ুয়ারা পুজো পরিচালনা করছে, তারাই শুধু স্কুলের ভিতর আছে। যারা অঞ্জলি দিতে চায় বলে জানিয়েছে, তাদের ভাগে ভাগে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। সকলেই মাস্ক পরে অঞ্জলি দিচ্ছে। বাকিরা বাইরে থেকেই প্রসাদ পাচ্ছে।’’ স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে কয়েক জন ছাত্র জানাল, করোনার মধ্যেও কী ভাবে পড়াশোনা হয়েছে, পুজোর সজ্জায় সেটাই তুলে ধরা হয়েছে। সেটা দেখতেই বিধি মেনে তারা স্কুলে এসেছে।

Advertisement

হেয়ার স্কুলে আবার মূল মণ্ডপের সামনে বেশ কিছুটা অংশ বেঞ্চ দিয়ে ঘেরা। শিক্ষকেরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই ঘেরা অংশের ভিতরে কেউ ঢুকতে পারবে না। আর স্কুলের ভিতর মাস্ক পরতেই হবে।

অন্য দিকে, পুরো উল্টো চিত্র দেখা গেল বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। আশুতোষ কলেজে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড় উপচে পড়েছে। কলেজে তৃণমূল এবং কংগ্রেস, দুই দলের সমর্থকেরা দুটো আলাদা পুজো করছেন। গেটের সামনে ভিড় জমানো বেশির ভাগ পড়ুয়ার মুখেই মাস্ক নেই। ভিড়ের মধ্যেই জটলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। মদনবাবুর মুখেও ছিল না মাস্ক। আশুতোষ কলেজের প্রাক্তনী হিসেবে মদনবাবু তাঁর ছাত্রজীবনের বিভিন্ন গল্প বলছিলেন। পড়ুয়াদের অনুরোধে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গাইছিলেন ‘লাভলি’, যে গানটা সম্প্রতি বার বারই গেয়েছেন তিনি। তার পরে ধরলেন ‘মনে পড়ে রুবি রায়’ এবং ‘আমার সোনার বাংলা।’ মদনবাবুকে ঘিরে যাঁরা নিজস্বী তুলছিলেন, তাঁদেরও কারও মুখে মাস্ক দেখা গেল না। মদনবাবুকে জিজ্ঞাসা করা গেল, আপনার মাস্ক কোথায়? প্রশ্ন শুনেই অবশ্য পকেট থেকে একটি মাস্ক বার করে পরে নিলেন তিনি।

আশুতোষ কলেজের ভিড়টা ধীরে ধীরে আরও বাড়ছিল। কারণ, তখনই সেখানে আসার কথা ওই কলেজের আর এক প্রাক্তনী, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। পার্থবাবু এলেন অবশ্য মাস্ক পরে। তিনি কলেজে ঢুকেই দোতলায় পুজোর জায়গায় গিয়ে বসেন। ওই ভিড়ে ঠাসা ঘরে অধিকাংশের মুখেই অবশ্য মাস্ক ছিল না। করোনার স্বাস্থ্য-বিধি মানতে যেখানে কলেজ খোলা হচ্ছে না, সেখানে সরস্বতী পুজোয় এ ভাবে করোনা-বিধি ভাঙা হচ্ছে কেন? প্রশ্ন শুনে পার্থবাবু পড়ুয়াদের ধমক দিতে অনেকেই মাস্ক পরে নিলেন। তবে বেশির ভাগ পড়ুয়াই জানালেন, ‘ফোটোসেশন’ চলছে বলে তাঁরা মাস্ক খুলে ব্যাগে রেখে দিয়েছেন।

অন্য দিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে গিয়েও দেখা গেল, অধিকাংশ পড়ুয়ার মাস্ক নেই। দুপুর ১টা নাগাদ অঞ্জলি দেওয়ার সময়েও প্রায় কারও মুখে মাস্ক ছিল না। কেন? অধিকাংশ পড়ুয়াই দাবি করলেন, মাস্ক সঙ্গেই আছে। প্রসাদ খাওয়া বা ছবি তোলার জন্য বার বার মাস্ক খুলতে হচ্ছিল। তাই সেটি ব্যাগেই রেখে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় পুজোর অনুমতি তাঁরা দেননি। ছাত্র সংসদ এখন বিলুপ্ত। ফলে কে মাস্ক পরে এসেছেন আর কে আসেননি, এ নিয়ে তাঁরা মন্তব্য করবেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement