দুর্বিষহ: নিকাশির বেহাল অবস্থার কারণে স্কুলের প্রেক্ষাগৃহে জমে রয়েছে জল। বেহালা হাইস্কুলে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
কোনও স্কুল চত্বরে জমে জল, কোথাও আবার স্কুল সংলগ্ন জায়গায় গজিয়ে ওঠা আগাছা হয়ে উঠেছে মশার আস্তানা। প্রায় স্থায়ী এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে কোনও স্কুল আবার কিনে ফেলেছে জল বার করার পাম্প। শহরেরই কিছু স্কুল ঘুরে দেখা গেল ডেঙ্গির আতঙ্ক নিয়ে পঠনপাঠন চালানোর এমন দৃশ্য।
বেহালা হাইস্কুলের মূল গেট দিয়ে ঢুকে যে নিকাশি নালা, জল জমে রয়েছে সেখানে। প্রায় প্রতিটি নিকাশি নালার এক অবস্থা। প্রেক্ষাগৃহে দর্শকাসনের সামনে জল থই থই করছে। কারণ, জল বেরোনোর পথ রুদ্ধ। এমন পরিবেশ কেন? প্রধান শিক্ষক দেবাশিস বেরা বলেন, ‘‘বৃষ্টি নামলেই চার পাশের জল স্কুলে এসে জমা হয়। ফলে একটু বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়ে যায়। স্কুলের সামনে বনমালী নস্কর রোডের ভূগর্ভস্থ নিকাশি তৈরি হয়নি।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর সঞ্চিতা মিত্রের দাবি, ‘‘বনমালি নস্কর রোডের নিকাশি নালা দখল হয়ে বাড়ি-দোকান উঠে গিয়েছে। ফলে নিচু জমিতে তৈরি বেহালা হাইস্কুল চত্বরে আশপাশের বৃষ্টির জল এসে জমা হয়।’’ তবে নিয়মিত সেই জল সরানো হয় বলেও দাবি করলেন কাউন্সিলর।
আগাছায় ভরে রয়েছে আলিপুর টাঁকশাল বিদ্যালয়ের চার পাশ। স্কুলে ঢোকার পরেই ফাঁকা জায়গায় জমে রয়েছে জল। ডেঙ্গির মশার লার্ভা জন্মানোর আদর্শ পরিবেশ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণ ঝা বলেন, ‘‘ষষ্ঠ শ্রেণির এক পড়ুয়া এ বছরেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। ডেঙ্গির আশঙ্কা নিয়েই স্কুল চলছে। বৃষ্টি হলে জল জমতে থাকে। স্কুলের আশপাশের জল বেরোনোর জন্য তিনটি নিকাশি নালা ছিল। সব ক’টা বুজে গিয়েছে।’’ দেখা গেল, স্কুলের পাশে জমা জলে তরতরিয়ে বাড়ছে আগাছা। কেন স্কুলের তরফে জমা জল পরিষ্কার করা হয় না? প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে নিকাশি নালার উপরেই নির্মাণ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা বাড়ছে। এই এলাকা মিন্ট কলোনির মধ্যে পড়ে। কলোনির অধিকাংশ বাড়িই পরিত্যক্ত। সব মিলিয়ে অবহেলিত গোটা এলাকা।’’
টাকি হাউস গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শম্পা চক্রবর্তী জানান, তাঁদের স্কুল নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। তবুও মশার উপদ্রব রয়েছে। মাসখানেক আগে স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী এবং তাঁর মেয়ের ডেঙ্গি হয়েছিল। শম্পা বলেন, ‘‘স্কুল সংলগ্ন রাজাবাজার ট্রাম ডিপো এবং একটি পাঠাগার রয়েছে। ওই দু’টি জায়গা, বিশেষ করে ট্রাম ডিপোটি আগাছায় ভরে গিয়েছে। সেখান থেকে এলাকায় মশা ছড়াচ্ছে। স্কুলের জানলা বন্ধ রেখেও লাভ হচ্ছে না। তবে স্কুলে এখন নিয়মিত ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে।’’
বৃষ্টি হলেই ভিআইপি রোডের জল এসে জমা হয় কেষ্টপুরের দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যালয় চত্বরে। সেই জমা জলে মশার বাড়বাড়ন্ত থেকে নিস্তার পেতে স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেই পাম্প কিনেছেন। ওই পাম্পের সাহায্যেই জল বার করতে হচ্ছে। প্রধান শিক্ষিকা নাজ়রিন নাহার বলেন,‘‘এখন এমন অবস্থা যে, পাম্প কিনেও হচ্ছে না। স্কুলের ভিতরের জমা জল নামাতে পাম্প ভাড়াও করতে হচ্ছে। মশার উপদ্রব কমাতে এর পাশাপাশি নিয়মিত ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে স্কুলে। বিধাননগর পুরসভার তরফ থেকেও ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে।’’