যন্ত্রণা: কলের সামনে বালতি নিয়ে লাইন পড়লেও জল নেই। মঙ্গলবার, দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
ঘোলা জলের আবর্তে সাধারণ মানুষ তো বটেই, নাকানিচোবানি খাচ্ছেন পুরকর্তারাও। দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ মজুমদার যেমন জানিয়েছেন, পানীয় জল তো কিনে খাচ্ছেনই, দৈনন্দিন ব্যবহার্য জলও পর্যাপ্ত পাচ্ছেন না তিনি। তবে প্রদীপবাবু জানান, মঙ্গলবার দুপুরের পরে কিছুটা জল পেয়েছেন তাঁরা।
দমদমের তিনটি পুরসভা এলাকায় বাসিন্দাদের এখন এমনই অবস্থা। সকাল থেকেই শুরু হচ্ছে পানীয় জল কেনার হুড়োহুড়ি। চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, দোকানিরাও জোগান দিয়ে কুলোতে পারছেন না। কেউ কেউ আবার সুযোগ বুঝে চড়া দাম হাঁকছেন জলের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সমস্যা কত দিন চলবে, সে ব্যাপারে তাঁরা অন্ধকারে। পুরসভা কিছুই বলছে না। দমদম, দক্ষিণ দমদম ও উত্তর দমদম— তিন পুরসভার তরফেই জানানো হয়েছে, পাম্প চালিয়ে ভূগর্ভ থেকে জল তুলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ, মঙ্গলবারও তীব্র জলকষ্টে ভুগেছেন তাঁরা।
মাঠকল এলাকার বাসিন্দা ভোলা দাস নামে এক ব্যক্তি জানালেন, বাড়িতে ছ’-সাত জন লোক। সকাল থেকে এক ফোঁটা জল নেই। ৫০ টাকায় পানীয় জল কিনেছেন। দুপুরের পরে সামান্য জল এসেছে কলে। পাতিপুকুরের নমিতা সরকার বললেন, ‘‘বেশি টাকা দিয়েও খাওয়ার জল পাচ্ছি না।’’ তিন পুরসভারই অবশ্য দাবি, জল সরবরাহ বন্ধ ছিল না। তবে চাহিদা অনুযায়ী জল পাঠানো যায়নি। তাদের আশা, দু’-এক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার মুখ্য প্রশাসক জানান, ওই পুর এলাকায় জলের বেশির ভাগটাই আসে কামারহাটি প্রকল্প থেকে। বাকিটা কলকাতা পুরসভা দেয়। ঘোলা জল থেকে যাতে রোগ না ছড়ায়, তার জন্য পাম্প চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও তা চাহিদার তুলনায় কম। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের সমস্যা সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। প্রশাসন দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’’
একই সমস্যা উত্তর দমদমের ১০-১২টি ওয়ার্ডেও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানীয় জল বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। সব সময়ে তা-ও মিলছে না। দৈনন্দিন কাজকর্ম চালানোর জন্য যেটুকু জল দরকার, তা-ও আসছে না। যাঁদের বাড়িতে নলকূপ বা কুয়ো আছে, তাঁরা তবু কিছুটা জল পাচ্ছেন। কিন্তু যাঁরা পুরসভার জলের উপরেই পুরোপুরি নির্ভরশীল, তাঁদের সমস্যা বেশি। পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে পুরসভার মুখ্য প্রশাসক বিধান বিশ্বাস জানান, ভূগর্ভের জল তুলে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ ছাড়া, জলের ট্যাঙ্কারও পাঠানো হচ্ছে। তবে সমস্যার সমাধান তাঁদের হাতে নেই।
দমদম পুরসভার ওয়ার্ডগুলিতেও চলছে জলের সঙ্কট। প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য বরুণ নট্ট জানান, বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে সমস্যা রয়েছে। পুরসভা সব ক’টি পাম্প চালিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তুলে সরবরাহ করছে। পুরকর্তারা জানান, শুধু ওই তিন পুরসভা নয়, গঙ্গার জলের উপরে নির্ভরশীল উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক পুরসভা এই সমস্যায় পড়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, হঠাৎ কেন জল বন্ধ হল, কবেই বা জল আসবে, সে ব্যাপারে কিছুই জানতে পারছেন না তাঁরা। পুরসভাগুলির বক্তব্য, আচমকা এমন ঘটে যাওয়ায় জানানোর সুযোগ হয়নি। তা ছাড়া, জল নিয়ে আতঙ্ক যাতে না ছড়ায়, সেটাও মাথায় রাখতে হয়েছে।