• শ্যামবাজার: পাঁচমাথার মোড় থেকে ভূপেন বসু অ্যাভিনিউয়ে ঢুকে বাঁ দিকের গেট দিয়ে পাতালে নেমে দেখা গেল, ছিটেফোঁটা কড়াকড়ির চিহ্ন নেই। ক’দিন আগেও দৃশ্যমান একমাত্র মেটাল ডিটেক্টর দরজাটি খুলে নেওয়া হয়েছে। উল্টো দিকের গেট দিয়ে নামলে, চোখে পড়বে মোটে এক জন নিরাপত্তারক্ষী। আর মণীন্দ্র কলেজের দিকের ‘স্ক্যানার’টি বিকল অবস্থায় নিস্পন্দ হয়ে পড়ে। নিছকই স্টেশনের ‘শোভা-বর্ধন’ করছে। একই দশা বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনেরও।
• শোভাবাজার: দু’টি প্রবেশপথের এক দিকে পড়ে বিকল স্ক্যানার। নিরাপত্তারক্ষীরা অলস মেজাজে হঠাৎ খেয়ালে দু’-এক জনকে ডেকে ব্যাগ পরীক্ষা করছেন। আর একটি গেটের সামনে মেটাল ডিটেক্টর দরজা থাকলেও তা আদৌ কাজ করছে কি না, বোঝা যাচ্ছে না! সাধারণত ধাতব উপস্থিতিতে দরজার ফ্রেমে শব্দ সঙ্কেত শোনা যায়। দেখা গেল, যাত্রীরা হেঁটে যাওয়ার সময়ে আলো জ্বললেও, টুঁ শব্দটি হচ্ছে না।
• সেন্ট্রাল: এখানেও খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে স্ক্যানার। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের দিকে একটি গেটের সামনে রয়েছে মেটাল ডিটেক্টর দরজা। কিন্তু যাত্রীদের লাইন করিয়ে সেই দরজা পার করানোর ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ যাত্রীই ‘ডোর ফ্রেম’-এর পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছেন। যাত্রী এবং কর্তব্যরত আরপিএফ, দু’তরফেই দায়সারা হাবভাব।
• চাঁদনি চক: এই স্টেশনে ঢোকার মোট চারটি গেট। এর মধ্যে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের দিকের গেটে ব্যাগ পরীক্ষার নামগন্ধ নেই। অন্য গেটে কারও কারও ব্যাগ পরীক্ষা
হচ্ছে। বিকল স্ক্যানারটি সযত্নে প্লাস্টিকে মোড়া।
• পার্ক স্ট্রিট: ময়লা প্লাস্টিকে ঢাকা স্ক্যানারটি। ব্যস্ততম এই স্টেশনে মেটাল ডিটেক্টর গেট থাকলেও তার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার কড়াকড়ি নেই। ডোরফ্রেম পেরিয়ে বা পাশ দিয়ে— যেখান দিয়ে খুশি যাতায়াত করছেন যাত্রীরা।
• কালীঘাট: স্ক্যানার বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে প্রায় বছর খানেক। ব্যাগ পরীক্ষার জন্য গেটের মুখে যাঁরা বসে থাকেন, তাঁদের ভিড়ে ঠাসা অফিস টাইমেও নিজেদের মধ্যে গল্পগুজবে মত্ত দেখা যায়। কোনও কোনও যাত্রী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যাগ দেখাতে গেলে দু’এক জনের ব্যাগ পরীক্ষা হয়। বাকিরা চলে যান নির্বিঘ্নে।
• টালিগঞ্জ: তিন দিক দিয়ে ঢোকা-বেরোনো যায়। একটিমাত্র গেটে স্ক্যানার। সেটিও খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে এক মাসের উপর। যাঁরা হাতে ডিটেক্টর নিয়ে বসে থাকেন, তাঁরা নিজেদের মর্জিমাফিক কোনও কোনও যাত্রীকে বেছে নেন পরীক্ষার জন্য। হ্যান্ড স্ক্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মী কোনও রকমে ঝোলা ব্যাগের উপর দিয়ে সেটা বুলিয়ে নিচ্ছেন। একই অবস্থা রবীন্দ্র সদন, যতীন দাস পার্ক, রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশনেও।
• শহিদ ক্ষুদিরাম: স্ক্যানার বেহাল অন্তত মাস ছয়েক। হাতে মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে জনা দুই নিরাপত্তারক্ষী বসে থাকলেও বেশির ভাগ সময়ে তাঁদের চেকিংয়ে মন নেই। হঠাৎ কোনও যাত্রী স্বেচ্ছায় ব্যাগ পরীক্ষা করাতে গেলে খোশগল্প ছেড়ে হেলতে-দুলতে দায় সারছেন। ঢিলেঢালা দশা, নেতাজি, গীতাঞ্জলি বা কবি সুভাষ স্টেশনেও।
কী বলছেন কর্তৃপক্ষ?
মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রের কথায়, ‘‘২৫টি স্ক্যানারের মধ্যে ১২টি খারাপ। সেগুলি সারাতে কোম্পানির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। শীঘ্রই শুরু হবে মেরামতি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সাড়ে ছ’লক্ষ নিত্যযাত্রীর সকলকে ধরে ধরে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তবু আরপিএফ যথাসাধ্য করে। এ ছাড়া, ক্লোজড সার্কিট টিভি ও অন্য প্রযুক্তির সাহায্যে নজরদারি চালানো হয়।’’
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলেন, ‘‘কিছু কিছু স্টেশনে স্ক্যানার খারাপ আছে বলে রিপোর্ট পেয়েছি। দ্রুত সেগুলি সারাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
ছবি: দীক্ষা ভুঁইয়া, দেবস্মিতা ভট্টাচার্য এবং অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়।