রাখাল মুখার্জি রোডের এই বহুতলের ফ্ল্যাট থেকেই উদ্ধার হয় ছায়াদেবীর দেহ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
মাস পাঁচেক আগে ছেলের পচাগলা দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। শনিবার সকালে সেই একই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হল মায়ের পচাগলা দেহ। ঘটনাটি সরশুনা থানা এলাকার রাখাল মুখার্জি রোডের।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন তাদের কাছে লালবাজার কন্ট্রোল থেকে ফোন করে বলা হয় রাখাল মুখার্জি রোডের একটি বহুতলের তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে পচা গন্ধ বেরোচ্ছে। খবর পেয়েই ওই বহুতলে পৌঁছয় সরশুনা থানার পুলিশ। সেখানে গিয়ে পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশকর্মীরা জানতে পারেন তিনতলা থেকে গন্ধটি আসছে।
এর পরেই তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে পুলিশ বারবার দরজা ধাক্কা দিলে এক তরুণী দরজা খুলে দেন। আর তখনই পুলিশ এবং পড়শিদের নাকে পচা গন্ধ আসে। জিজ্ঞাসা করলে ওই তরুণী পুলিশকে ভিতরে নিয়ে যান। সেখানে ঢুকে পুলিশ দেখে একটি ঘরের বিছানায় এক বৃদ্ধার দেহ পড়ে রয়েছে। দেহটিতে পচন ধরেছে। পাশের ঘরের বিছানায় তখন শুয়ে এক বৃদ্ধ। অসুস্থতার কারণে প্রায় শয্যাশায়ী তিনি। কথাও প্রায় বলছেন না। এর পরেই পড়শিদের থেকে পুলিশ জানতে পারে মৃত বৃদ্ধার নাম ছায়া চট্টোপাধ্যায় (৮২)। ওই অশক্ত বৃদ্ধ তাঁর স্বামী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এক সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ায় চাকরি করতেন। সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বেচ্ছাবসর নেন এবং সেই সময়ে বিপুল অঙ্কের টাকাও পেয়েছিলেন তিনি। তা থেকেই তাঁদের সংসারের খরচ চলত।
স্থানীয় সূত্রের খবর, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ছেলে দেবাশিসের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই ওই দম্পতি আরও অসুস্থ। তাঁদের একমাত্র মেয়ে নীলাঞ্জনা মানসিক ভাবে অসুস্থ। অথচ পরিবারে রান্নাবান্না এবং বাজার করার কোনও লোক ছিল না। এক সময়ে হোম ডেলিভারি থেকে খাবার আসত। সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুতের বিল জমা কে দেবেন, এই সমস্যাতেই টাকা থাকা সত্ত্বেও কয়েক মাস জমা পড়েনি বিদ্যুতের বিল। আর তাই মাস কয়েক আগে সংযোগ কেটে দিয়ে যায় সিইএসসি। এর পর থেকে অন্ধকারেই দিন কাটাত চট্টোপাধ্যায় পরিবার। পড়শিদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, এ দিন সকালে কয়েক জন নীলাঞ্জনাকে বেশ কয়েক বার নীচে নেমে অস্থির ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘মা অসুস্থ। কিছু বলছে না। গা খুব ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। আমি ওষুধ দিয়েছি।’’ এই সব শোনার পরে এবং পচা গন্ধ নাকে আসতেই পড়শিদের বিষয়টি ভাল ঠেকেনি। এক পড়শিই ১০০ ডায়াল করে লালবাজার কন্ট্রোল রুমে জানান।
পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে। পুলিশের অনুমান, অপুষ্টি এবং বার্ধক্যজনিত কারণে ছায়াদেবীর মৃত্যু হয়েছে দিন তিনেক আগেই। তবে এই ঘটনাকে পুলিশ দেহ আগলে রাখার ঘটনা বলতে নারাজ। পুলিশের দাবি, রবীন্দ্রনাথবাবু এতই অসুস্থ যে কথা বলতে বা উঠে বসতে পারেন না। আর মা যে মারা গিয়েছেন, সেই বোধও নেই তাঁদের একমাত্র মেয়ের। ফলে ছায়াদেবীর মৃত্যুসংবাদ ওই ফ্ল্যাটের বাইরে কেউ জানতেই পারেননি। পড়শিদের এখন অবশ্য চিন্তা রবীন্দ্রনাথবাবু এবং নীলাঞ্জনার দেখভাল কে করবে তা নিয়ে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।